somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিজিটাল চোর

১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জরুরি একটা ফোন কলের অপেক্ষায় ছিলাম। রিং বাজতেই তাই রিসিভ করলাম।
ওপাশ থেকে কড়া ইন্ডিয়ান এক্সেন্টে একজন ইংলিশে বলল, "হ্যালো, আমার নাম এডাম স্মিথ, আমি ভিসা ফ্রড প্রিভেনশন ডিপার্টমেন্ট থেকে বলছি। কেমন আছেন?"
এই ধরনের কলারগুলি হারামজাদা হয়ে থাকে। চুরির ধান্দায় ফোন করে। যার নাম "এডাম স্মিথ" - সে সাউথ ইন্ডিয়ান এক্সেন্টে ইংলিশ বলবে কেন?
সাধারণত এমন ফোন কলে আমি উত্তর দেয়ারও প্রয়োজন মনে করিনা, শোনামাত্রই লাইন কেটে দেই।
কিন্তু এদিন আমার হাতে সময় ছিল, মুডও ছিল, ভাবলাম একটু গ্যাজাই।
বললাম, "কে বলছেন?"
সে কমান্ডিং টোনে বলল, "আমার নাম এডাম স্মিথ, আমি ভিসা ফ্রড প্রিভেনশন ডিপার্টমেন্ট থেকে বলছি। কেমন আছেন?"
কমান্ডিং টোনের কারন ওরা শুরু থেকেই কথোপকথনের কন্ট্রোল নিজের হাতে রাখতে চায়।
বললাম, "কি কারনে ফোন করেছো?"
"আমার আজকের ফোন কলের কারন হচ্ছে আপনার ভিসা কার্ডে আমরা ৯৮৩ ডলারের একটা ট্রানজেকশন দেখতে পারছি। আপনি কি সেটা অথোরাইজ করেন?"
এখন কথা হচ্ছে, ক্রেডিটকার্ড কোম্পানিগুলো আসলেই কোন সন্দেহজনক ট্রানজেকশনের জন্য এমন ফোনকল করে। কিন্তু এই গাধা একটু গাধামি করে ফেলেছে।
"৯৮৩ ডলারের ট্রানজেকশন কোথায় দেখেছো?"
"আপনার ভিসা কার্ডে।"
"আমার ভিসা কার্ডে?"
"জ্বি।"
"কিন্তু আমিতো ভিসা ব্যবহার করি না।"
এইবার একটু ধাক্কা খেল। তবে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, "আপনি ভিসা, মাস্টারকার্ড, ডিসকভার - কোনটাই ব্যবহার করেন না?"
আমি হেসে বললাম, "তুমি ফোন করেছো ভিসা ফ্রড প্রিভেনশন থেকে, আমার মাস্টারকার্ডে কি ফ্রড হয়েছে সেটা তুমি জানবে কিভাবে?"
সে আমতা আমতা করতে শুরু করলো। বললাম, "তোর নাম এডাম স্মিথ, আর তুই কথা বলিস ইন্ডিয়ান এক্সেন্টে?"
এইবার সে আমার মা বোনকে স্মরণ করতে লাগলো। সাথে আরও কিছু ইন্টারেস্টিং শ্লোকবাক্য পাঠ।
ডিজিটাল দুনিয়ায় এটি কিন্তু খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
সেদিন আমার জুনিয়র একাউন্টেন্টের মায়ের ফোনে তেমনই এক কল এলো।
"আমি এটর্নি অমুক বলছি। তোমার ছেলের নাম তমুক?"
ভদ্রমহিলা বললেন, "হ্যা।"
"ওকে আজকে পুলিশ এরেস্ট করেছে। তবে চিন্তার কোন কারন নেই, ও আমাকে ওর উকিল হিসেবে নিয়োগ করেছে। আমি ওকে ছাড়িয়ে আনতে যাচ্ছি। তবে এজন্য ১০ হাজার ডলার লাগবে। আমার ফিস এবং বেইল আউট এমাউন্ট দুইটাই এটাতে অন্তর্ভুক্ত। তুমি কি zelle করতে পারবে?"
বৃদ্ধা মহিলা কেঁদে উঠলেন। বড় ছেলে জেলে গেছে, যে কেউ শুনলেই ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক।
"হায় হায়! ও কি করেছে?"
"ম্যাম, এইসব কথা পরে বিস্তারিত বলা যাবে। আপনি আগে টাকা পাঠান যাতে আমরা ওকে দ্রুত জেল থেকে বের করে আনতে পারি। নাহলে ওর ক্যারিয়ার শেষ!"
ভাগ্য ভাল আমার কলিগ পাশে ছিল। সে সাথে সাথে ফোন নিয়ে বলল, "আমরা ওর সাথে দেখা করতে চাই। ও কোথায় আছে?"
"সেটা বলা যাবে না।"
"দেখা করা যাবে না মানে? কেন দেখা করা যাবেনা?"
"ও খুব বড় অপরাধে ফেঁসেছে। ন্যাশনাল সিকিউরিটির ইস্যু।"
"ন্যাশনাল সিকিউরিটি মানে? আমরা ওর সাথে দেখা করতে চাই, এবং এইটা আমাদের অধিকার!"
"তোমরা দ্রুত টাকা পাঠাও, জেল থেকে বের করে আনি, তারপরে যত ইচ্ছা কথা বলো।"
"আমরা ওর সাথে দেখা না করে একটা পয়সাও দিব না।"
এরপরেই ফোনকলকারী বিচিত্র ভাষায় কিছু বলে ফোন কেটে দিল। ধরে নিচ্ছি সেও আম্মা আব্বাকে স্মরণ করে কিছু শ্লোক পাঠ করেছে।

