আমরা মনে হয় সবচেয়ে বেশি শঠতা করে থাকি নিজের সাথেই।
এই দুর্মূল্যের বাজারে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ উর্দ্ধগতির সাথে তাল মিলিয়ে যেন মূল্যহীন হয়ে পড়ছে মানুষের জীবন, তার চেয়েও দ্রুত বেগে ঘটছে আমাদের মূল্যবোধের অধ:পতন আর অবক্ষয়। এসব কিছুর কারনেই হয়তো আমরা আজ শুধু বলার জন্য কথা বলি, কতোখানি মন থেকে বলি, কতোখানি সততা আর সত্য মেনে বলি তা নিতান্তই গৌণ এখানে।
আমাদের দেশের নেতা নেত্রী, শাসক গোষ্ঠি এই হঠকারিতায় সবচেয়ে এগিয়ে। আদর্শহীণতাই যেন তাঁদের আদর্শ!! মূল্যবোধহীন ব্যক্তিত্ত্বই তাঁদের সবচেয়ে বড় যোগ্যতা!
কেউ মুক্তিযুদ্ধ কে পূঁজি করে দেশবাসীর সাথে হঠকারিতা করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বোল তুলে মুখে ফেনা তুলে অথচ দেশপ্রেমের রেশ মাত্র নেই! ক্ষমতা আরোহনের ব্যর্থতা সইতে না পেরে নিমেষেই দেশের মর্যাদা ভূলিন্ঠিত করতে, দেশের অস্তিত্বকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে এতোটুকু দ্বিধা করেনা- দেশ বিদেশে ছুটে গিয়ে নিজের দেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে!! এমনই এদের মুক্তি যুদ্ধের চেতনা আর দেশ প্রেম!! শুধু তাই নয়, দলের নেত্রীকে দেশে ফিরতে দেয়া হবেনা শুনে মরিয়া হয়ে উঠে সকল সমর্থক। ছুটোছুটি শুরু হয় আমেরিকা, ইংল্যান্ডের ছোট বড় নেতানেত্রীদের কাছে করুণা ভিক্ষার জন্য! আবেগঘন কন্ঠে নেত্রী জানান, "জেল হবে, ফাঁসী হবে.. যা কিছুই হোক আমি মাথা পেতে নিবো। তবু দেশেই থাকবো, দেশের বাইরে নয়"। তাঁকে যখন দেশে ফিরতে দেয়া হলো, কারাগারে নেবার সাথে সাথেই অস্থিরতা শুরু হলো দেশ ত্যাগের, শেষ পর্যন্ত দেশ ত্যাগ করে শান্তি। শোনা যায় এখন আত্মীয় সজনদের বিয়ে সহ বিভিন্ন আনন্দ উৎসব উদযাপনে নেত্রীর ইউরোপ আমেরিকায় ঘুরে বেড়ানোর কথা। মিথ্যা বলায় পারদর্শীতা আর এই নির্লজ্জতাই হয়তো তাঁদের সবচেয়ে বড় শক্তি!!!
আরেকটি প্রধান দল ও নেতা কর্মীদের অবস্থা তথৈবচ! "জিয়ার আদর্শ" আর স্বপ্নের কথা বলে মুখে ফেনা তোলা দলটির নেতা কর্মীদের মাঝে দূর্নীতির নজিরবিহীন চর্চা! দেশের মানুষ সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজি থেকে মুক্তির লক্ষ্যে অনেক আশা নিয়ে দ্বিতীয়বার দলটিকে নির্বাচিত করে নেত্রীর সুকঠিন সংকল্প ও দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা রেখে! দেশের মানুষের আশা নর্দমায় ছুঁড়ে ফেলে শুরু হয় দূর্নীতি আর চাঁদাবাজির তান্ডব। বাবার সততার আদর্শকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে পুত্রের অসততার নজিরবিহীন প্রতিযোগিতা! দেশের সম্পদ পাচার আর দেশে ব্যবসায়ীরা জিন্মী হয়ে পড়েন এক আদর্শ পিতার কুপুত্রের লোভলালসার কাছে! (!)স্বল্পভাষী নেত্রী অক্টোপাস মাতার মতো চারপাশে হাতপা ছড়িয়ে মেতে উঠেন পুত্র দ্বয়ের কুকর্ম ও স্বার্থ রক্ষায়! সামরিক জান্তার প্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও যে মানুষ তাঁর নৈতিকতা আর সততা দিয়ে দেশের মানুষের মন জয় করেছিলেন, তাঁর পরিবারে যেন শুরু হয় নৈতিক স্খলনের এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতা। ক্ষমতার অবসান ঘটে, মসনদ থেকে সরা দাঁড়াতে হয়... ধর পাকড় শুরু হয় ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ও দূর্নীতিবাজদের। গণতান্ত্রিক দেশে শাসক মহলে পারিবারিকধারার কুফলের কারণে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। দেশের মানুষ সরাসরি নেতৃদ্বয়ের বিদায় সমর্থন না করলেও পারিবারিক ধারার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করেন। এসময় আবার দেশবাসী এবং আইন প্রয়োগকারীদের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে, দলের জেষ্ঠ নেতৃবৃন্দকে অগ্রাহ্য করে (?)অতি বুদ্ধিমতি নেত্রী নিজের অযোগ্য ভাইকে দলীয় উচ্চপদে আসীন করেন! এধরনের নির্বুদ্ধিতা আর গোয়র্তুমীই যেন তাঁদের ক্ষমতা গ্রহণের সবচেয়ে বড় পূঁজি!!
