somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামি তরিকায় শিক্ষককে শাস্তি

১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি উইকেন্ডে ইন্টারনেট ব্যবহার করিনা। ফেসবুক, দেশীয় পত্রিকা, ইউটিউব-নেটফ্লিক্স - কিচ্ছু না। ঐ সময়টা আমার পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত। আমার ছেলে আমার কোলে খেলে - এই আমার জন্য যথেষ্ট বিনোদন। পৃথিবীতে আমার আর কিছুর দরকার নেই।
মাঝে মাঝে ইনবক্সের কিছু ম্যাসেজ দেখি - তাও খুব বেশি জরুরী না হলে উত্তর পর্যন্ত দেইনা। সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করি।
তা উইকেন্ডে আমার এক ছোট ভাই আমাকে ইনবক্সে একটা খবর জানালো।
খবরটা পড়েই মনটা তিতা হয়ে গেল। এখনও তিতকুটে ভাব যায়নি।
নারায়নগঞ্জে সাংসদের উপস্থিতিতে শিক্ষককে কানে ধরে উঠবস করানো হয়েছে। অভিযোগ, একজন "হিন্দু" হয়ে ধর্মকে নিয়ে কটুক্তি করেছে। যদিও শ্রদ্ধেয় শিক্ষক বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। এবং আমি শিক্ষককে বিশ্বাস করি। কারন ব্যপারটা খুবই স্বাভাবিক। এইটা ফ্যাক্ট যে আবহমান কাল থেকেই আমাদের বঙ্গভূমিতে একদল আহাম্মকের বাস। এই কারনেই "পন্ডশ্রম" বা "কান নিয়েছে চিলে" কবিতাটি বঙ্গদেশেরই একজন কবির রচনা। এই দেশের লোকেদের একটা ভাল কাজের জন্য ডাকুন, কারও নড়নচরন টের পাবেন না। অথচ আজাইরা মিথ্যা একটা গুজব ছড়িয়ে দিন, তাহলেই দেখবেন বীর বাঙালি কিভাবে ঝাপিয়ে পরে। এবং গুজবটি যদি ধর্ম অবমাননার হয়, তাহলেতো কথাই নেই।
পিচগলা গরমে পাঁচ টাকা ভাড়া বেশি চাওয়ায় রিক্সাওয়ালাকে বেদম প্রহার করা "মানবতার পুজারী" ব্লগে ধর্মের গুষ্ঠী উদ্ধারে ঝাপিয়ে পরেন।
আবার একই সাথে শুক্রবারের জুম্মা, এবং রমযান মাসের তারাবির প্রথম আট রাকাত ছাড়া নামাজেই না দাঁড়ানো বাঙালি ধর্ম রক্ষার কাজে অন্যের সম্পত্তি ভাংচুর করে, অন্যের ঘাড়ে কোপাকুপি করে, সবই "অন্যের" উপর দিয়েই চালিয়ে যায়।
এখানেও "হয়তো" শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের সাথে কোন এক জানোয়ারের ব্যক্তিগত আক্রোশ ছিল, তারই শোধ নিতে একটি গুজব ছড়িয়ে সে এই কান্ড ঘটিয়েছে।
শিক্ষক যেহেতু "হিন্দু" কাজেই পেট্রল আগে থেকেই তৈরীই ছিল - কেবল দেয়াশলাই জ্বালাতে হয়েছে আরকি।
এতক্ষণ আমি বেনিফিট অফ ডাউট দিলাম শিক্ষককে। তাঁকে নির্দোষ ধরেই সবকিছু বললাম। কিন্তু যদি তিনি দোষী হন? যদি তিনি আসলেই ধর্মকে অবমাননা করে থাকেন - তাহলে?
তারপরেও তাঁকে কানে ধরে উঠবসের অনুমতি আপনাকে দেয়া হয়নি। রেফারেন্স লাগবে? আবারও নবীজির (সঃ) জীবনী।
ইসলামের একদম শুরুতে মুসলিম সাহাবীরা নানান ধরনের অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন। ফিজিকাল অত্যাচার যেমন ছিল, তেমনি ছিল মানসিক অত্যাচার।
"সন্তান ইসলাম ত্যাগ করে পৌত্তলিকতায় ফেরত না আসা পর্যন্ত মা কিছু মুখে তুলবেন না" - এমন ধর্মসংকটেও এক সাহাবীকে পরতে হয়েছিল।
সেই সাহাবী পরম বিরক্ত হয়ে মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করলেন। নবীজি (সঃ) সেই কথা শোনার পর কী বললেন?
