বাইরে একটা কাক কা কা করে ডাকছে। এই চরম বৃষ্টিতে যেখানে ঢাকা শহর এখন প্রায় নদী সেখানে এই কাক টা কেন তার বাসা ছেরে এখন গাছের ডালে বসে শোরগোল করছে নিবেদিতার দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু সকল অহেতুক কৌতুহল কে সে অসম্ভব ভাবে চাপা দিতে পারে। জানালার পর্দাটা টেনে নিবেদিতা বাইরের জগতটা থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলে। বিছানায় চখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। কিছু ভালো লাগছে না তাঁর। কখনোই লাগে না। জীবনের থেকে কিছু পায়নি সে।
যখন অনেক ছোট তখন মা কে হারিয়েছে। বাবা আবার বিয়ে করলে আর বাবার সাথে থাকা হয়নি। নিজে নিজে টিউশন করে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে এখন চাকরি করছে। সেই সময় টা খুব ভয়াবহ ছিল। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একটা মেয়ে কখনো একা থাকতে পারে এটা ভাবা খুব কষ্টের । শুরুর দিকে যখন মামার বাসায় থাকতো তখন নিবেদিতা বুঝতে পারে একটা মেয়ের একা একা থাকাটা কতো ঝক্কির। মামা থেকে শুরু করে ছোট মামাতো বোনটাও তাকে দিয়ে বাসার ছোট থেকে ছোট কজ করিয়ে নিতো। মামী রোজ কোন না কোন অসুখে ভুগত। তাই বাসার সব কাজের ভার নিবেদিতার কাঁধে ছিল। তার সকল মামাতো ভাই আর বোনেরা শহরের সব থেকে ভালো স্কুলে যেত কিন্তু নিবেদিতা মিউনিসিপাল স্কুলে পড়তো। ছোট্ট নিবেদিতার কাজে কোন ভুল হলে সবাই তাকে বকাঝকা করতো এমন কি মারও দিতো। যখন এস.এস.সি. পরীক্ষায় খুব ভাল একটা রেজাল্ট করে নিবেদিতা তখনি মামার বাড়ির পাট চুকিয়ে ঢাকায় চলে আসে। এখানে একটা কলেজে ভর্তি হয়ে আশেপাশে টিউশনি করে নিজের জীবনে এতদূর নিবেদিতা। কিন্তু ততদিনে নিবেদিতা যেন একটা যান্ত্রিকতার মাঝে প্রবেশ করেছে। সব কিছুতেই এক চরম অনাগ্রহ, হতাশা, অবিশ্বাস আর ভালো না লাগা। নিবেদিতা হাসে, কথা বলে কিন্তু তার মাঝেও সেই নিবেদিতা নেই।
এসবের পেছনে শুধু আবির। আবির নিবেদিতার মন কে নিবেদিতার উচ্ছ্বাসকে সেই হাস্যজ্বল নিবেদিতাকে মেরে ফেলেছে।
নিবেদিতা বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে জানালার কাছে দাড়ায়। বাইরের ঝুম বৃষ্টি যেন নিবেদিতার সকল আবেগ মুহূর্তে সতেজ করে দেয়। আবির আবার তাঁর সৃতিতে সতেজ। কতদিন আগের কথা কিন্তু নিবেদিতার মনে হচ্ছে এই তো সে দিনের কথা। যে দিন সে জানতে পেরেছিল আবিরের সত্যতা। না কিছু বলেনি সে, চুপ করে শুনেছিল শুধু।
আবিরের সাথে দেখা হওয়ার প্রথম দিনটা নিবেদিতা কখনো ভুলবে না। ভার্সিটির ক্লাসে বসে আবির সিগারেট টানছিল। তা দেখে নিবেদিতা চটে যায়।
- এই যে ভাই আপনি এখানে কি করছেন?
- দেখছ না খুকি আমি ধুম্রপান করি?
আবির এর জবাবে সবাই হঃ হঃ করে হেসে উঠে। নিবেদিতার রাগে গা রি রি করছিল। কিন্তু সে হেসে আবিরের কাছে গিয়ে এক টানে ঠোঁট থেকে সিগারেটটা কেরে নিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলে দেয়। আবির এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। হতচকিত হয়ে নিবেদিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। এবার আগের থেকেও বেশি হাসির রল পরে। এবার আবির রাগে কাঁপতে থাকে।
- এটা কি হোল ?
- দেখেননি দাদু আমি আপনাকে ধুম্রপান থেকে বিরত করলাম। সে থেঙ্কস।
নিবেদিতার পাল্টা আক্রমণ মেনে নিতে পারেনি আবির। আর ভাবতে চায়না নিবেদিতা ঐ ভণ্ড সম্পর্কে। চোখের কণে জমা পানিটুকু মুছে মুঠোফোনটা হাতে তুলে নেয়। অফিসের কিছু কাজ সেরে ফেললে হয়তো এই সব চিন্তা থেকে মুক্তি পাবে সে।