কিছুদিন আগে আমার খুব প্রিয় এক বন্ধু আমাকে এক আর্টিকেল দিয়ে বলল, "ইন্টারেস্টিং! পড়ে দেখ।"
আর্টিকেলের বিষয় বস্তু হচ্ছে, কুরআন আসলে কোন ঐশ্বরিক বাণী নয় - উহা মানব রচিত একটি গ্রন্থ মাত্র। মানে - মুহাম্মদ (সঃ) হচ্ছেন দ্য সুপার জিনিয়াস অথার অফ দ্য বুক।
যদিও তিনি নিজে এই মোস্ট ক্লাসিক্যাল বুক ইন দ্য হিস্ট্রি অফ ম্যান কাইন্ডের লেখক হবার কৃতিত্ব নাকচ করে দেন। এবং এও নির্দেশ দেন - যদি কেউ মনে করে এটি তাঁর রচিত গ্রন্থ - তাহলে সে তাঁর ফলোয়ারই নয়। মানে, কাফের (অবিশ্বাসী), মুশরেক, মুরতাদ ইত্যাদি।
তা - অনেকেই অনেক যুক্তি দিয়েছেন। আমি নিজেও অনেক উদাহরণ দিয়েছি আগের লেখাগুলোতে কেন এটি কোন মানুষের পক্ষ্যে লেখা সম্ভব না।
আসলে "লেখা" শব্দটি এখানে ব্যবহার করা ঠিক হবেনা। চরম অবিশ্বাসীও (যদি সে সামান্যতমও জ্ঞানী হয়ে থাকে) জানে যে কুরআন ওরাল ট্র্যাডিশনের মাধ্যমে ২৩ বছর ধরে নাজেল হয়েছে - এবং সেভাবেই সংরক্ষিত হয়ে এসেছে। লিখিতাকারে প্রথম সংরক্ষন শুরু হয় হজরত মুহাম্মদের (সঃ) মৃত্যুর পরে।
এখন এই গ্রন্থ নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলে, বিশেষ করে এর সুরাহ গুলোর রচনা শৈলী (Ring structure) উপলব্ধি করলেই বুঝতে পারবেন লিখিতাকারেই এটি মানুষের পক্ষ্যে রচনা অসম্ভব - মৌখিকভাবে বললেতো রীতিমতন অবিশ্বাস্য একটি ব্যাপার। তাও আবার বিনা এডিটিংয়ে। মানে যা একবার বলা হয়ে গেছে, ব্যস হয়ে গেছে। সেটাতে একটি শব্দও এদিক ওদিক করা যাবেনা।
তা যাই হোক। সেটা অন্যান্য দিনে আলোচনা করা যাবে। আপাতত ছোট একটি ঘটনা বলে কথা শেষ করি। ইন্টারেস্টিং আছে। জেনে নিতে পারেন।
আমাদের যুগের মহা পন্ডিতদের সমস্যা হচ্ছে তারা ১৪০০ বছর আগের আরব মরু সমাজকে আধুনিক পৃথিবীর সাথে তুলনা করে ফতোয়া জারি করে দেন। এমনভাব যেন মুহাম্মদ (সঃ) একবিংশ শতাব্দীর অ্যামেরিকায় পদার্পন করেছিলেন এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করে, আইভি লীগের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে তেরো চৌদ্দটা পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে পাশ করে একদিন বিপুল আয়োজনের মাধ্যমে গ্রন্থ রচনা শুরু করেন। এবং তারপর নানান এডিটিংয়ের পরে ফিনিশড প্রোডাক্টের নাম দেন আল কুরআন।
সঠিক ঘটনা হলো, জ্বি না। আপনি না চাইলেও এইটা আপনাকে মানতেই হবে যে তিনি ইন্টারনেটের যুগে জন্ম নেন নাই। তাঁর যুগে লেখার কাগজও সুলভ ছিল না। সমস্ত আরব অঞ্চলে একটিও লাইব্রেরি ছিল না। মক্কা সেই যুগের আধুনিক সভ্যতা রোমান কিংবা সাসানীদ সুপার পাওয়ার থেকে বিচ্ছিন্ন একটি অঞ্চল ছিল। এবং সবচেয়ে বড় কথা - তিনি অক্ষরজ্ঞানহীন একজন এতিম রাখাল বালক ছিলেন। বর্তমান যুগের ব্রাজিলিয়ান অ্যামাজান বনের সভ্যতা বিচ্ছিন্ন জংলী সমাজের সাথে আরব সমাজের তুলনা করা যায়। ওদের কারোর পক্ষে যেমন প্রথম-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নির্ভুল বর্ণনা করা একটি অতিমানবীয় ব্যাপার - তেমনি মুহাম্মদের (সঃ) কুরআন অবতরণও তাই। যে মক্কায় কোন ইহুদি বসতি ছিল না, ছিল না কোন খ্রিষ্টান স্কলার, তখন পর্যন্ত বাইবেল আরবিতে অনুবাদ করা হয়নি - সেখানে বসে তিনি মুসা(আঃ), ইউসুফ (আঃ) থেকে শুরু করে ঈসা নবীর (আঃ) বর্ননা পর্যন্ত নির্ভুলভাবে বলে গেলেন। কিভাবে বললেন, সেটার কোন ব্যাখ্যা নেই।
সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ঘটনাটা এখন বলছি।
প্রতিটা মুসলিম জানেন যে হজরত ঈসা (আঃ) (যীশু খ্রিষ্ট) একদম শিশু অবস্থায় মায়ের কোল থেকে কথা বলে উঠেছিলেন (Spoke from cradle)। আমরা এটিকে ঈসা (আঃ) নবীর একটি মিরাকেল হিসেবে ধরি। কুরআন সেটাই আমাদের জানিয়েছে। কুরআন এও জানিয়েছে যে তিনি মাটির ঘুঘু পাখি বানিয়ে তাতে ফুঁ দিতেন, এবং পাখি জীবন্ত হয়ে ডানা মেলে আকাশে উড়ে যেত। ঈসা নবীর (আঃ) এ আরেক মিরাকেল।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, একটা সময়ে খ্রিষ্টানরা এটি নিয়ে খুব হাসাহাসি করতো। তাঁদের কথা, "আমগো প্রভুরে আমগো থেইকা তোমরা বেশি চিন?"
এবং এই মাত্র দেড়শো বছর আগে ইজিপ্টে মাটি খুঁড়ে একটি আশ্রম আবিষ্কৃত হলো। যেখানে চতুর্থ শতাব্দীর একজন সন্ন্যাসীর কফিনবদ্ধ লাশ পাওয়া গেল। এবং সেই কফিনের ভিতরে লাশের সাথে বেশ কিছু গস্পেলস (Gospels) পাওয়া গেল, যেগুলোতে লেখা আছে ঈসা (আঃ) নবী জন্মের পরপরই শিশু অবস্থায় কথা বলে উঠেছিলেন। এবং তিনি মাটির পাখিতে ফুঁ দিয়ে তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সন্দেহ হলে গুগল করে গস্পেলস অফ সেইন্ট থমাস পড়ে নিন। কিংবা বই হিসেবে কিনে নিন। মজা পাবেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, খ্রিষ্ট ধর্মের এত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় কেন হারিয়ে গিয়েছিল?
উত্তর হচ্ছে, কনস্টেন্টিন। রোমান বাদশাহ যখন খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিল - তখন সে নিজের সুবিধা মতন গস্পেলসগুলো রেখে বাকিগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। এবং তার প্রদত্ত খ্রিষ্টান ধর্ম যারা পালন করতো না, তাদের সে রোম সাম্রাজ্যেই থাকতে দিত না।
সেন্ট থমাসের গস্পেল সেই হারিয়ে যাওয়া অসংখ্য গস্পেলগুলোর একটি মাত্র।
লক্ষ্য করুন। চতুর্থ শতাব্দীতেই সেই সন্ন্যাসী নিজের কবরে সত্যকে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাইরের পৃথিবীর কেউ তা জানতো না। দুইশ বছরেরও বেশি সময় পরে আরবের এক অক্ষরজ্ঞানহীন রাখাল বালকেরতো জানার প্রশ্নই উঠেনা। এবং খ্রিষ্টান পন্ডিতদের হাসাহাসি উপেক্ষা করেও সেই ভদ্রলোক নিজের প্রচারিত বাণী ফিরিয়ে নেননি। তিনি জানতেন - এই বাণীর আসল মালিক কারও উপহাসের ধার ধারেন না। একদিন সত্য প্রকাশিত হবেই। না হলেও কিছু আসে যায়না।
তো যা বলছিলাম। কেউ আমাকে এই গস্পেলস অফ সেন্ট থমাসের ঘটনাটা কোরআনে কিভাবে এলো বুঝিয়ে দিতে পারলে আমি সেই আর্টিকেল নিয়ে আর কোন তর্ক বিতর্কে জড়াবো না। ধরে নিব মুহাম্মদ (সঃ) ইজ দ্য সুপার জিনিয়াস অথার অফ অ্যান এক্সট্রা অর্ডিনারি বুক কল্ড কুরআন। কোন ওহী তাঁর উপর নাজেল হয়নি।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০০