পাঠকের সুবিধার্থে গল্পের প্রধান যে চরিত্র তাঁর কিছুটা বর্ণনা দেয়া যাক। নাম রাশেদ, বয়স আঠার বছর, উচ্চতা পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি, গাত্র বর্ণ শ্যামলা। প্রচুর ধূমপান করার দরুন ঠোঁট কালচে হয়ে গিয়েছে। চখ ইটের ভাটার মতো লাল, মাথার সামনের দিকের চুল কিছুটা পাতলা হয়ে উঠেগিয়েছে, নাকের নিচে ফিনফিনে গফ। কাজ তেমন কিছু করে না। মেট্রিক সেকেন্ড ডিভিশনে পাশ করে এখন কলেজে পড়াশুনা করবে বলে ভর্তি হয়েছে কিন্তু এক বছরে একটিও ক্লাসে গিয়ে বসেছে কি না সে নিজেও জানে না। সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর হাতে বিড়ি নিয়ে পাড়ার মেয়েদের পিছনে ঘুরে বেড়ানই এখন রাশেদ দায়িত্বের পর্যায়ে নিয়ে নিয়েছে। যেহেতু মায়ের এক মাত্র আদরের ছেলে তাই সে শাসনের উরধে। বলে রাখা ভালো রাশেদের বাবা আর একটা বিয়ে করার জন্য রাশেদ ও তাঁর মা আলাদা থাকে।
পৌষের সন্ধ্যা। গ্রামের এই দিকটায় এখন হাড় কাঁপানো শিত হয়। পানি কনকনে ঠাণ্ডা। ঘরের মাঝে রাশেদের মা গোবর দিয়ে বানানো ঘুঁটের আগুন করে রাখে ঘর গরম রাখার জন্য। তাঁর পরেও ঠাণ্ডায় রাশেদ জমে জেতে থাকে। রাশেদ গলা চরিয়ে কাজের ছেলেটাকে ডাকে
- নূরা এই নূরা!
- কি ভাই? ডাকো নাকি আমাক?
নূরা দৌরে এসে জবাব দেয়।
- হুম ডাকছি। শুন তোকে একটা কাগজ দিবো তুই এটা রহমান চাচার মেয়ে ফরিদার হাতে দিবি। পারবি না?
- হ, পারবই তো। দেও চিডি ডা।
- এখন না। যা রাতে আসিস।
- আচ্ছা ভাই, আমি তাইলে এখন গেইলাম।
নূরা চলে গেলে রাশেদ খাতার একটা পাতা ছিড়ে চিঠি লিখতে বসে। ফরিদা কে এই চিঠি লিখার পেছনে যদিও তেমন কোন উৎসাহ ছিল না কিন্তু যে কোন মেয়েকে উত্যক্ত করার কোন কিছুই বাকি রাখে না। ফরিদা যদিও তাঁর আপন চাচাতো বোন, তাঁর বাসার সাথে লাগোয়া বাড়িটাই ফরিদাদের। তার পরেও রাশেদ ফরিদার সাথে এই দুষ্টামি টা করতে লোভ সামলাতে পারলো না।
দোয়াত আর কলম নিয়ে সে লিখা শুরু করল
২২,১২,১৯৮০
প্রিয় ফরিদা,
তোমাকে এ ভাবে কখনো দেখবো বা চিঠি লিখবো কখনো ভাবিনি। তোমাকে অন্য কোন দৃষ্টিতে দেখতেও চাইনি। কিন্তু কে জানতো সদ্য চোদ্দতে পরে তুমি এতো রুপের আলো ছড়াবে। তোমার চোখ ধাঁধানো রূপে আমার প্রায় অন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। যেখানে তাকাই শুধু তোমার রূপের আলো দেখি।
তোমাকে এক মুহুত পাওয়ার জন্য আমি আমার জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারি। জানি তোমাকে অনেকেই এ রকম প্রস্তাব দিবে কিন্তু কেউ আমার মতো তোমাকে ভালবাসবে না। তুমি যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে স্কুলে যাও তখন আমার খুব ইচ্ছা করে তোমাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে। কিন্তু তোমার অনুমতি ছাড়া আমি কখনই তা করতে পারবো না।
যাই হোক, আসল কথায় আসি, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি আর তোমাকে বিয়ে করতে চাই। যদি রাজি থাকো তাহলে পুকুর পাড়ে এসে বসে থাকবে কাল দুপুরে।
ইতি
তোমার রাশেদ দা
রাশেদ চিঠিটা লিখে ভাঁজ করতে করতে এক অসুস্থ আনন্দ অনুভব করে। একটা তৃপ্তির হাসি হাসে। কেন যেন এরকম কোন মেয়েকে চিঠি লিখে তাঁর মাঝে একটা আনন্দ অনুভূত হয়। রাশেদ খিক খিক করে হাসতে হাসতে নূরা কে ডেকে চিঠিটা দেয় ফরিফা কে দেয়ার জন্য। নূরা বাধ্য ভৃত্যের মতো চিঠি হাতে বেরিয়ে যায়। আজ পর্যন্ত নূরা কোন ভুল করেনি। আজও করবে না রাশেদ তা জানে। কিন্তু ফরিদা কি ভাববে এই চিঠি পেয়ে রাশেদ তা ভেবেই পুলক অনুভব করছে। সে আর এক দফা খিক খিক করে হেসে কাঁথার স্তূপের ভেতোর সেঁধিয়ে নিজেকে গরম করতে থাকে।