somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিজের অধিকার দাবির আন্দোলন নাকি সরকার পতনের আন্দোলন!

২৫ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের প্রথমআলোয় পড়লাম, ১৬ বছরের ইফাতের বুকের বাঁ পাশে ছিল গুলির চিহ্ন।
ছেলের গুলিবিদ্ধ ছবি দেখিয়ে মা কামরুন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। সে একজন পড়ে থাকা আহত মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল সেদিন।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে পুলিশ।
প্রথম আলোর হিসাবে কনফার্মড মৃতের সংখ্যা ২০৩ এ গিয়ে ঠেকেছে।
২০৩ টা প্রাণ! মানে ২০৩টা পরিবার শেষ হয়ে গেল।
এটা কনজারভেটিভ নাম্বার। লাশ গায়েব হওয়া, বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হওয়া মৃতের এখনও কোন হিসাব নেই।
এবং একই পত্রিকায় পড়লাম আমাদের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতির দিকে ফোকাস করছেন। তিনি বলছেন "ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার ভাষা নেই, জনগণের কাছে বিচার চাইছি!" তিনি আরও বলেন, "এতে আপনারাই কষ্ট পাবেন। দেশের মানুষই কষ্ট পাবে। এই ঢাকা শহরের মানুষই কষ্ট পাবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আবার ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকতে হবে। কর্মস্থলে সময়মতো পৌঁছানো আবার ফেরত আসায় দীর্ঘ সময় লাগবে। বসে বসে সেই ট্রাফিক জ্যামে কষ্ট পাওয়া থেকে আপনাদের এই কষ্ট লাঘব করতে চেয়েছিলাম।"

উনি যখন আমাদের কাছে ন্যায় বিচার চাইছেন, তখন বলছি, আমরা দেশবাসী চাঁদা তুলে বিলিওন ডলার তুলে মেট্রোরেল সারিয়ে ফেলবো। দেশ ট্রাফিক জ্যাম মুক্ত হবে। উনার ক্ষতিপূরণ আমরা দিয়ে দেব।
তবে তার আগে উনি যেন ঐ ২০৪ বাচ্চাকে ফেরত এনে দেন। যে মা টা কান্নাকাটি করছে, ওর বুকে ওর বাচ্চাকে ফিরিয়ে আনুক। যে বোনটা বিয়ের ছবি পোস্ট করে বলছে "আমার ভাইটা আর নেই" - বা ছাদে খেলতে থাকা ছোট্ট শিশু কন্যাকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মরে যেতে দেখেছে যে পিতা, ওদের সবাইকে ফেরত এনে দিক।
আচ্ছা, ২০৪ বাদ, আস্ত দুনিয়ার সম্পদ নিয়ে নেন, একটা প্রাণ ফিরিয়ে দেন। পারবেন?
ন্যায় বিচার????
মেরে ফেলেছেন সেটা একটা অপরাধ, কিন্তু তারচেয়েও বড় অপরাধ হচ্ছে নিহতদের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা সম্মান না দেখিয়ে উল্টো ওদেরকে বিএনপি জামাতের জঙ্গি/সন্ত্রাসী ট্যাগ দেয়া হচ্ছে। খালি হাতে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো মানুষ কিংবা মিছিল থেকে দৌড়ে পালাতে থাকা মানুষের দিকে গুলি চালানো হয়েছে, তারপরেও সরকার পোকার ফেসে মিথ্যাচার করছে যে পুলিশ নাকি আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে।
পুলিশ গুলি চালাতেই পারে, রাষ্ট্র ওদেরকে কিছুটা হলেও ক্ষমতা দেয়। কিন্তু কেন ছাত্রলীগ গুলি চালাবে? ওরা কি সিভিলিয়ান নয়? রাষ্ট্রের টাকায় কেন গুন্ডাবাহিনী পোষা হয়?
আমার সবচেয়ে বেশি মেজাজ খারাপ হচ্ছে এই ট্যাগিং গেমে। সরকারের পাশবিকতার সমালোচনা করলে সরকারের লোকেরা আপনাকে বিএনপি জামাত সমর্থক বানিয়ে দিচ্ছে। বলছে আপনি সরকারের পতন চান। সিরিয়াসলি? জামাতে ইসলামীর সাথে যারা হাত মেলায়, গলাগলি করে, ঐ বিএনপিকে আমি সাপোর্ট করবো? যে ফাজিল এমনটা চিন্তা করে, ওটাকে কোন কথা ছাড়াই থাবড়াইতে মন চায়।

আর আন্দোলন নিয়ে কেউ যখন বানোয়াট গুজব ছড়ায়, ওদের ধরলে ওরা আমাকে বলছে আমি নাকি সরকারের দালাল! আবারও, সিরিয়াসলি? যেভাবে আমার ভাইদের গুলি করে মারলো, আমি যতদিন মানুষ আছি, ততদিন আমার পক্ষে এই খুনিদের সাপোর্ট করা সম্ভব? আমি নানান পাপে পাপী, কিন্তু জুলুমের পাপ আমি করতে রাজি না। আমি বিশ্বাস করি ঐ ছেলে হারা মায়ের চিৎকারে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠে। আল্লাহর কসম, কেয়ামতের দিন যখন আল্লাহ ঐ শহীদদের ডেকে জিজ্ঞেস করবেন "কোন অপরাধে এবং কারা তোমাকে হত্যা করেছিল?" - গোটা দুনিয়ার বিনিময়েও আমি সেই আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে রাজি না।
কারোর প্রতি জুলুম করার আগে আমি একশোবার জুলুমের শিকার হতে রাজি আছি। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে এই মহা পাপের হাত থেকে রক্ষা করেন। এবং দুনিয়ার বুকেই জালিমদের কঠোরতম শাস্তি দেন।