আজকাল ডিজিটাল চোরের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ফোনে কেউ টাকা চাইলেই ব্যাংক ইনফর্মেশন দিয়ে বসবেন না। মাথা ঠান্ডা রাখবেন, ভ্যারিফাই করবেন। যার নাম করে টাকা চাইছে, সে পরিচিত হলে ওর সাথে ভ্যারিফাই করবেন। যেমন যদি দেখেন আমি ম্যাসেঞ্জার ইনবক্সে আপনাকে বলেছি টাকা দিতে, তাহলে আমাকে আলাদাভাবে কল করে ভ্যারিফাই করবেন আমিই চেয়েছি কিনা। লোকজনের হাজার হাজার ডলার গায়েব হওয়ার খবর শুনেছি। আমার আগের এক অফিসেতো আট মিলিওন ডলার গায়েব করে ফেলেছিল। কারন এক নতুন এমপ্লয়ির কাছে সিইওর ইমেইল এসেছিল যেখানে একটা লিংক ছিল যা ক্লিক করতেই ওর একাউন্ট হ্যাক হয়ে গিয়েছিল। বোকা এম্পলয়ী খেয়ালই করেনি আমাদের সিইও নিজের অফিসের ইমেইল এড্রেস থেকে ইমেইল না করে কেন গুগল থেকে ইমেইল করবে! বা, ওর কাছে আদৌ কেনই বা ইমেইল করবে! চেইন অফ কমান্ড কাছে, ওর বসকে ইমেইল করবে, ওর বস ওর কাছে ইমেইল করবে।
যাই হোক, ডিজিটাল চোরদের থেকে সাবধান।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৪২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:০৩

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

বেশ কিছুদিন যাবত ডক্টর ইউনুস সাহেব এক সাক্ষাৎকারে "রিসেট বাটন" শব্দদ্বয় বলেছিলেন- যা নিয়ে নেটিজেনদের ম্যাতকার করতে করতে মস্তিষ্ক এবং গলায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু ভগবান না হয় ইশ্বর!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২



মানুষ বঙ্গবন্ধুর ওপর এতোই ত্যক্তবিরক্ত যে আজকাল অনেকেই অনেক কথা বলছে বা বলার সাহস পাচ্ছে। এর জন্য আম্লিগ ও হাসিনাই দায়ী। যেমন- বঙ্গবন্ধু কলেজ, বঙ্গবন্ধু স্কুল (হাজারের কাছাকাছি),... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:২৮





বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ শুনে কোন গালিটা আপনার মুখে এসেছিলো?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬



"খবিশ মহিলা", গালিটি বা তার কাছাকাছি কিছু?

মতিয়া চৌধুরী (১৯৪২-২০২৪) ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ রাজনীতিবিদ। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সবচেয়ে নিবেদিত-প্রাণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বে চরম দারিদ্র্যে বাস করা প্রায় অর্ধেক মানুষই ভারতের

লিখেছেন সরকার পায়েল, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮


বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ দারিদ্রে দিন কাটাচ্ছে। তাদের প্রায় অর্ধেকই যুদ্ধ-সংঘাত লেগে থাকা দেশের বাসিন্দা। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।


ইউএনডিপির বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×