বিষ কথাটা শুনলেই আমাদের মাথার মধ্যে মৃত্যুর কথা চলে আসে। হায় হায় কে জানি মারা গেল। কিন্তু যখন বিষময় বলা হয়, তখন এক অসহায় মানুষের জন্য করুনা হবে, যে কিনা নিজের জীবনের উপর বীতশ্রদ্ধ, জীবনের সব অর্জন, পরিশ্রম যেন আজ মাটিতে এসে মিশেছে। পায়ের তলার মাটি তার আজ সরে গিয়েছে। আসলে তার কিছুই নয়। বিষবিজ্ঞানী প্যারাসেলসিয়াস(তাকে জনকও বলা হয়ে থাকে) বলেছেন, প্রতিটি বস্তুই পরিমানভেদে আপনার কাছে বিষ অথবা ঔষুধ হিসেবে পরিগনিত হতে পারে। এমনকি পানিও। কী অবাক হলেন। সাড়ে সাত লিটার পানি একেবারে খেয়ে দেখুন না। কিছু হলে কিন্তু আমি দায়ী নই।
কিন্তু এই বিষ খেয়েই কিন্তু আপনি বিখ্যাত হতে পারেন। যেমন আমাদের সক্রেটিস। তাকে যতজন মানুষ তার দর্শন তত্ত্বের জন্য জানে, তার চেয়ে বেশি চিনে তার হেমলক বিষে মৃত্যুর জন্য। অনেকটা চে স্টাইল। উলটাপালটা কিছু করলেই উনি বিপ্লবী,উনি চে এর অনুসারী। যাই হোক সক্রেটিস এর মৃত্যু যাত্রা, তার অবস্থা নিয়ে যত নাটক হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। একটা জিনিস অনেকে লক্ষ্য করে থাকবেন, তিনি কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কথা বলে গিয়েছেন-সিনেমায় কিন্তু বিষ খেলে দেখবেন কেমন গলা চিপে ধরে।
বাবা!! সিনেমার বিষ আর বাস্তবের বিষ কিন্তু এক নয়। সক্রেটিস যে হেমলকের রস পান করেছিলেন তাতে ছিল নানা এল্কালয়েডের মিশ্রন। যার মুল উপাদান ছিল conine. উইকিতে খুজলেই পাবেন, ইহা কী জিনিস। ইহা খেয়ে তার যা হয়েছিল তার সুন্দর বর্ননা দিয়েছেন তার শিষ্য প্লেটো, তার পাশেই বসে ছিলেন কিনা।প্রথমে আপনি পায়ের দিকে শিথিলতা অনুভব করবেন এবং আস্তে আস্তে তা উপরে উঠতে থাকবে। অবশেষে তা যখন আপনার হৃদযন্ত্র এবং ফুসফুস কে আক্রান্ত করবে তখন ই আপনি মারা যাবেন। অথচ ঠিক তার আগমুহুর্ত পর্যন্ত আপনার মস্তিষ্ক সুস্থ মানুষের মত সচল থাকবে, কেননা conine আপনার মস্তিষ্কের পর্দা ভেদ করতে পারে না। আর তাই ইচ্ছাকৃত হোক না অনিচ্ছাকৃত হোক সক্রেটিস আমাদের মৃত্যুর শেষ মুহুর্তেও তার বানী দিয়ে যেতে পেরেছেন।
দ্বিতীয় যে বিষটির কথা বলব, তাহা হল মারাত্মক গ্যাস। যার নাম স্যারিন(sarine). আবিস্কার করেছেন স্বয়ং বস জার্মানীর বিজ্ঞানীরা ১৯৩৬ সালে জেরহার্ড শ্রোডার। বিখ্যাত গ্যাস চেম্বারের বিখ্যাত বিষ। এটি আপনার স্নায়ুতন্ত্রের এসিটাইল কোলিন এর পরিমান বাড়িয়ে দেয়, এসিটাইল কোলিন এস্টারেজ কে দুর্বল করে দিয়ে। যার ফলশ্রুতিতে আপনি অতি শীঘ্রই প্যারালাইজ হয়ে মারা যেতে পারেন। সর্বশেষ এর ব্যবহার হয়-ইরাকি সাদ্দাম যখন কুর্দিদের দমন করে তখন। কথিত আছে জার্মানরা সে সময়ে প্রায় ১০টনের মত এই গ্যাস মজুত রেখেছিল। সে চেষ্টা হায় তব বৃথা।
এবার আসি আসল প্রসঙ্গে। জার্মানী দলের ৭ জন ফ্লুতে আক্রান্ত, বাকিরা দুর্বল ফিটনেসহীন। আমার বিশ্বস্ত ধারনা জার্মানদের খাবারে নিশ্চয়ই কোন বিষ মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই আমার দাবি আজ যদি কোন ভাবে জার্মানি হারে, খাদ্যে বিষের দ্রুত তদন্ত করে জার্মানকে সেমিফাইনালে পাঠানো হোক।