কথা হচ্ছে, আমি "বাংলাদেশী" কবে হবো? কবে আমি নিঃসংকোচে আমার মনের কথা বলতে পারবো এবং কোন আহাম্মক মূর্খ আমাকে কোন ট্যাগ দিবে না? ন্যায়কে ন্যায় এবং অন্যায়কে অন্যায় বলতে গেলেও যদি আমাকে দল মত ইত্যাদি বিচার করতে হয়, আমার চেয়ে বড় গোলামতো আমার বাড়ির পালতু কুকুরও নয়। সিরিয়াসলি, আরাফাত, পলক, ওবায়দুল কাদেরদের মতন ফলোয়ার কোথায় পাওয়া যায়? আমি এমনই কিছু সহমত ভাই চাই। প্রয়োজনে নিজের মা বোন বিক্রি করে দিবে, তবু মালিকের হুকুম পালন করবে। তবে চরম সত্য কি জানেন? এই হারামিগুলিই শেখ হাসিনার পতনের মূল কারন হবে। লিখে দিলাম, মিলিয়ে নিবেন। বঙ্গবন্ধুর মায়ের মৃত্যুতে খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বেশি কেঁদেছিল, বাকিটা আমরা ইতিহাস বই পড়লেই জানতে পারবো। ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিনতম শিক্ষা এটাই, সে বারবার রিপিট হয়।

নিজের বাপের কোন কাজের সমালোচনা করার মানে কি পাশের বাড়ির আংকেলকে বাপ ডাকা? এ কেমন আহাম্মকি লজিকে চলে আমাদের বাংলাদেশী সমাজ?

নিজের অধিকার দাবির আন্দোলন নাকি সরকার পতনের আন্দোলন! শুধুমাত্র এই অন্ধ মূর্খ জাহিলী ইন্টারপ্রিটেশনে সরকার নিজেদের ভিতরের নরপশুত্ব বের করে আনলো। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলনেও। সরকার ইচ্ছা করেই এইবার এত ব্রুটাল হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে কেউ কোন কিছু দাবি করার আগে এই দিনের কথা স্মরণ করে আর কোন পদক্ষেপ নেয়ার আগে একশোবার চিন্তা করে।

সবচেয়ে হতাশ লাগছে কিছু অমানুষের পোস্টে।
ওরা পুরো দোষটাই ছাত্রদের উপর চাপাচ্ছে। ছাত্ররা কেন দাবি করতে গেল, কেন রাস্তায় নামলো, কেন এই কেন সেই। একটাবার ওদের লেখায় পেলাম না কেন ছাত্রলীগ ওদের পেটালো এবং পুলিশ গুলি চালালো। আমরা যারা ফেসবুকে এইসব হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করছি, আমরা নাকি ওদের উস্কানি দিচ্ছি। আমি সিরিয়াসলি চিন্তা করি, ওরা কি বিবেক, মনুষত্ব, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি সব ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে? এদের মাকে যদি পাশের বাসার আংকেল এসে মলেস্ট করে যায়, তবু এরা চুপ থাকবে, কারন নাহলেতো "উস্কানি" হয়ে যাবে! অদ্ভুত!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:৫২
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:০৩

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

বেশ কিছুদিন যাবত ডক্টর ইউনুস সাহেব এক সাক্ষাৎকারে "রিসেট বাটন" শব্দদ্বয় বলেছিলেন- যা নিয়ে নেটিজেনদের ম্যাতকার করতে করতে মস্তিষ্ক এবং গলায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু ভগবান না হয় ইশ্বর!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২



মানুষ বঙ্গবন্ধুর ওপর এতোই ত্যক্তবিরক্ত যে আজকাল অনেকেই অনেক কথা বলছে বা বলার সাহস পাচ্ছে। এর জন্য আম্লিগ ও হাসিনাই দায়ী। যেমন- বঙ্গবন্ধু কলেজ, বঙ্গবন্ধু স্কুল (হাজারের কাছাকাছি),... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:২৮





বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ শুনে কোন গালিটা আপনার মুখে এসেছিলো?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬



"খবিশ মহিলা", গালিটি বা তার কাছাকাছি কিছু?

মতিয়া চৌধুরী (১৯৪২-২০২৪) ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ রাজনীতিবিদ। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সবচেয়ে নিবেদিত-প্রাণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বে চরম দারিদ্র্যে বাস করা প্রায় অর্ধেক মানুষই ভারতের

লিখেছেন সরকার পায়েল, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮


বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ দারিদ্রে দিন কাটাচ্ছে। তাদের প্রায় অর্ধেকই যুদ্ধ-সংঘাত লেগে থাকা দেশের বাসিন্দা। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।


ইউএনডিপির বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×