প্রতিবার যখন ঈদে বাড়ী যাই, খুব খুব করে দাদীর কথা মনে পড়ে। গ্রামে যাওয়াটাই ছিল যেন দাদীর জন্য। আমি আর আমার চাচাতো ভাই জয় যেতাম। দাদী ঊঠানে বসে থাকতেন। কখন আমরা আসবো। বেশির ভাগ সময়েই আব্বা চাচা একসাথেই আসতেন। আমরা তো অতকিছু বুঝতাম না। ট্রেন থেকেই গ্রামের আমেজ শুরু হত। দাদী বাড়িতে পৌছে আব্বা আর চাচার তো ভাড়া মিটাতে সময় লাগতো। আমি আর জয় সরাসরি ঘরের ভিতরে। দাদীকে সালাম দেবার পর-সরাসরি চালের ঘরে। সেখানে দাদী যত্ন করে আমাদের গতবছরে ব্যাট বল,স্টাম্প রেখে দিয়েছেন। মানু, রেজা কতবার আসবে যে ওদের ব্যাট লাগবে-দাদী দিবেন না। জার্নি তো তখন এত গায়ে লাগত না-তাই সাথে সাথেই মাঠে দৌড়। আজকেই শো দিতে হবে যে আমরা আসছি, নাহলে কাল থেকে প্লেয়ার পাব কোথায়।
যে দাদী বাড়িতে অন্য সময় হারিকেন জ্বলত কিনা জানিনা। কিন্তু যখন আমরা থাকতাম-শীতের সময় উঠানে খড় দিয়ে আগুন জ্বালানো হত-আমরা চারপাশ দিয়ে খেলতাম। মাঝে মাঝে দেখা যেত অনেক দূরে খেলতে গেছি-কে জানি খবর দিল মাস্টার নী আইতেছে-সাথে সাথে খেলা অফ, দেখা যাবে দাদী আমাদের দুই ভাইয়ের জন্য দুধের মালাই নিয়ে এসেছেন। এখন যখন গ্রামে যাই-মনে হয় কার জন্য যাব। এমনি এমনি যাই।নানী আছে, মামারা আছে। ছোট মামার হাসি মুখটা দেখা হবে।
দাদী সবসময় আমরা আসার আগেই টিনভর্তি খইয়ের নাড়ু বানিয়ে রাখতেন। আমি এসে টিভি দেখতাম আর খইয়ের টিন কোলে বসিয়ে খেতাম। এখন আর কারো খইয়ে সেই স্বাদ লাগে না। ছোট ছিলাম তো সেই সময়ে দাদীর মনের অবস্থা বুঝার ক্ষমতা আমার ছিল না। দেখা যেত যেদিন আমরা যাব, আব্বা চাচা যাবে, তার আগে দাদী জ্বর বাধাবেন। বলবেন আরো দুইটা দিন থাক। আমরা তো খুব খুশি। কিন্তু আব্বা চাচার তো অফিস। কেমনে থাকবেন। দাদীর চোখের জ্বল দেখার ক্ষমতা আমার ছিল না।
আজ যখন গ্রামে যাচ্ছি তখন দাদীকে খুব মিস করছি। আব্বা যখন হঠাত করে বলে চাকরি শেষ করে গ্রামে যাব, আবার চাষ বাস করব, মা বলে গ্রামে এক বাড়ি তার সামনে একটা পেয়ারা গাছ নিয়ে থাকবো-কী করবো বুঝে উঠি না।