জরুরি একটা ফোন কলের অপেক্ষায় ছিলাম। রিং বাজতেই তাই রিসিভ করলাম।
ওপাশ থেকে কড়া ইন্ডিয়ান এক্সেন্টে একজন ইংলিশে বলল, "হ্যালো, আমার নাম এডাম স্মিথ, আমি ভিসা ফ্রড প্রিভেনশন ডিপার্টমেন্ট থেকে বলছি। কেমন আছেন?"
এই ধরনের কলারগুলি হারামজাদা হয়ে থাকে। চুরির ধান্দায় ফোন করে। যার নাম "এডাম স্মিথ" - সে সাউথ ইন্ডিয়ান এক্সেন্টে ইংলিশ বলবে কেন?
সাধারণত এমন ফোন কলে আমি উত্তর দেয়ারও প্রয়োজন মনে করিনা, শোনামাত্রই লাইন কেটে দেই।
কিন্তু এদিন আমার হাতে সময় ছিল, মুডও ছিল, ভাবলাম একটু গ্যাজাই।
বললাম, "কে বলছেন?"
সে কমান্ডিং টোনে বলল, "আমার নাম এডাম স্মিথ, আমি ভিসা ফ্রড প্রিভেনশন ডিপার্টমেন্ট থেকে বলছি। কেমন আছেন?"
কমান্ডিং টোনের কারন ওরা শুরু থেকেই কথোপকথনের কন্ট্রোল নিজের হাতে রাখতে চায়।
বললাম, "কি কারনে ফোন করেছো?"
"আমার আজকের ফোন কলের কারন হচ্ছে আপনার ভিসা কার্ডে আমরা ৯৮৩ ডলারের একটা ট্রানজেকশন দেখতে পারছি। আপনি কি সেটা অথোরাইজ করেন?"
এখন কথা হচ্ছে, ক্রেডিটকার্ড কোম্পানিগুলো আসলেই কোন সন্দেহজনক ট্রানজেকশনের জন্য এমন ফোনকল করে। কিন্তু এই গাধা একটু গাধামি করে ফেলেছে।
"৯৮৩ ডলারের ট্রানজেকশন কোথায় দেখেছো?"
"আপনার ভিসা কার্ডে।"
"আমার ভিসা কার্ডে?"
"জ্বি।"
"কিন্তু আমিতো ভিসা ব্যবহার করি না।"
এইবার একটু ধাক্কা খেল। তবে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, "আপনি ভিসা, মাস্টারকার্ড, ডিসকভার - কোনটাই ব্যবহার করেন না?"
আমি হেসে বললাম, "তুমি ফোন করেছো ভিসা ফ্রড প্রিভেনশন থেকে, আমার মাস্টারকার্ডে কি ফ্রড হয়েছে সেটা তুমি জানবে কিভাবে?"
সে আমতা আমতা করতে শুরু করলো। বললাম, "তোর নাম এডাম স্মিথ, আর তুই কথা বলিস ইন্ডিয়ান এক্সেন্টে?"
এইবার সে আমার মা বোনকে স্মরণ করতে লাগলো। সাথে আরও কিছু ইন্টারেস্টিং শ্লোকবাক্য পাঠ।
ডিজিটাল দুনিয়ায় এটি কিন্তু খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
সেদিন আমার জুনিয়র একাউন্টেন্টের মায়ের ফোনে তেমনই এক কল এলো।
"আমি এটর্নি অমুক বলছি। তোমার ছেলের নাম তমুক?"
ভদ্রমহিলা বললেন, "হ্যা।"
"ওকে আজকে পুলিশ এরেস্ট করেছে। তবে চিন্তার কোন কারন নেই, ও আমাকে ওর উকিল হিসেবে নিয়োগ করেছে। আমি ওকে ছাড়িয়ে আনতে যাচ্ছি। তবে এজন্য ১০ হাজার ডলার লাগবে। আমার ফিস এবং বেইল আউট এমাউন্ট দুইটাই এটাতে অন্তর্ভুক্ত। তুমি কি zelle করতে পারবে?"
বৃদ্ধা মহিলা কেঁদে উঠলেন। বড় ছেলে জেলে গেছে, যে কেউ শুনলেই ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক।
"হায় হায়! ও কি করেছে?"
"ম্যাম, এইসব কথা পরে বিস্তারিত বলা যাবে। আপনি আগে টাকা পাঠান যাতে আমরা ওকে দ্রুত জেল থেকে বের করে আনতে পারি। নাহলে ওর ক্যারিয়ার শেষ!"
ভাগ্য ভাল আমার কলিগ পাশে ছিল। সে সাথে সাথে ফোন নিয়ে বলল, "আমরা ওর সাথে দেখা করতে চাই। ও কোথায় আছে?"
"সেটা বলা যাবে না।"
"দেখা করা যাবে না মানে? কেন দেখা করা যাবেনা?"
"ও খুব বড় অপরাধে ফেঁসেছে। ন্যাশনাল সিকিউরিটির ইস্যু।"
"ন্যাশনাল সিকিউরিটি মানে? আমরা ওর সাথে দেখা করতে চাই, এবং এইটা আমাদের অধিকার!"
"তোমরা দ্রুত টাকা পাঠাও, জেল থেকে বের করে আনি, তারপরে যত ইচ্ছা কথা বলো।"
"আমরা ওর সাথে দেখা না করে একটা পয়সাও দিব না।"
এরপরেই ফোনকলকারী বিচিত্র ভাষায় কিছু বলে ফোন কেটে দিল। ধরে নিচ্ছি সেও আম্মা আব্বাকে স্মরণ করে কিছু শ্লোক পাঠ করেছে।
আজকাল ডিজিটাল চোরের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ফোনে কেউ টাকা চাইলেই ব্যাংক ইনফর্মেশন দিয়ে বসবেন না। মাথা ঠান্ডা রাখবেন, ভ্যারিফাই করবেন। যার নাম করে টাকা চাইছে, সে পরিচিত হলে ওর সাথে ভ্যারিফাই করবেন। যেমন যদি দেখেন আমি ম্যাসেঞ্জার ইনবক্সে আপনাকে বলেছি টাকা দিতে, তাহলে আমাকে আলাদাভাবে কল করে ভ্যারিফাই করবেন আমিই চেয়েছি কিনা। লোকজনের হাজার হাজার ডলার গায়েব হওয়ার খবর শুনেছি। আমার আগের এক অফিসেতো আট মিলিওন ডলার গায়েব করে ফেলেছিল। কারন এক নতুন এমপ্লয়ির কাছে সিইওর ইমেইল এসেছিল যেখানে একটা লিংক ছিল যা ক্লিক করতেই ওর একাউন্ট হ্যাক হয়ে গিয়েছিল। বোকা এম্পলয়ী খেয়ালই করেনি আমাদের সিইও নিজের অফিসের ইমেইল এড্রেস থেকে ইমেইল না করে কেন গুগল থেকে ইমেইল করবে! বা, ওর কাছে আদৌ কেনই বা ইমেইল করবে! চেইন অফ কমান্ড কাছে, ওর বসকে ইমেইল করবে, ওর বস ওর কাছে ইমেইল করবে।
যাই হোক, ডিজিটাল চোরদের থেকে সাবধান।