somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাত্রির গল্প ।

১৯ শে মে, ২০১৬ রাত ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




দুপুরে চালতাবন থেকে দু'টি চালতা কুড়িয়ে এনে মাকে দিয়েছিলাম র্ভতা করার জন্য , মা করে দিল আর বার বার করে বললো:- তোর কোন কিছুতেই সয় না ? এখনি দিতে হবে যেন । জানি মায়ের হাতেঁ প্রচুর কাজ, হলুদঁ ভেটে ভেটে হলুদ ঘামে একাকার আর গজর গজর করা মহিলা মানুষরা যেমন । তখন ১৯৮৮ হবে সবে বন্যায় ডুবিয়ে নিয়ে গেল, এরই মধ্য বাবা চাকুরী হারালো মার অন্যায় আবদার গুলোও কমে এলো , আমার স্কুলে যাওয়া থেমে গেল । আমাদের গ্রামীণ স্কুল যেমন হতো একই ক্লাসে বার বার পড়ার অভ্যাশ কতজনের যে ছিল , সেকেলে নকলের প্রচলন প্রচন্ড থাকলেও রাশি রাশি এত ফাস্ট ডিভিশন ছিল না । ঘরের চালও এক সময় ফুরিয়ে যেতে লাগলো , পর বাবাই বললো -কাঠের ব্যবস্যা করলে কেমন হয় ? জঙ্গল থেকে গাছ-কাঠ এনে যদি বিক্রি করি ? এরপর আমি, মা,বাবা প্রতিদিন ৪ ক্রোশ হেটেঁ বনে যেতাম কাঠ জোগার করতে ,প্রতিদিন অল্প অল্প করে কাঠ যোগার করতাম ৭দিন পর সেগুলো এক ফার্নিচার কম্পানির কাছে বিক্রি করলাম ,দাম ভালোই পেলাম ! এভাবে কিছুদিন ভালোই যাচ্ছিলো, আমাদের কাঠের কাজ দেখে অনেকেই তখন ও ব্যবস্যায় নেমে পড়লো তবে আমরা একটু সুবিধে বেশি পেতুম ফার্নিচার কম্পানির কাছে আগে এসেছি বলে । এরপর একদিন কাঠ কাটতেঁ যেয়ে পুলিশের কাছে গ্রেফতার হলুম , এলাকার কিছু লোকরাই আমাদের ধরিয়েছে বুঝলুম ! সরকারী গাছ কাটিঁ -বলে! পুলিশকে কত বুঝালো বাবা -যেখানে এত দারিদ্রতা মানুষ খেতে পারে না -গাছ কেটে যদি মানুষের খাদ্য হয় অন্যায় কোথায় আমরাও তো দেশের অংশ সরকারের অংশ ? পুলিশ কিছুই শুনলো না দশদিন আমরা জেলেঁ ছিলুম ! দশদিন পর এসে দেখি বাসাতেও আর কিছু নেই চুরি করে মানুষ টিনের চালও নিয়ে গেছে ! দরজা-জানালও নেই, চৌকিও নিয়ে গেছে । এরপর বাবা বললো- শহরে যামু, সবাই মিলে শহরে এলুম , সকালে উঠে বাবা কোথায় যেন উদাও হয়ে যেত সন্ধ্যার পর ভাড়া বাড়ি ফিরে আসতো , বাবা কখনো বলেনি সে কি কাজ করতো তখন , আমিও জানতে চাইনি ! ঢাকায় এসে এক বছর পর আবার স্কুল শুরু করলাম , আমার নুতন যে সব বন্ধু তৈরী হতো ওদের অনেকের মা নেই বাবা নেই এমন । ফারুক নামের একটি ছেলেছিল আমার সবচেয়ে কাছের, ওর সাথেই বেশি চলাচল ছিল আমার ওদের বাসায় যাইতাম মাঝে মাঝে , ফারুক আর ফারুকের দু'বোন থাকতো । ছোটবোন আর বড়বোন । হঠাৎ করে বাবারও কি যেন পদউন্নতি হলো, তখন আরো ভালোবাসা ও ভালোস্কুলে ভর্তি হলুম তবুও ফারুকের সাথে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হতো ।
আমার ভালোই চলছিল কিন্তু বাবা দিন দিন কেমন জানি হয়ে যাচ্ছিলো , মাঝে মাঝে রাত্রিরে বাসায় ফিরতো না । মার -সাথে বাবার ঝগড়া হতো শুনতুম । যাইহোক স্কুল পেড়িয়ে কলেজে ভর্তি হলুম -নানা বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সিগারেট ধরলুম,মদ ধরলুম ,মেয়ে মানুষ ধরলুম । ঢাকার এক আবাসিক হোটেলে গেলুম, সেখানে ফারুকের ছোটবোনকে দেখে ও মুখলোকালো আমি দৌড়িয়ে বের হওয়ার সময় একজনের সাথে ধাক্কালেগে পড়ে গেলাম পর দেখি দু'জন মেয়েছেলে বলাবলি করছে স্যারকে ধাক্কা দিয়ে চলে যাও দেখে চলতে পারো না ? পিছনে ধাক্কা হওয়া লোককে দেখতে যয়ে দেখি বাবা ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে । এরপর বাবার কাছে কোনদিন তার ব্যবস্যার কথা জানতে চাইনি, বাবাও আমাকে কিছু বলেনি । আমি জানি দারিদ্য শ্রেনীকে উঠতে গেলে বিবেক বিসর্জন দিয়েই উঠতে হয় । এরপর আমাদের অনেক টাকা হলো, ঢাকায় নিজেদের বাড়ি হলো,গাড়ি হলো ,শিক্ষা,ডিগ্রি হলো । একদিন বাবার পুরনো ডাইরীটি পড়েছিলাম খুলেঁ--তাতে তার প্রতি আরো নরম হলুম কোনদিন অভিযোগ ছিল না আমার , তার ডাইরীর পাতায় একজন নারীর কথা লেখা নাম ফরিদা , ফরিদা দাদকে বলছে-" নিসঙ্গ নিসঙ্গ মানুষের অর্থবুঝে " বাবা বললো ফরিদাকে " পৃথিবীর সবচেয়ে মানবীক ও প্রাচীন পেশা হলো এটা " তাছারা আমার এখানে কাউকে জোর করে আনিনি, যে যার সেচ্ছায় আসে -সেচ্ছায় চলে যায় , আর পৃথিবীতে শুদ্ধত বলতে কিছু নেই "
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৬ রাত ২:৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×