ছোটবেলা থেকেই শিখে এসেছি শিক্ষক পিতার সমান।
স্কুলে স্যারদের হাতে অনেক মার খেয়েছি।
আমাদের এক স্যার ছিলেন যিনি চুলের জুলফি ধরে টেনে শুন্যে ভাসিয়ে দিতেন। কী ভয়ংকর শাস্তি! সেই স্যারের ছেলের যখন ক্যান্সার হলো, ভিখিরির মতন মানুষের কাছে হাত পেতেছি যদি কিছু টাকা তুলে স্যারের কাছে পাঠানো যায়! স্যারের ঋণ শোধ জীবনেও সম্ভব নয়, তবু যদি স্যারের সবচেয়ে বড় বিপদে কিছুটা হলেও পাশে থাকা যায়!
পিঠে ভাল করে দেখলে এখনও যার বেতের দাগ খুঁজে পাওয়া যাবে, সেই শাহীন স্যার আমাদের মাঝে নেই - এই কথাটা এখনও বিশ্বাস করতে পারিনা। স্কুল জীবনের সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষকদের তালিকায় তাঁর অবস্থান নিঃসন্দেহে অনেক উপরের দিকে।
স্যারদের থেকে বেশি মার খেয়েছি টিচারদের হাতে। অথচ স্কুলের সবচেয়ে কড়া শিক্ষিকা মীরা টিচারের মৃত্যু সংবাদ যেদিন শুনেছি, আমি সারা সকাল হাউ মাউ করে কেঁদেছি। শেষ এমনভাবে কেঁদেছিলাম আমার নানীর মৃত্যু সংবাদে। তার আগে নিজের বাবার মৃত্যুদিনে।
আজকে দেখলাম দেশের একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মৃতবস্থায় উপুর হয়ে পরে আছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আমার বাবার বিশ্ববিদ্যালয়। আমার মতন পিতৃভক্ত ছেলের হৃদয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি বিশেষ স্থান আছে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক - যিনি ছাত্রদের কাছে পিতার সমান - এইভাবে মরে পরে থাকতে দেখে খুবই খারাপ লাগছে। মনে হলো যেন আমার বাবা সেখানে শুয়ে আছেন। আমার ড্রিম জব ছিল অধ্যাপনা, হতে পারিনি, সেটা নিয়তি। কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো, আমি নিজে পরে আছি সেখানে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়েতো এটাই প্রথম শিক্ষক হত্যা নয়। ২০১৪তে একবার হয়েছে। ২০০৬ এও একবার হয়েছে। তারও আগে ২০০৪ এ একবার হয়েছে। এইবার হলো ২০১৬তে। হয়তো আগামীকালই আবার হবে। হয়তো দুই বছর পর আবার হবে। হত্যাকান্ড চলতেই থাকবে।
যে জাতি নিজের পিতাদের কুপিয়ে হত্যা করে, তাদের ভবিষ্যত কী?