আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন জানলাম ওরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পেইড রিভিউ দেয়, এবং পে না করলে উল্টা বাজে রিভিউ দিয়ে বিজনেসের বারোটা বাজানোর হুমকি দেয়, তখন আর ইচ্ছাও করেনা দেখার।
আমি বরং রিভিউর চাইতে রেসিপি ভিডিও বেশি দেখি। সেখানেও যদিও ঘাপলার অভাব নেই। "গ্রিল ছাড়াই চিকেন গ্রিল বানাবার গোপন পদ্ধতি" "গরু ছাড়াই গরুর মাংসের ভুনার ম্যাজিক ফর্মুলা" "রেস্টুরেন্টগুলো আমাদের কিভাবে বোকা বানায় দেখে নিন" "এই রেসিপি ফলো করুন এবং বাঁচিয়ে নিন কোটি কোটি টাকা" বা মিসেস নুডলসের যন্ত্রনাতো আছেই।
তো যা বলছিলাম, রাফসান ইদানিং কটের উপরেই আছে।
প্রথমে "পিতা মাতার ঋণ কখনও শোধ করা যায় না" এবং এখন নিজের প্রোডাক্টের নিম্নমান।
মূল বিষয় হচ্ছে, দুইটা ঘটনাই দেশে এখন অতি কমন ঘটনা। ব্যংক ঋণ নিয়ে লোকে মেরে দেয়, এবং ব্যবসায়ীরা দুর্নীতি করে।
এমন না যে দেশের সবাই সহীহ শুদ্ধ ছিল, সৎ জীবন যাপন করতো, এবং রাফসান পরিবারই এসবকে প্রথমবারের মতন ইন্ট্রোডিউস করেছে।আমরা আহাম্মক সাধারণ পাবলিকরাই ঋণ পরিশোধের যন্ত্রনায় রাতের ঘুম হারাম করি! ব্রলোকসদের সেই টেনশনই নাই। ওদের ফিলোসফি হচ্ছে, অন্যের নারী, অন্যের গাড়ি আর অন্যের শাড়ি একবার পকেটে গেলে ওটা আপনাতেই নিজের হয়ে যায়। যেহেতু সে একজন সেলিব্রেটি, এবং তারচেয়ে বড় কথা, ক্যামেরায় উদারমনা, আদর্শবান হিসেবে নিজেকে প্রেজেন্ট করে (এইটা ধরে নিচ্ছি, আমি যেহেতু দেখিনাই, তাই জানিনা ওর ভিডিও কন্টেন্টগুলো আসলে ঠিক কি কি), কাজেই ও হাইলাইটেড হয়েছে বেশি। সেটাই স্বাভাবিক। রাম শ্যাম যদু মদু আর সেলিব্রেটির (ফেসবুক হোক বা অন্য যেকোন মিডিয়ার সেলিব্রেটি) পার্থক্য এটাই, ওদের যেকোন গুন যেমন হাইলাইটেড হয়, তেমনই বদনামও ছড়ায় বেশি। ফুডাপ্পির কাহিনী মনে আছে? হাজব্যান্ড ওকে অত্যাচার করে বলে কত কান্নাকাটি, গোটা দেশের মানুষ বেচারাকে গালাগালি করে ভাসায় দিল। একটু অপেক্ষা পর্যন্ত করলো না ওর পয়েন্ট অফ ভিউ শোনার।
বেচারা এসে যখন একই শোতে এসে নিজের কথা বলল, তখন ধরা পড়লো মহিলাটা কত বড় বাটপার, মিথ্যা যৌতুকের মামলা দিয়ে উল্টা একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। টাকা আত্মস্যাৎ করেছে। হাস্যকর হচ্ছে, এই মহিলাই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়া ছাত্রছাত্রীদের বাবা মায়ের ইনকাম সোর্স নিয়ে কটূক্তি করেছিল।
তারপরে বেশ কয়েকদিন আরও নোংরামি চলল। ও নাকি মাসে দশ লাখ টাকা আয় করে। ইনকাম ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ সেটা জানে তো? ঠিক মতন ট্যাক্স দেয়তো?
"অখন ইবা ফুডাপ্পি কডে?"
