somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'শকুন্তলা' অস্টিন-সান আন্টোনিও-ডালাস

০৮ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শকুন্তলা নাট্যাচার্য সেলিম আল দিনের ধ্রুপদী ধারার রচনাগুলির একটি।
ঢাকা থিয়েটারের রত্নভাণ্ডারে গুছিয়ে রাখা এক অমূল্য রতন। এই এক চিত্রনাট্যই আমাদের দেশের অভিনয় জগতের বহু অভিনয় শ্রমিককে কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী বানিয়েছে।
এই নাটক যখন ডালাসে মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা হচ্ছিল, আমাদের অনেকেরই মনে কিছুটা হলেও শংকা ছিল, এই নাটককে সফল করার ক্ষমতা কি আমাদের স্থানীয় শিল্পীদের আছে? বা আমাদের দর্শককেরই বা এমন কঠিন নাটক বুঝার ক্ষমতা আছে?

আমাদের পরিচালক শহীদুজ্জামান সেলিম ভাই দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, "আপনাদের কাজ আমার নির্দেশনামতন অভিনয় করা আর আমার কাজ দর্শকদের একটি সুপ্রিম থিয়েট্রিকাল এক্সপিরিয়েন্স দেয়া।"
আমি সবসময়ে একটি কথা মেনে চলি, "director is the captain of ship." যেহেতু কোন ক্যাপ্টেনই নিজের জাহাজকে ডুবাতে চান না তাই ক্যাপ্টেনের নির্দেশনা মেনে চলাটাই প্রতিটা শিল্পীর দায়িত্ব। আমি আমার ক্যাপ্টেনের কথায় নোঙ্গর তুললাম।

দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলল পরিশ্রম। বহু ভাঙ্গা গড়ার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে আমাদের কাহিনী।
পেছনে ফিরে যখন তাকাই, অবাক হই, কোথা থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল, আর আজকে কোথায় চলে এসেছি! প্রতিদিন মনে হয় আরও কতদূর যাওয়ার ক্ষমতা আমাদের আছে! সেলিম ভাই আমাদের হাটতে শিখিয়ে দিয়েছেন, এখন আমরা দৌড়াচ্ছি। দৌড়ের গতি কখনও বাড়ছে, কখনও কমছে, কিন্তু দর্শক প্রতিবার দাঁড়িয়ে তালি বাজাচ্ছে।

গেল সপ্তাহের অস্টিন শো পরে গতরাতে সান আন্টোনিও শহরও তাঁদের ভালবাসা জানালো।
সান আন্তোনিও বড় শহর হলেও সেখানে বাঙালি কমিউনিটি অনেক ছোট। হাজারটা বাঙালিও হবেন কিনা সন্দেহ। ওদের কাছে আমরা নিয়ে গেলাম শকুন্তলার মতন মহাকাব্যিক প্রোডাকশন। দুর্ভিক্ষ পীড়িত এক জনগোষ্ঠীর কাছে হঠাৎ করেই কেউ যদি রাজসিক ভোজ নিয়ে হাজির হয়, তাঁদের অবস্থা হয়েছিল ঠিক সেরকম। আতিথেয়তার কোন কমতি রাখেননি। আমরা ঠিক মতন খাচ্ছি কিনা, আমাদের কোন অসুবিধা হচ্ছেনা, আমাদের কিছু লাগবে কিনা ইত্যাদি সব বিষয়েই ওদের নজর ছিল।
মঞ্চনাটক আয়োজনে তাঁদের অভিজ্ঞতা নেই, যে মঞ্চ আমাদের দিয়েছিলেন, সেটাকে আমরা আমাদের মতন গড়ে নিলাম। যা যা সহায়তা চেয়েছিলাম সব পেলাম। আমাদের সাথে তাঁরা প্রত্যেকে হাত বাড়ালেন। ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে এসেছিলেন, ওরা বিস্মিত চোখে দেখছিল কিভাবে ওদের পরিচিত সাধারণ মঞ্চ হাজার হাজার বছর আগের পুষ্করবন হয়ে উঠলো। কিভাবে একটু আগেই হেঁটে চলে বেড়ানো মানুষগুলি পৌরাণিক চরিত্রে পাল্টে গেল।
সূত্রধার যখন "দৃশ্যকাব্য শকুন্তলার অভিনয় এখানেই শেষ হলো" ঘোষণা দিলেন, মন্ত্রমুগ্ধ দর্শক দাঁড়িয়ে এমন জোরালো করতালি শুরু করলো যে চোখে পানি আসার জোগাড়। দীর্ঘ পরিশ্রমের পরে নিজের ফসলকে পাকতে দেখে কৃষকের যেই অনুভূতি হয়, কালকে যেন ঠিক সেটাই পেলাম। দর্শকের একটাই প্রশ্ন, "আবার কবে আপনারা আসবেন?"

আমাদের বেশ কয়েকজনকে কাল নাটক শেষেই গাড়িতে চেপে ডালাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হয়েছে। বাড়িতে পৌঁছতে পৌঁছতে তিনটা বেজে গেছে। সকাল ছয়টায় উঠেই অফিসের কাজ শুরু। মাসের শুরু, অনেক কাজ জমে থাকে। শরীর ক্লান্ত, কিন্তু মন খুশিতে ভরপুর। পরপর দুইটা সফল শো নামিয়ে দেয়া গেছে। সামনে রইলো ডালাস! আমাদের লাস্ট ফ্রন্টিয়ার। নিজের আঙিনায়, নিজের লোকেদের সামনে বহু বছর পর ফিরছি। নার্ভাস লাগা ছাড়া আর সব ধরনের অনুভূতিই কাজ করছে।
পরিচিতদের বলছি এসে দেখে যেতে।
এমন প্রোডাকশন আমেরিকার মাটিতে তাঁরা আগে কখনও দেখেননি, এটি নিশ্চিত করে বলতে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:০৩

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

বেশ কিছুদিন যাবত ডক্টর ইউনুস সাহেব এক সাক্ষাৎকারে "রিসেট বাটন" শব্দদ্বয় বলেছিলেন- যা নিয়ে নেটিজেনদের ম্যাতকার করতে করতে মস্তিষ্ক এবং গলায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু ভগবান না হয় ইশ্বর!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২



মানুষ বঙ্গবন্ধুর ওপর এতোই ত্যক্তবিরক্ত যে আজকাল অনেকেই অনেক কথা বলছে বা বলার সাহস পাচ্ছে। এর জন্য আম্লিগ ও হাসিনাই দায়ী। যেমন- বঙ্গবন্ধু কলেজ, বঙ্গবন্ধু স্কুল (হাজারের কাছাকাছি),... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:২৮





বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ শুনে কোন গালিটা আপনার মুখে এসেছিলো?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬



"খবিশ মহিলা", গালিটি বা তার কাছাকাছি কিছু?

মতিয়া চৌধুরী (১৯৪২-২০২৪) ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ রাজনীতিবিদ। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সবচেয়ে নিবেদিত-প্রাণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বে চরম দারিদ্র্যে বাস করা প্রায় অর্ধেক মানুষই ভারতের

লিখেছেন সরকার পায়েল, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮


বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ দারিদ্রে দিন কাটাচ্ছে। তাদের প্রায় অর্ধেকই যুদ্ধ-সংঘাত লেগে থাকা দেশের বাসিন্দা। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।


ইউএনডিপির বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×