অবশেষে জয়-সুমনার ঝগড়া মিটল। অনেক্ষণ বোঝানোর পর দুজনই শান্ত হয়েছে। দুজনের মুখেই লাজুক হাসিটা দেখা যাচ্ছে। যাক, আমার দায়িত্ব শেষ ভেবে এবার ফিরলাম বাসায়। অবশ্য ফেরার আগে জয় একটু ভদ্রতা করে থাকতে বলেছিল, আমি কি আর তাই থাকি! সুমনাও বলতে চেয়েছিল কিছু হয়তো। আমি শুনিনি, আমি কখনো কিছু শুনিনা।
বাসায় ফিরে আমার রুমের টেবিলের নিচে গিয়ে চুপচাপ বসলাম, এটা আমার প্রিয় জায়গা। মন খারাপ থাকলে কেউ কবিতা লিখে, কেউ গিটার বাজায়, কেউ বা জিমে শক্ত কোন ব্যয়াম নিয়ে ব্যস্ত হতে চায়। আমি কিছুই পারিনা, তাই এখানে বসি, মন খারাপটাকে উপভোগ করি, ছোটবেলা থেকেই। সুমনাও মাঝে মাঝে এসে বসে এখানে, আমার পাশে। সুমনা আমার ছোটবেলার বন্ধু, একই কোয়ার্টার্সে থাকতাম আমরা। আর জয় কলেজের। প্রথম যেদিন জয় আমাকে জানিয়েছিল সুমনাকে পছন্দ করার কথা, অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। বুকের ভেতর থেকে মস্ত কিছু একটা হারানোর তোলপাড় শুনেছিলাম, বলিনি কিছু, বলা হয়নি। আমি কখনো কিছু বলি না।
আমিই সুমনাকে গিয়ে বলেছিলাম। সুমনা হতবিহ্বল চোখে তাকিয়েছিল। থমথমে মুখে বলেছিল, ''মারুফ, তুমি খুব বেশি ভালো একটা ছেলে। এত ভালো হওয়া ভালো না, একটুও ভালো না!' তারপর অনেক চেষ্টা-চরিত করে রিলেশানটাকে দাড় করিয়ে দিয়েছি আমিই। তবে সেই প্রথমদিন সুমনার চোখ ছলছল করছিল কিনা, আমি দেখিনি। আমি কখনো কিছু দেখি না।
যদি সেদিন চোখে জল এসেও থাকে আজ নিশ্চয়ই চোখের জল শুকিয়ে সুখের বাষ্প হয়ে গেছে, আজ ওরা লাজুক হাসে। নাকি অন্যকিছু, আমি জানিনা। আমি কখনো কিছু জানিনা।
এখনো সুমনা মন খারাপ হলে এসে আমার পাশে বসে থাকে, এই টেবিলের নিচেই, আমার বা'পাশে। কেউ তখন কথা বলিনা আমরা। মাঝে মাঝে অবশ্য হঠাত মৃদুস্বরে মারুফ বলে ডেকে উঠে, আমি 'হু' বলে জবাব দিই, তারপর আর কোন কথা নেই। সুমনা কি কিছু বলতে চায়, আমি বুঝি না। আমি কখনো কিছু বুঝি না।
আমি কখনো কিছু শুনি না।
আমি কখনো কিছু বলি না।
আমি কখনো কিছু দেখি না।
আমি কখনো কিছু জানি না।
আমি কখনো কিছু বুঝি না।
আমি শুধু অপেক্ষা করি, সুমনা অথবা মৃত্যুর জন্য।
আমি শুধু বেঁচে থাকি, সুমনা অথবা মৃত্যুর জন্য। ।
লেখাটি পূর্বে ফেবুতে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে।
লিংকঃ http://www.fb.com/mrf.dio