আগামী ১৯ তারিখ আমার একটা টিউটরিয়্যাল পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
এমন এক স্যারের, যিনি পরীক্ষা পেছাতে সবসময়ই অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।
তার গত টিউটরিয়্যাল পরীক্ষার সিলেবাস খুব কঠিন ছিল, অনেকেই পরীক্ষা পিছানোর চেষ্টা করে যখন অপারগ হলো, তখন কেউ কেউ অসুস্থতা, হরতাল বা বাড়িতে থাকার খোরা অযুহাত দিতে থাকলো।
কিন্তু স্যার কি মচকানোর পাত্র!
তিনি বরং জানিয়ে দিলেন, যারা বিভিন্ন অযুহাতে পরীক্ষা দিতে চাচ্ছ না তারা আমাকে এসএমএস করে দাও, তাদের ব্যবস্থা পরে হবে, তবুও পরীক্ষা নির্দিষ্ট সময়েই হবে।
তারপর যা হবার তাই হল, পরীক্ষা ঠিকই হল।
এবার ফিরে আসি ১৯ তারিখ।
মনে আছে তো, সেই দিন কি আছে?
আমাদের টিউটরিয়্যাল পরীক্ষা!!
আরে না ভাই, বাংলাদেশ আর ভারতের কোয়ার্টার ফাইনাল! এটা মনে না রাখলে চলে??
যাই হোক, ১৯ তারিখের পরীক্ষা বন্ধের দাবিতে আমাদের ক্লাসের ফেসবুক গ্রুপে প্রথম আলোচনা শুরু করল সাদ। নানান তর্কবিতর্ক শেষে, সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাদের পক্ষ থেকে মনির বাংলাদেশের খেলার দিন আমাদের পরীক্ষা দিতে অনাগ্রহের কথা জানিয়ে ঐ স্যারের নিজের তৈরি গ্রুপে (আমাদের ঐ কোর্সের যাবতীয় তথ্য স্যার যে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে দেন) পোস্ট দিল। কয়েকজন তাকে সমর্থন জানিয়ে কমেন্টও করলো।
টানটান উত্তেজনা!!
আবার আমাদের মাঝে ভয়ও কাজ করছে, নাজানি স্যার আবার পরীক্ষা পেছানোর কথা শুনে রেগে যান!
কিন্তু আমাদের অবাক করে দিয়ে স্যার কমেন্ট করলেন, খেলা ছেড়ে আমি বাসা থেকে আসবই না!
মানে, মানে এই, আমরা চাইলেও সেইদিন পরীক্ষা দিতে পারবো না!!
এই হলো আমাদের অবস্থা, কড়া স্যারও যেন খেলার কথায় গলে গেল!
বন্ধু আমজাদ, আমাকে বলে কি, পরীক্ষা পিছিয়ে ভালই হয়েছে, কি বলিস, খেলার দিন পরীক্ষা থাকলে না হতো পরীক্ষা ভালো, না হতো শান্তিতে খেলা দেখা।
কথাটা শতভাগ সত্যি।
আমার ঐ সাবজেক্টে গত দুই টিউটরিয়্যাল ব্যাপক খারাপ হয়েছে, সামনেরটাই শেষ ভরসা, তবুও একবারও নোটপত্র খুলে দেখিনি। দেখবই বা কেন, সামনে খেলা না!!
আমার আব্বু, এখনও বাড়ি গেলে তার ভয়ে সন্ধ্যার সময়ই বাড়িতে ব্যাক করতে হয়। তাকে আজ সন্ধ্যায় বললাম, ১৯ তারিখ একটা পরীক্ষা ছিল, খেলার জন্য পিছিয়ে ২২ তারিখ করা হয়েছে।
তখন তিনি আমাকে বললেন, ভালই হয়েছে, খেলার দিন পরীক্ষা থাকলে তা নিশ্চিত ভালো হত না।
অথচ আমি ভেবেছিলাম, তিনি বলবেন, কাজ নাই, পড়াশুনা নাই, আবার খেলা!!
আর কিছুক্ষণ আগে আমার ফোনে তিনবার কল দিয়েছে আমার এক বন্ধু। সে আজকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল, “... ইজ ইটিং বার্গার এট সাভার সিটি সেন্টার”, তারপর নাকি তার লজ্জা লাগছিল!!
বাংলাদেশ তো বটেই, এমনকি ভারত বা পাকিস্থানের ম্যাচের দিনও হলের টিভিতে খেলা দেখা দুষ্কর।
আর আমার তো মনে হয়, বাংলাদেশ আর ভারতের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা দেখার জন্য সাহরির সময় থেকে হলের বেঞ্চে সিট ধরে রাখতে হবে, সুবহে সাদিকে গেলে দাঁড়িয়ে, আর খেলার সময় গেলে সবার পিছনে দাঁড়িয়ে স্কোর শুনতে হবে, সবাই হাসলে হাসতে হবে, লাফালে লাফাতে হবে, মাথায় হাত দিলে মাথায় হাত দিতে হবে, খেলা আর দেখতে হবে না!!
আমাদের জন্য এমন আবেগি, জমজমাট আর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ কখনও দেখেছে কি বাংলাদেশ??
যে ম্যাচ শিক্ষক-ছাত্র, বাপ-ছেলের দূরত্ব কমিয়ে আনে......স্তব্ধিত করে বাংলাদেশ!
আর কথা দিচ্ছি, টাইগাররা যদি জয়ী হয়, তবে.........
বাকিটা বললাম না, বলতে পারলাম না, আসলে আমি জানিও না......
এগিয়ে যাবেই বাংলাদেশ, জয় বাংলা।