দুপুরে চালতাবন থেকে দু'টি চালতা কুড়িয়ে এনে মাকে দিয়েছিলাম র্ভতা করার জন্য , মা করে দিল আর বার বার করে বললো:- তোর কোন কিছুতেই সয় না ? এখনি দিতে হবে যেন । জানি মায়ের হাতেঁ প্রচুর কাজ, হলুদঁ ভেটে ভেটে হলুদ ঘামে একাকার আর গজর গজর করা মহিলা মানুষরা যেমন । তখন ১৯৮৮ হবে সবে বন্যায় ডুবিয়ে নিয়ে গেল, এরই মধ্য বাবা চাকুরী হারালো মার অন্যায় আবদার গুলোও কমে এলো , আমার স্কুলে যাওয়া থেমে গেল । আমাদের গ্রামীণ স্কুল যেমন হতো একই ক্লাসে বার বার পড়ার অভ্যাশ কতজনের যে ছিল , সেকেলে নকলের প্রচলন প্রচন্ড থাকলেও রাশি রাশি এত ফাস্ট ডিভিশন ছিল না । ঘরের চালও এক সময় ফুরিয়ে যেতে লাগলো , পর বাবাই বললো -কাঠের ব্যবস্যা করলে কেমন হয় ? জঙ্গল থেকে গাছ-কাঠ এনে যদি বিক্রি করি ? এরপর আমি, মা,বাবা প্রতিদিন ৪ ক্রোশ হেটেঁ বনে যেতাম কাঠ জোগার করতে ,প্রতিদিন অল্প অল্প করে কাঠ যোগার করতাম ৭দিন পর সেগুলো এক ফার্নিচার কম্পানির কাছে বিক্রি করলাম ,দাম ভালোই পেলাম ! এভাবে কিছুদিন ভালোই যাচ্ছিলো, আমাদের কাঠের কাজ দেখে অনেকেই তখন ও ব্যবস্যায় নেমে পড়লো তবে আমরা একটু সুবিধে বেশি পেতুম ফার্নিচার কম্পানির কাছে আগে এসেছি বলে । এরপর একদিন কাঠ কাটতেঁ যেয়ে পুলিশের কাছে গ্রেফতার হলুম , এলাকার কিছু লোকরাই আমাদের ধরিয়েছে বুঝলুম ! সরকারী গাছ কাটিঁ -বলে! পুলিশকে কত বুঝালো বাবা -যেখানে এত দারিদ্রতা মানুষ খেতে পারে না -গাছ কেটে যদি মানুষের খাদ্য হয় অন্যায় কোথায় আমরাও তো দেশের অংশ সরকারের অংশ ? পুলিশ কিছুই শুনলো না দশদিন আমরা জেলেঁ ছিলুম ! দশদিন পর এসে দেখি বাসাতেও আর কিছু নেই চুরি করে মানুষ টিনের চালও নিয়ে গেছে ! দরজা-জানালও নেই, চৌকিও নিয়ে গেছে । এরপর বাবা বললো- শহরে যামু, সবাই মিলে শহরে এলুম , সকালে উঠে বাবা কোথায় যেন উদাও হয়ে যেত সন্ধ্যার পর ভাড়া বাড়ি ফিরে আসতো , বাবা কখনো বলেনি সে কি কাজ করতো তখন , আমিও জানতে চাইনি ! ঢাকায় এসে এক বছর পর আবার স্কুল শুরু করলাম , আমার নুতন যে সব বন্ধু তৈরী হতো ওদের অনেকের মা নেই বাবা নেই এমন । ফারুক নামের একটি ছেলেছিল আমার সবচেয়ে কাছের, ওর সাথেই বেশি চলাচল ছিল আমার ওদের বাসায় যাইতাম মাঝে মাঝে , ফারুক আর ফারুকের দু'বোন থাকতো । ছোটবোন আর বড়বোন । হঠাৎ করে বাবারও কি যেন পদউন্নতি হলো, তখন আরো ভালোবাসা ও ভালোস্কুলে ভর্তি হলুম তবুও ফারুকের সাথে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হতো ।
আমার ভালোই চলছিল কিন্তু বাবা দিন দিন কেমন জানি হয়ে যাচ্ছিলো , মাঝে মাঝে রাত্রিরে বাসায় ফিরতো না । মার -সাথে বাবার ঝগড়া হতো শুনতুম । যাইহোক স্কুল পেড়িয়ে কলেজে ভর্তি হলুম -নানা বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সিগারেট ধরলুম,মদ ধরলুম ,মেয়ে মানুষ ধরলুম । ঢাকার এক আবাসিক হোটেলে গেলুম, সেখানে ফারুকের ছোটবোনকে দেখে ও মুখলোকালো আমি দৌড়িয়ে বের হওয়ার সময় একজনের সাথে ধাক্কালেগে পড়ে গেলাম পর দেখি দু'জন মেয়েছেলে বলাবলি করছে স্যারকে ধাক্কা দিয়ে চলে যাও দেখে চলতে পারো না ? পিছনে ধাক্কা হওয়া লোককে দেখতে যয়ে দেখি বাবা ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে । এরপর বাবার কাছে কোনদিন তার ব্যবস্যার কথা জানতে চাইনি, বাবাও আমাকে কিছু বলেনি । আমি জানি দারিদ্য শ্রেনীকে উঠতে গেলে বিবেক বিসর্জন দিয়েই উঠতে হয় । এরপর আমাদের অনেক টাকা হলো, ঢাকায় নিজেদের বাড়ি হলো,গাড়ি হলো ,শিক্ষা,ডিগ্রি হলো । একদিন বাবার পুরনো ডাইরীটি পড়েছিলাম খুলেঁ--তাতে তার প্রতি আরো নরম হলুম কোনদিন অভিযোগ ছিল না আমার , তার ডাইরীর পাতায় একজন নারীর কথা লেখা নাম ফরিদা , ফরিদা দাদকে বলছে-" নিসঙ্গ নিসঙ্গ মানুষের অর্থবুঝে " বাবা বললো ফরিদাকে " পৃথিবীর সবচেয়ে মানবীক ও প্রাচীন পেশা হলো এটা " তাছারা আমার এখানে কাউকে জোর করে আনিনি, যে যার সেচ্ছায় আসে -সেচ্ছায় চলে যায় , আর পৃথিবীতে শুদ্ধত বলতে কিছু নেই "
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৬ রাত ২:৩৬