somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইয়াবার সর্বনাশা বিস্তার

১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে নীরব ঘাতক ইয়াবা। টেকনাফ থেকে শুরু করে দেশের অপর প্রান্ত তেঁতুলিয়া পর্যন্ত বড় বড় শহর ছাড়িয়ে গ্রামগঞ্জের অজোপাড়াগাঁয়ে হাত বাড়ালেই মিলছে কেজি ড্রাগ ইয়াবা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুণী শুধু নয়, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ সমাজের প্রায় সব শ্রেণীর মানুষই এখন এই নেশায় আসক্ত। এদের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। ইয়াবার ভয়াবহ ধোঁয়া এরকম আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। ভয়ঙ্কর ইয়াবার সর্বনাশা থাবায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে অসংখ্য পরিবারের সন্তানদের জীবন। এ অবস্থায় আগামীতে দেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্রগুলো জানায়, ইয়াবার বিস্তার ঘটার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে প্রশাসনের রহস্যময় নীরবতা। এ ছাড়া নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে কথিত সমাজসেবীদের অনেকের নামই উঠে এসেছে, যারা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধ্বংস করে মাদক ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটি টাকা। প্রথম দিকে ইয়াবা সীমাবদ্ধ ছিল উচ্চবিত্তদের মধ্যে। এখন সমাজের সব শ্রেণীর মানুষই এই নেশায় আসক্ত। সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের একটি সূত্র বলেছে, বর্তমানে ৮০ শতাংশ রোগী ইয়াবায় আসক্ত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাদকের ধরন ও চাহিদার পরিবর্তন ঘটছে। গত আশির দশকের শুরুতে দেশে হেরোইনের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। পরে ভয়াবহভাবে হেরোইনের বিস্তার ঘটে। আশির দশকের শেষ দিকে ফেনসিডিল ছড়িয়ে পড়ে মাদক রাজ্যে। নব্বই দশকের শেষে মাদক হিসেবে ইয়াবা প্রথম ধরা পড়লেও তখন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এখন সেই ইয়াবায় ভাসছে গোটা দেশ। 'মাদক সাম্রাজ্য' আজ শাসন করছে সর্বনাশা ইয়াবা বড়ি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, ২০০২ সালে রাজধানীর নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় নেশাজাতীয় এই বড়ি তারা প্রথম উদ্ধার করে। ভারতে ভুলভুলাইয়া, থাইল্যান্ডে চকেলি, ইয়াবাহ বা পাগলা বড়ি আর বাংলাদেশে নেশার রাজ্যে ইয়াবা এখন বহুল পরিচিত নাম। এটি লাল, কমলা বা সবুজ রঙের গোল ছোট একটি ট্যাবলেট। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ওপর বড়ি রেখে নিচে আগুন বা তাপ দিয়ে ধোঁয়া ওঠানো হয়। সেই ধোঁয়া পাইপ দিয়ে টেনে এ বড়ি সেবন করে থাকে আসক্তিরা। প্রতিটি ইয়াবা প্রকারভেদে তিনশ থেকে ছয়শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কী পরিমাণ ইয়াবা দেশে ব্যবহার হচ্ছে_এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে না থাকলেও তাদের ধারণা, প্রতিদিন অন্তত ১২ লাখ ইয়াবা বড়ি ব্যবহার করছেন আসক্তিরা। এর পুরোটাই আসছে সীমান্ত গলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে। মাঝে মধ্যে ইয়াবা আটক হলেও তা অতি নগণ্য। ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক বলেন, ইয়াবা মস্তিষ্ককে চরমভাবে উদ্দিপ্ত করে। এটি সেবন করলে তাৎক্ষণিকভাবে হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ ও শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কিছু কোষের তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটে। ইয়াবা সেবন করা মাত্র হৃদ-দুর্বল ব্যক্তিদের হৃদযন্ত্রের ক্রীয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সহিংস যৌনতাও ইয়াবা সেবনের একটি সাধারণ পাশর্্বপ্রতিক্রিয়া, যদিও নিয়মিত এক বছর এই বড়ি সেবন করলে যৌনক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, এটি সেবনে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ বৃদ্ধি, হজমশক্তি নষ্ট করা এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়া, পিঠে ব্যথা, ফুসফুস ও কিডনি নষ্ট হওয়া ও টাক পড়ার আশঙ্কা থাকে। মনে হতাশা, বিষাদ, ভয়, অনিশ্চয়তার উদ্ভব হতে পারে। এ ছাড়া এটি আচরণগতভাবে সহিংস করে তুলতে পারে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইয়াবার নেটওয়ার্ক পরিচালিত হয় কঙ্বাজারের টেকনাফ থেকে। আর তা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি। রাজধানীর বনানী, গুলশান ও বারিধারায় রয়েছে তাদেরই মাফিয়া চক্র। এ চক্রের সদস্য রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে শুরু করে বিত্তশালী কয়েকজন ব্যবসায়ী। ইয়াবা ব্যবসায় তারা বানিয়ে ফেলেছেন রাতারাতি কোটি কোটি টাকা। সূত্রগুলো বলছে, কঙ্বাজার থেকে রাজধানীতে ইয়াবা ছড়াচ্ছে নয়টি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। এদের রয়েছে সাব-গ্রুপ। কঙ্বাজারের বিভিন্ন এলাকার একশ্রেণীর মধ্য ও নিম্নবিত্ত বেকার যুবকদের ৮ বা ১০ জনের দল বাসে বা ট্রেনে ঢাকায় আসে। তারাই মূলত এর বাহক। ছোট আকারের এই ট্যাবলেট বহনের কায়দাও অভিনব। শার্টের কলারে, মুঠোফোনের ভেতর, প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে পায়ুপথে ঢুকিয়ে আনার রেকর্ডও রয়েছে। ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথে টঙ্গী স্টেশনে নেমে যায় তারা। ওখান থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে জোন ভিত্তিক নেতার কাছে ইয়াবা পেঁৗছে দেওয়া হয়। আর এগুলো বিক্রি করা হয় শুধু পরিচিত সেবীদের কাছেই। সূত্র জানায়, দেশেই এখন তৈরি হচ্ছে ইয়াবা। থাইল্যান্ড থেকে কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও কারিগর এনে গোপনে তৈরি করা হচ্ছে এগুলো। বেশ কয়েকটি কারখানার সন্ধান পায় গোয়েন্দারা।