"যদি তোমাদের মা বাবা ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু করতে বলেন সেটা করো না - তবে কোন অবস্থাতেই মা বাবার সাথে দুর্ব্যবহার করো না।"
আল্লাহ সেটা কুরআনে রিকনফার্ম করলেন, "তাঁদের প্রতি 'উফ' শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারন করোনা।"
মানে মা বাবার প্রতি ভুরু কুঁচকে সামান্য বিরক্তি প্রকাশ করার পর্যন্ত অধিকার নেই। মা বাপকে গালাগালি, বেয়াদবি কিংবা বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে আসাতো বহু দূর কি বাত!
"ইয়া রাসুলাল্লাহ (সঃ)! যদি আমাদের মা বাবা আপনার এবং আল্লাহর নামে কটুক্তি করে, তারপরেও?"
নবীজি (সঃ) বললেন, "যদি তোমাদের মা বাবা আমার এবং আল্লাহর নামে কটুক্তি করে, তারপরেও।"
আমরা জানি পিতা মাতার পরেই শিক্ষকের স্থান। কিছুদিন আগে আমরা এক শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা করেছি - এখন আরেক শিক্ষককে কানে ধরে উঠবোস করিয়েছি। যিনি কিনা আবার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক! ওয়াহরে ওয়াহ বাঙালি! আমাদের দিয়েই হপে!
"শিক্ষার গুরুত্ব" নিয়ে আরেকটি ঘটনা।
বদর যুদ্ধের সময়ে যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে দুইজন মুশরিককে পাওয়া গিয়েছিল যারা লিখতে ও পড়তে জানতেন। নবীজি (সঃ) তাঁদের বললেন, "তোমরা একেকজন আমাদের দশটি করে শিশুকে লেখাপড়া শিখিয়ে দাও, কোন মুক্তিপণ ছাড়াই তোমাদের মুক্তি দেয়া হবে।"
উল্লেখ্য, প্রতিটা যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিপণ ছিল তখনকার দিনেই কয়েক হাজার রৌপ্য মুদ্রা, বর্তমান বাজারে মিলিয়ন ডলারের বেশি। মাত্র দশটি শিশুর অ, আ, ক, খ পড়তে ও লিখতে পারার মূল্য নবীজির (সঃ) কাছে সেই মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এবং তারচেয়েও বড় কথা, সেইসব শিশুদের "শিক্ষকদের" সম্মানের সহিত মুক্তি দান - যদিও এরাই মাত্র কয়েকদিন আগে তলোয়ার হাতে তাঁর বিরুদ্ধেই লড়েছিলেন।
আমরা কী করি? সাংসদের উপস্থিতিতে শিক্ষককে কানে ধরে উঠবোস করাই। মোবাইল ফোনে ভিডিও রেকর্ড করি। মাঝে মাঝে "জয় বাংলা" স্লোগান দেই!
আজকাল "জয় বাংলা" বললেই সব হালাল হয়ে যায়। সেই সাথে "ধর্মের নামে কটুক্তি করেছে" বললেতো কথাই নেই।
আমরা বারবার ভুলে যাই, আমাদের প্রতিটা কর্মের দ্বারাই আমাদের নবীজি (সঃ) এবং আল্লাহর সাথে মানুষ পরিচিত হয়।
একটি ধবধবে সাদা কাপড় কেউ লক্ষ্য করেনা, কিন্তু সেই কাপড়ে ছোট একটা কালো দাগ সবার নজরে পরে।
কাউকে এমনটা বলতে শুনবেন না "ওরা নিজের সম্পত্তির আড়াই ভাগ দান করে দেয়? ওরা ক্ষুধার্তের মুখে খাবার তুলে দেয়া নিশ্চিত করে? ওরা কারও উপকার করে প্রতিদান আশা করেনা? কারা ওরা? মুসলিম? বাহ চমৎকার!"
বরং এইটা খুবই কমন, "ওরা শিক্ষককে হত্যা করে? কিংবা কানে ধরিয়ে উঠবোস করায়? তাঁদের নেতা কে? কার নির্দেশ তাঁরা মেনে চলে? মোহাম্মদ? আল্লাহ? ও আচ্ছা! তাহলেতো অবাক হবার কিছু নেই!"
- এই হচ্ছে বর্তমান দৃশ্যপট।
তারপরেও বেকুব আহাম্মকের দল একই ভুল বারবার করতে থাকে। বারবার।
এবং "ভুল" যদি একাধিকবার করা হয়, সেটা আর ভুল থাকেনা, "অপরাধ" হয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:২২
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×