ট্রাম্প ভাই অ্যাকশনে নেমে পড়েছেন। শুরুতেই সাত দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এবং ধীরে ধীরে এই তালিকা আরও বড় হবে তাতে সন্দেহ নেই।
তার উৎসাহী সমর্থকেরা এতে খুশি হয়ে দিলেন টেক্সাসের এক মসজিদে আগুন ধরিয়ে। এক রাতেই মুসলিমদের ইবাদতখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আমাদের শহর থেকে মাত্রই কয়েক ঘন্টা ড্রাইভিং দূরত্বে ঘটেছে এই ঘটনা।
ক্যানাডায়তো মাগরিবের সময়ে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে কয়েকজন মুসল্লিকে। ক্যানাডার মতন দেশে এই ঘটনা ঘটলে অ্যামেরিকায় ঘটতে কতক্ষন? এখন প্রতিটা মসজিদের বাইরে পুলিশের সতর্ক প্রহরা দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু রাষ্ট্রপতিই যদি হন মুসলিম বিদ্বেষী, তাহলে কিই বা করার আছে।
কয়েকদিন আগেই বলেছিলাম, তখন (মসজিদে আগুন, মুসলিম নারীর গায়ে আগুন, নিউইয়র্কে মুসলিমের উপর আক্রমন ইত্যাদি) গিটারের টিউনিং চলছিল, আসল বাজনা বাজা শুরু হবে শপথ গ্রহণের পর। এখনও কনসার্ট শুরু হয়েছে বলা যাচ্ছেনা। এটাও ধরে নিন সাউন্ড চেকিং চলছে। এখনও তিন বছর ৫০ সপ্তাহ বাকি আছে। এবং ট্রাম্প ভাই একটি জমজমাট কনসার্ট উপহার দিবেন এমন পূর্বাভাস দেয়াই যায়। আমরা শুধু বলতে পারি, "হাসবুনাল্লাহি ওয়া নি'মাল ওয়াকিল।"
কথা এগুবার আগে ট্রাম্পের আগের অ্যামেরিকার বর্ণনা দেয়াটা জরুরি।
নয় এগারোর দুর্ঘটনার পর এয়ারপোর্টে "মুসলিম" শব্দটি ছিল "আত্মঘাতী বোমা হামলার" সমার্থক। কারও নামের সাথে মোহাম্মদ, আহমেদ, রহমান ইত্যাদি থাকলে তাঁকে একটু বেশিই জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো। দাড়িওয়ালা বা হিজাব মাথার হলেতো কথাই নেই। এই কিছুদিন আগেই দুই যুবক নিজেদের মধ্যে আরবিতে কথা বলছিল দেখে ওদের প্লেন থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছিল। পরহেজগার মুসলিম তাঁর ইসলামী পোশাক পরিহিত অবস্থায় প্লেনে যাতায়াতের সময়ে সবসময়েই লক্ষ্য করেন মানুষজনের ভীত ও সন্দেহপ্রবন চেহারা। একবার এয়ারপোর্টে গেটের সামনে একজনকে আসরের নামাজ পড়তে দেখায় এক শ্বেতাঙ্গ নিজের বোর্ড করা ফ্লাইট বদলে ফেললেন।
ট্রাম্প সাহেব এসে দিলেন মুসলিমদের ব্যান করে। ফুঁসে উঠলো অ্যামেরিকান সমাজ। এয়ারপোর্টে ভিড় করলেন মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদি জনগোষ্ঠী। সমবেত স্বরে স্লোগান তুললেন, "'No hate, no fear, refugees are welcome here!"
এবং সবচেয়ে মজার ঘটনা হলো, নামাজের সময় হলে এয়ারপোর্টে আজান দিয়ে জামাতে নামাজ পড়া হয়। প্রতিটা মুসলিম একসাথে সিজদাহ দেয়। এবং অমুসলিম জনসাধারণ পাশে দাঁড়িয়ে চিয়ার করে।
এয়ারপোর্টে যেখানে একসময়ে কিছু মুসলিম নারী মাথার হিজাব খুলে স্কার্ফের মতন ব্যবহার করতেন, সেখানে অমুসলিম নারীরা নিজেদের স্কার্ফকে হিজাব বানিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এখন দাড়িওয়ালা জোব্বা পরিহিত মুসলিমদের এয়ারপোর্টে খুঁজে খুঁজে বের করে জড়িয়ে ধরে বলা হচ্ছে, "আমরা তোমাদের পাশে আছি।"
টেক্সাসে পুড়িয়ে দেয়া মসজিদের পুনঃনির্মাণের জন্য ফান্ড রেইজ করা হলো। এক রাতেই হাফ মিলিয়ন ডলার উঠে গেল। যার সিংহভাগ এসেছে অমুসলিমদের কাছ থেকে।
জায়গায় জায়গায় মুসলিম-খ্রিষ্টান ইন্টারফেইথ কনফারেন্স হচ্ছে। মুসলিমদের সম্পর্কে যেসব একপেশে ধারণা ফক্স নিউজ ছড়ায় - সেসব ধারণা অনেকটাই দূর করছে এসব সামনা সামনি আলোচনা।
এবং ক্যানাডার মসজিদের বাইরে হাজারো মানুষ (এইবারও বেশিরভাগই অমুসলিম) জড়ো হলেন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং নিহতদের আত্মার প্রতি সমবেদনা জানাতে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেছেন, "আমরা তোমাদের পাশে আছি। ৩৬ মিলিয়ন হৃদয় তোমাদের সাথেই ভেঙেছে। আমরা তোমাদের সাথেই শোকাহত হবো, তোমাদের প্রতিরক্ষা করবো, এবং আমরা তোমাদের পাশে দাঁড়াবো!"
এইটা আল্লাহর "সুন্নাহ" যে কেউ যখন কোন অস্ত্র দিয়ে কোন নির্দোষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে - আল্লাহ সেই অস্ত্র দিয়েই অত্যাচারীকে নাস্তানাবুদ করেন। তিনি শ্রেষ্ঠ কৌশলী, তিনি সর্বশক্তিমান। তবে শর্ত একটাই, ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করা যাবেনা। মুসলিমদের ডিসিপ্লিনড থাকতে হবে - যাই ঘটুক না কেন।
অন্যায়ের শিকার হওয়ায় এখন যে ভালবাসা পাচ্ছে, মানুষের অনেক ভ্রান্ত ধারণা ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে - সেসব ধরে রাখতে হলে কোন অবস্থাতেই ফাত্রামি করা যাবেনা।
এবং সেই সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভাইকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে! তিনি এমন না করলে আজও এয়ারপোর্টে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর সমার্থক শব্দটি "মুসলিম" ই থাকতো।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৫৮