সাফাদ স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দারিয়ে আছে অনেকক্ষণ ধরে। গত তিন দিন ধরেই এই রকম দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। সাফাদ প্রতিদিন তার মায়ের জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা তার পর রাত নামে। কিন্তু মা আসে না। স্কুলের দপ্তরী তাঁকে আবার হস্টেলের ভিতর নিয়ে যায়। ফাঁকা বিছানা গুলো দেখে সাফাদের বুক হুঃ হুঃ করতে থাকে। যতটা না হতাশায় তার থেকে বেশি ভয়ে। সে ভাবতে থাকে তাঁর মা আর তাঁকে নিতে আসবে না।
আজো যখন একের পর এক গাড়ি স্কুলের গেট পাশকাটিয়ে চলে যাচ্ছে তখন সাফাদের মনে হোল আজো মা আসবে না। তাঁর ছোট্ট মনে অভিমানের পাহাড় জমতে থাকে। সে আর মায়ের কাছে যাবে না , কোন দিন না। এসব ভাবতে ভাবতে সাফাদের চোখ ঝাপ্সা হয়ে যায়। মা কে না দেখে আর কতো দিন থাকতে হবে সে জানে না। কিন্তু এটা প্রায় অসম্ভব যে মা এসে তাঁকে নিয়ে যেতে চাইবে আর সে যাবে না।
- কি বাবাই কাঁদছ কেন?
সাফাদের বুক আনন্দে ভরে যায়। মা। হ্যাঁ মাই তো। সে মাথা তুলে তাকায়। মায়ের শ্যামলা মুখটা দেখে সাফাদের ইচ্ছা করছিল আনন্দে একটা লাফ দিতে, কিন্তু তা না করে সে বোকার মতো মা কে জড়িয়ে ধরে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে থাকে।
- ছিঃ বাবাই কাঁদে না। এতো বড় এক ছেলে মাকে জড়িয়ে কাঁদে বুঝি?
সাফাদ মা কে না ছেড়েই কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,
- এতো দিন তুমি আসনি কেন আম্মু? জানো আমি প্রতিদিন এখানে তোমার জন্য দাড়িয়ে থাকি, একদম রাত হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু তুমি আসোনা। আমার বুঝি কষ্ট হয় না?
নিবেদিতার চোখ সিক্ত। কিন্তু মুখে একটা হাসি টেনে বলে
- আমি যদি প্রথম দিনই চলে আসতাম তাহলে কি জানতে পারতাম যে আমার বাবাই আমাকে এতো ভালোবাসে ?
- যাও আম্মু তোমার সাথে কাট্টি। আমি আর তোমার সাথে কথা বলবো না।
সাফাদ মা কে জড়িয়ে ধরেই অভিমান করে বলে উঠে। নিবেদিতা হেসে দেয়। বড্ড আদুরে হয়েছে ছেলেটা। না আর একে দূরে রাখা যাবে না। যে যাই বলুক এখন নিবেদিতা তার ছেলেকে নিজের কাছেই রাখবে। সব সময়ের জন্য। এই ছেলেই তো এখন নিবেদিতার সব।
নিবেদিতা ছেলের মাথার চুল এলোমেলো করে এক পলক দেখে নেয়। নিবেদিতার মতো চাপা গায়ের রঙ না। বরং বেশ উজ্জ্বল। পাতলা অভিমানি ঠোঁট, বড় বড় চোখে দীর্ঘ পল্লব। থুতনিতে একটু ভাঁজ। নিবেদিতার থেকে আবিরের গড়ন বেশি চোখে পরে। কিন্তু কি নিষ্পাপ দেখলেই নিবেদিতার বুকটা কেমন কেমন করে উঠে। সাফাদের কপালে একটা চুমু দেয় নিবেদিতা।
- বাবাই তুমি আমার সাথে থাকবে?
আনন্দে সাফাদের ইচ্ছা করছিল একটা লাফ দিতে। কিন্তু নিজেকে সামলে নেয় সে।
- সত্যি আম্মু? আমি তোমার সাথে থাকবো ? কিন্তু তোমার অফিসের ক্ষতি হবে না?
- সে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি আমার সাথে থাকবে কি না বল?
- থাকবো না মানে? এক’শ বার থাকবো, হাজার বার থাকবো। তুমি জানো আমার এখানে একা একা একটুও ভালো লাগে না। ইশ! আমি তোমার সাথে থাকব! কি মজা হবে তাই না আম্মু?
- মজা তো হবেই। তার আগে চলো কিছু খেয়ে নিই। খুব ক্ষুধা লেগেছে। তারপর শহরের একটা হোটেলে আজকে রাত টা থাকবো আর তার পরে তোমার প্রিন্সিপালের থেকে পারমিশান নিয়ে সোজা আম্মুর সাথে চলে যাবো। কেমন?
- ওয়াও আম্মু। সত্যি আমরা এক সাথে থাকবো ? কি মজা কি মজা!
নিবেদিতা ছেলের মুখে এই সরল উচ্ছ্বাস দেখে খুব খুশি হয়। কতো অল্প চাওয়া সাদাফের। কিন্তু এতোদিন তাও পূরণ করতে পারছিল না। এখন একটু শান্তি লাগছে নিবেদিতার।