টিভির দিক থেকে চোখ সরিয়ে পাশে তাকাতেই মেয়েটি দেখে, ছেলেটি খাবার রেখে হাত গুটিয়ে বসে আছে। টিভি দেখছে না, খাবার দিকেও চোখ না, তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে। ছেলেটির চোখের দিকে তাকিয়েই মেয়েটি বুঝতে পারে কি চাচ্ছে ও। আহ্লাদ! - মনে মনে ভাবে মেয়েটি। এই এক ঢং শুরু হয়েছে কিছুদিন যাবৎ।
তবু যেন বুঝতে পারেনি এমন ভাব করে মেয়েটি বলে, 'কি? খাচ্ছিস না কেন?'
ছেলেটি উত্তর দেয় না। ভ্রূ কুঁচকে তাকায় মেয়েটির দিকে। চাহনির শাব্দিক অর্থ দাঁড়ায় এরকম - 'যেন কিছুই বুঝতে পারছিস না?'
মেয়েটি আরেক লোকমা ভাত নিজের মুখে তুলে ছেলেটিকে তাড়া দেয়, ' খা, খা।'
ছেলেটি এবার মেয়েটির দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকায়। তার অর্থ - 'না আমি এখন খাব না, অভিমান করেছি।'
মেয়েটি ছেলেটির থালার দিকে তাকায়। চার ভাগের এক ভাগ খাওয়া হয়েছে কেবল। বাকি খাবার একদিকে জড়ো করে কিছুটা জায়গা খালি রাখা। মেয়েটি চারদিকে তাকয়ে নিচু গলায় বলে,'ক্যান্টিনে অনেক লোক তো রে। জুনিয়ররা বসে আছে।'
ছেলেটি মুখ ঘুরিয়ে মেয়েটির দিকে তাকায়। চোখের ভাষা - 'তো?'
মেয়েটি আবারো চেষ্টা করে, 'আজ থাক - কালকে?'
ছেলেটি ডানে-বাঁয়ে মাথা নাড়ায়। মেয়েটির চেহারায় বিরক্তি প্রকাশ পায় - 'মর তুই।' ছেলেটি কিছু বলে না। জানে, মেয়েটির এ বিরক্তি কতখানি কৃত্রিম।
মেয়েটি এবার নিজের থালার দিকে মনোযোগ দেয়। একটু ভাত, ডাল, আলুভর্তা আর সব্জি নিয়ে লোকমা বানায়। এদিক-সেদিক চোখ ঘুরিয়ে কেউ দেখছে কিনা লক্ষ্য করে টুপ করে লোকমাটা রেখে দেয় ছেলেটির থালার খালি অংশটুকুতে। গলায় কৃত্রিম ক্রোধ টেনে এনে বলে, 'এইবার খা, শয়তান।'
ছেলেটির মুখে এবার হাসি ফোটে। লোকমাটা হাতে নিয়ে সে মুখে চালান করে। মেয়েটি বিড় বিড় করে কি যেন বলতে থাকে। ছেলেটি সেদিকে কান না দিয়ে থালার বাকি খাবারটুকু সাবাড় করায় মনোযোগ দেয়।