তা যাই হোক, রাফসানের লেটেস্ট নিউজ আপডেট হচ্ছে, সে একটা ড্রিংক প্রোডাক্ট লঞ্চ করেছিল, এবং বিএসটিআই ঘোষণা দিয়েছে না কোন অনুমোদন নিয়েছে, না কোন স্বাস্থসম্মত পথ অবলম্বন করেছে। কুমিল্লার একটা গোডাউনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেটা প্যাকেজ করে পাবলিকের মুখে তুলে দিয়েছে।
সবচেয়ে হাস্যকর হচ্ছে, এই প্রোডাক্টেরও নাকি প্রচুর পজিটিভ রিভিউ বাজারে ছড়ানো হয়েছে। দেশের ফুড বা প্রোডাক্ট রিভিউ যে কত বড় বাটপারি, সেটা আবারও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো।
আমার সাধারণ জ্ঞান বলছে, যে নিজে একজন "ফুড রিভিউয়ার" যে অন্যের খাদ্যের স্বাদ, মান ইত্যাদি রিভিউ দিয়ে থাকে, ওর থেকে এমন কিছু আসা মানে স্পষ্টতঃ বাটপারি। তারমানে সে পর্দায় যে রূপে নিজেকে প্রকাশ করে, সেটা আসলে মিথ্যা চেহারা। শুনেছি ও খুব দান দক্ষিণা করে, এটাও বিখ্যাত ইউটিউবার "মিস্টার বিস্টের" নকল ধরে নিচ্ছি। দেদারসে টাকা বিলালে ভিউ বাড়ে, এতে সেই টাকাটাই উঠে আসে। কারন আপনি যদি দান দক্ষিণাতেই বিশ্বাসী হয়ে থাকেন, সবার আগে নিশ্চিত করবেন আপনার মাথার উপরে যাতে কোন ঋণের বোঝা না থাকে। সেটা পরিশোধ করাটাই আসল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। দেখা গেছে ঋণ নেয়ার পরে ওর পিতা একটা কিস্তিও শোধ করেনি। একটাও না। এর মানেই হচ্ছে ওদের উদ্দেশ্য ছিল "রাম নাম জাপনা, পারায়া মাল আপনা!"
তো রাফসান পরিবার নিয়ে এত দীর্ঘ লেখা লেখার কারন হচ্ছে বাঙালি কিছু মুরিদের কমেন্ট।
"ও শুধু একটি হসপিটালের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল - তারপরেই....."
চমৎকার! এই নাহলে বাঙালি মুরিদ!
আমাদের হুজুর জিহাদের ডাক দিয়ে পাঁচ ছয়জন তরতাজা তরুণকে রাজপথে শহীদ করিয়ে পরের দিনই, আক্ষরিক অর্থেই পরের দিনই রিজোর্টে অন্য মহিলার সাথে কট খায় - যেই মহিলা নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে সে নিজেও জানে না ওর সাথে বিয়ে হয়েছে কিনা, ওর ছেলেরা, ওর বাবাও স্টেটমেন্ট দিয়েছে ওর সাথে বিয়ে হয়নি, হুজুরের পরিবারের লোকজনই স্টেটমেন্ট দিয়েছে ওরাও বিয়ের ব্যাপারে জানতো না, সেখানে মুরিদরা "আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র" বানিয়ে প্রচার করে বেরিয়েছে।
এখানেও ঘটনা একই।
"রাফসানের কোনই দোষ নেই, ও শুধু হসপিটালের বিরুদ্ধে বলেছিল বলেই আজকে ওর বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সব ষড়যন্ত্রের মূল আসলে ঐ খুনি হসপিটাল কর্তৃপক্ষ!"
এদের বক্তব্য অনুযায়ী, হসপিটালের বিরুদ্ধে সে প্রতিবাদ করেছে ২০২৪ সালে, কিন্তু হসপিটাল কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই জানতো যে সে ২০২৪ সালে পতিবাদ করবে, তাই ২০১৬ সালে ওর আব্বাকে ব্যাংকের মাধ্যমে জোর করে ঋণ পাইয়ে দিয়েছে। ওর আব্বা নিতে চায় নাই, ব্যাংক বলেছে, "আপনি ঋণ না নিলে আমি বিষ খাব, এবং নোট লিখে দিব আমার মিত্যুর জন্য রাফসান দা ছুডু ভাইয়ের আব্বা দায়ী!"
তারপরে ব্যর্থ মনরথে, নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে বুকে পাথর চাপা দিয়ে ওর আব্বা ঋণটা নিয়েছে, কিন্তু সাথে সাথেই ফেরত দিতে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আবারও নিজের বিষের শিশি দেখিয়ে উনাকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
এদিকে ২০২৩ সালে রাফসান যখন ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস বাজারে আনতে চায়, তখন সরকারের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও অনুমোদন পায়নি। সে চিৎকার করেও, কান্নাকাটি করেও, হাতে পায়ে ধরেও ওদের বুঝাতে পারেনি যে সে স্বাস্থসম্মত উপায়ে ড্রিংকস বাজারজাত করতে চায়, কিন্তু নিষ্ঠুর কর্তৃপক্ষ ওর আর্জিতে কর্ণপাত পর্যন্ত করেনি।
অতঃপর বহু চেষ্টা করেও "স্বাস্থ্যসম্মত" পরিবেশ খুঁজে না পেয়ে, নিতান্ত বাধ্য হয়েই গ্রামের গরিব দুঃখী অবলা নারীদের দিয়ে কোন মেশিন বা উন্নত পদ্ধতি ছাড়াই প্যাকেজিংয়ের দায়িত্ব দিয়ে ব্যবসা চালু করে। যে জাতি লোহা হজম করে আসে, সামান্য ব্যাকটেরিয়ায় ওদের কিই বা যাবে আসবে?
অবশেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ তোলায় আজকে ওকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে!
এই কারণেই বিখ্যাত মনীষী বাহুবলি রামাধির সিং বলে গেছেন, "যাবতাক ইন্ডিয়া মে সানিমা হ্যায়, লোগ *&^ বানতে রাহেঙ্গে।" (যতদিন ভারতে সিনেমা আছে, লোকজন ভোদাই হতে থাকবে।")