বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মদ ﷺ। ।
কারো সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়া, কারো সন্তানদের অধিক সাফল্য যেমন ভাল জায়গায় পড়ালেখা করা, উন্নত বেতনের চাকরী পাওয়া, কারো ব্যবসায় উন্নতি হওয়া প্রভৃতি ইত্যকার বিষয় দেখে আমরা অনেকেই মন্তব্য করি, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট! নতুবা আমি এত নামাজ পড়েও সাফল্য পাই না আর সে কিনা মাঝে মাঝে নামাজ পড়েই এত এত সাফল্য পাচ্ছে। আচ্ছা তাই যদি হয় তাহলে একটু ভাবুন তো, চেয়ে দেখুন আল্লাহতে অবিশ্বাসীরা তো আরো বেশী পার্থিব সাফল্যে ভরপুর যেমন: ব্যবসায় অনেক অর্থকরি উপর্জন করছে, উন্নত বেতনের চাকরী করছে উদাহরণ স্বরুপ বাংলাদেশে ক্রিকেট টিমের কোচ জেমি সিডন্স যার বেতন মাসে আট হাজার মার্কিন ডলারের উপরে! আল্লাহতে অবিশ্বাসীরা উন্নত টেকনলজি ব্যবহার করছে----- আমাদের চেয়ে তারা ভাল অবস্থা সম্পন্ন তাহলে কি তাদের উপরও আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট?!! আল্লাহ তাআলা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট নাকি অসন্তুষ্ট এটা বুঝার মাপকাঠি কি এগুলো? নাকি অন্যকিছু? আপনি কি করে বুঝবেন? সেই বিষয়েই কিছুটা আলোকপাত করব, ইনশাল্লাহ বিষয়টি আমাদের বোধগম্য হবে।
আল্লাহ তাআলা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট কিনা তা বুঝার কতগুলো চিহ্ন বা উপায় রয়েছে। এই চিহ্ন বা উপায়গুলো আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলে দিয়েছেন। উদাহরণ স্বরুপ, আল্লাহ যার প্রতি সন্তুষ্ট হন তাকে তিনি আরো অধিক ইবাদত করার উপায় খুলে দেন আর তার অন্তরে তিনি ভয় দান করেন যার ফলে সে হারাম তথা নিষিদ্ধ কাজ থেকে তাকে বিরত থাকেন, সেই ব্যক্তি তার সামনে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হারাম তথা নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হন না। আল্লাহ তাআলা বলেন -
“যারা সৎপথে চলবে, আল্লাহ তাআলা তাদের এ (সৎপথে) চলা আরো বাড়িয়ে দেন এবং তাদের (অন্তরে) তিনি তাঁর ভয় দান করেন”। (সূরা মুহাম্মদঃ ৪৭)
“যারা আমারই পথে প্রাণপণে চেষ্টা করে, আমি অবশ্যই তাদের আমার পথে পরিচালিত করি” (আমার পথে - ইসলামের দিকে, তাওহীদের দিকে) (সূরা আনকাবূতঃ ৬৯)
আর যারা ভালো কাজ থেকে বিরত থাকে আর হারাম কাজে লিপ্ত হয় তাহলে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই এমন অবস্থা থেকে কারণ আল্লাহ তাআলা তাদের উপর অসন্তুষ্ট।
আল্লাহ তাআলা তাঁর বই কুরআনে আরো বলেছেন, যখন তিনি কারো প্রতি সন্তুষ্ট হন তখন তিনি তার হৃদয়কে খুলে দেন ইসলামকে বুঝার জন্যে, ইসলামের পথে চলার জন্যে আর যার প্রতি তিনি অসন্তুষ্ট তিনি তার হৃদয়ে বক্রতা তৈরী করে দেন যার ফলে সে ইসলামের বিপরীত পথে চলা শুরু করে, ইসলাম থেকে তার দূরত্ব দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“আল্লাহ তাআলা কাউকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাইলে তিনি তার হৃদয়কে ইসলামের জন্যে খুলে দেন, (আবার) যাকে তিনি বিপথগামী করতে চান তার হৃদয়কে অতিশয় সংকীর্ণ করে দেন, (তার পক্ষে ইসলামের অনুসরণ করা এমন কঠিন হয়) যেন কোন একজন ব্যক্তি আকাশে চড়তে চাইছে, আর যারা (আল্লাহর উপর) বিশ্বাস করে না, আল্লাহ তাআলা এভাবেই তাদের উপর নাপাকী ছেয়ে দেন”।(সূরা আনআমঃ ১২৫)
ইবনে আব্বাস (রা) “আল্লাহ তাআলা কাউকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাইলে তিনি তার হৃদয়কে ইসলামের জন্যে খুলে দেন” - এই আয়াত সম্পর্কে বলেন, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির হৃদয়কে খুলে দেন, যার ফলে সে তাওহীদে দৃঢ় বিশ্বাসী হয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর)
রাসূল ﷺ বলেছেনঃ “যখন আল্লাহ তাআলা কোন বান্দাহ’র ভালো চান তখন তিনি তার জন্যে ইসলামকে বুঝা সহজ করে দেন”। (সহীহ বুখারী)
আমাদের নিয়ত যদি সহীহ হয়, আমরা যদি সত্যিই সৎপথে চলতে চাই তাহলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই আমাদের জন্যে ইসলামের পথে চলাকে সহজ করে দিবেন, ইসলামে বুঝা সহজ করে দিবেন। আমরা আরো বেশী বেশী ভালো কাজ করতে পারব। একটু ভেবে দেখুন, আপনি যখন নামায আদায় করছেন আপনি কি ভেবে দেখেছেন আল্লাহ তাআলা আপনাকে কতটা ভালবাসছেন কারণ অনেক মানুষ সামর্থ থাকা সত্ত্বেও নামাজ পড়ছে না, কিন্তু আপনাকে আল্লাহ তাআলা নামাজ পড়ার তৌফিক দিয়েছেন, আপনাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর জন্যে আপনাকে নামাজ পড়ার তৌফিক দিয়েছেন। কারণ যারা নামাজ পড়বে না তাদের তো চিরদিন জাহান্নামে থাকতে হবে! কাজেই পার্থিব সাফল্য আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ নয় আল্লাহ সন্তুষ্টি তো সেখানেই যখন আমরা আরো বেশী ইসলামের পথে নিজেদের পরিচালিত করব, আরো অধিক আল্লাহর আনুগত্য করব যেমন ‘আমাদের পরবর্তী দিনটি যেন পূর্ববর্তী দিনটির চেয়ে আরো অধিক আল্লাহর আনুগত্যে ভরপুর থাকে’।
হে আল্লাহ! আমাদের হৃদয়কে ইসলামের জন্য খুলে দাও, আমরা যেন আরো অধিকহারে সর্বক্ষেত্রে তোমার আনুগত্য করতে পারি। আমাদের তুমি সত্য পথ চোখের সামনে উদ্ভাসিত হওয়ার পরও তা থেকে বিরত থাকা থেকে হিফাজত কর। আমাদেরকে সত্য পথে অবিচল রাখ যে পর্যন্ত না আমরা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করি। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৩৫