আর যেসব ছোট খাট দল আছে সেসবের চিত্রও ভিন্ন নয়। ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষের আবেগ ও বিশ্বাস নিয়ে খেলা করে এদের কারো কারো মূল লক্ষ্য। একটি দলকে দেখা যায় ইসলামকে ঢাল বানিয়ে এগিয়ে চলা, তবে সত্যিকারের ইসলাম তাদের কথাবার্তা কর্মকান্ডে কখনো পরিলক্ষিত হয়না। বরং তাদের ভন্ডামীর বিরোধীতা করা মানেই যেন ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলা, এধরনের চোখ রাঙানী দেবার ধৃষ্টতা করতে এরা দ্বিধাবোধ করেনা। লাম্পট্য আর নারীঘটিত একেকটি নোংরামীর শীর্ষে এসব ছোট খাট দলের কোন কোন শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। ইসলাম বা কোন ধর্মের আদর্শই এদের মূলমন্ত্র নয়, ছলেবলে কৌশলে ক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছানোই মূল লক্ষ্য! আরেকটি দল কে দেখা যায় সমাজতন্ত্রের মন্ত্র পড়ে যুবসমাজকে বিভ্রান্ত করতে। সমাজতম্ত্রের আদর্শের বুলি আউড়ানো শীর্ষ নেতাদের দেখা যায় বিলাসী আর ব্যয়বহুল জীবন যাপনে অভ্যস্ত!
এসব ছোট দলের না আছে কোন আদর্শ না আছে নৈতিকতা, এরা একান্তই সুবিধাবাদী। প্রধান দল দুটি যেসময় ক্ষমতায় যাবে, এরা সেসব সুযোগের সদ্বব্যবহার করে ফায়দা লুটবে, এটাই তাদের মূল মন্ত্র!
এসব নেতা নেত্রীদের পেটে পীড়া হলেই বাংলাদেশের বাতাস, পানি, মাটি অসহনীয় হয়ে পড়ে। দেশে চিকিৎসার প্রশ্নই আসেনা।
প্রতিটি দল গত পঁচিশ বছরে কোননা কোন ভাবে ক্ষমতায় ছিলো, দেশবাসীর জন্য না হোক অন্তত নিজের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার নূন্যতম যোগ্যতা কারো হয়নি!
কি বিচিত্র অক্ষম আর অযোগ্য আমাদের নেতৃবৃন্দ!!!!!!
রাজনৈতিক দল সমূহের এহেন চরম আদর্শহীনতা আর নৈতিক স্খলনের মাঝে (!)ত্রাতা রূপে আবির্ভুত হয় অন্তবর্তীকালীন সরকার!
দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখানো হয় স্বল্প সময়ের মধ্যেই দূর্নীতি আর অনাচার মুক্ত একটি সুন্দর দেশের, আর তারপর সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচন। আশা এবং আশংকা নিয়ে আমরা তাকিয়ে থাকি। দুর্নীতিবাজদের প্রাথমিক ধরপাকড়ে আর কারাগারে নিক্ষেপে অনেকের মাঝেই সেই আশার আলো কিছুটা উজ্জল হয়ে উঠে। তারপর...... সময়ের সাথে সাথে আশংকাটি প্রকট রূপ ধারন করে।
যে দুর্নীতি নাশের আশা নিয়ে মানুষ দিনগুনছিলো, হঠাৎ শোনা যায় নতুন নতুন ব্যংক আর তার বিশেষ মালিকদের গল্প। শোনা যায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ (!)বিশেষ পারিবারের সদস্যদের কথা!
দেশবাসী চরম অর্থনৈতিক ও ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মাঝে শোনা যায়, বিশেষ একটি ক্ষমতাধর মহলের কর্তাব্যক্তিদের ঘনঘন সপরিবারে বিদেশযাত্রার কথা!!!
মামলার সাক্ষীর সাথে আলাপ না করেই লেখা হয়ে যায় তাঁর বয়ান, সে বিষয়ে পুলিশকে স্বাক্ষী প্রশ্ন করলে তাঁকে চোখ রাঙ্গিয়ে বলা হয়, "এখন দিন পাল্টেছে, আমরা যা বলবো তাই মানতে হবে!!"
উচ্ছৃংখল ছাত্র দমনের নামে নিরাপরাধ অছাত্র, সাধারন মানুষকে শারীরিক ভাবে হেনস্থার অভিযোগ শোনা যায়!
গ্রেফ্তারকৃত রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের অমানুষিক পঙ্গুত্বের খবর জেলের সুউচ্চ প্রাচীরের বাইরে এসে পৌঁছে।
*সরকারি খরচে এরশাদ, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া পরিবারের বিদেশযাত্রা যেমন ঘৃণ্য ও নিন্দনীয়- (!)দুর্নীতি দমনকারী সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের স্ত্রী পরিবারের বিদেশযাত্রাও তেমনি ঘৃণ্য ও নিন্দনীয়!!!
*আমরা বিগতদিনের দুর্নীতিবাজদের শাস্তি চাই, নতুন নতুন দুর্নীতিবাজের আবির্ভাব চাইনা।
*আমরা সুবিচার আর ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা দেখতে চাই, অমানবিক নির্যাতন আর বিভৎস অত্যাচারের নিদর্শন চাইনা।
*আমরা দুর্নীতির অবসান চাই, প্রশাসনের অন্যায় চোখ রাঙ্গানি দেখতে চাইনা।
কানার হাট বাজার থেকে মুক্তি চাই। একবার অন্তত চক্ষুষ্মান কারো নেতৃত্বে আমরা পথ চলতে চাই.....