রাজধানীতে ১৫ হাজার ব্যবসায়ী : রাজধানীতেই চার গ্রেডের মিলে ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১৫ হাজার। বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যানুযায়ী প্রতি ওয়ার্ডে ২০০-এর বেশি ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছে। জানা যায়, হাতে খরচের টাকা বেশি পাওয়া ছেলেমেয়েরাই এখন ইয়াবার নেশায় আসক্ত। এমনকি ডাক্তার, প্রকৌশলী ও তরুণ ব্যাংকার ব্যবসায়ীদের কাছেও ইয়াবা ভীষণ প্রিয়। রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বিপণি বিতান, মার্কেট, জমজমাট এলাকাসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্টেকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। আকারে ছোট এসব বড়ি লুকিয়ে ছাপিয়ে রাখা যায় বলে এটির বিস্তার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গোয়েন্দা বিভাগের তথ্যমতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মাঠপর্যায়ের লোকজন ধরা পড়লেও মূল হোতারা সব সময় রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান বলেন, ইয়াবা সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া হলে অভিযান পরিচালনা করা হয়ে থাকে। ইয়াবা নিয়ে র্যাবের কার্যক্রম প্রতিনিয়ত চলছেই। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, মাদককে এখন প্রধান অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ চেষ্টা করছে মাদক ব্যবসা যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে।সূত্র জানায়, টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচারের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট মহল। কিন্তু ইয়াবা বড়ি আকারে খুব ছোট হওয়ায় তা ধরতে বেশ বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। রোহিঙ্গা নারীরাও শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে ইয়াবা নিয়ে আসছে। ইয়াবার এই পাচাররোধে ডগ স্কোয়াড নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজিবি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডগ স্কোয়াডের বিশেষ কুকুরকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

View this link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×