ইরাকে আইএসআইএস’র উত্থানের পেছনে প্রধানমন্ত্রী নূরী মালিকির অপশাসন, অনিয়ম, স্বেচ্চাচারিতা আর দলান্ধতাই অন্যতম দায়ী। সবকিছুতেই মালিকি দলীয়করন এতটাই করেছেন যে, তা রীতিমত ভয়াবহ আকার ধারন করেছিল।
সেনাবাহিনীতে নীজ দলের কর্মীদের আলাদা আইডেন্টিফিকেশন ছিল। এমনকি সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপারটি হচ্ছে, নূরী আল মালিকি সেনাবাহিনীকে এমন ভাবে সাজিয়েছিলেন, যেখানে শিয়া, সুন্নি ও কূর্দীদের আলাদা আলাদা ব্রিগ্রেড ছিল।
একটি দেশের জাতীয় ঐক্য ও শক্তির প্রতীক হচ্ছে সে দেশের সেনাবাহিনী। কিন্তু সে সেনাবাহিনীকেই মালিকি শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত করে চরম ভুলটি করেছেন। যার খেসারত দিতে ইরাকি জনগণকে।
এতদিন ধরে একটা বিষয় মাথায় আসছিল না, সুন্নিরা এত অস্ত্র কোথা থেকে পেল? শেষে ওদের দলের নাম আইএসআইএস তথা ইসলামিক স্টেট অব দ্য ইরাক অ্যান্ড দ্য শাম জানার পর বুঝতে বাকি রইল না, কোথা থেকে আসছে বা এসেছে ওসব অস্ত্র।
লক্ষ্য করুন, ওদের নামে ইরাকের পাশে আরেকটি নাম আছে শাম। আমরা জানি শাম হচ্ছে সিরিয়ার পূর্বনাম।
গত কয়েক বছর ধরে সিরিয়ার স্বৈরাচার আসাদ সরকারকে হঠাতে আমেরিকা গংরা কম চেষ্টাতো করেনি। কিন্তু তাদের সকল চেষ্টা ব্যার্থ হয়েছে। এতবড় পরাজয় কি আমেরিকা হজম করতে পারবে? অথবা পারবে কি তারা খালি হাতে ফিরে যেতে? না কখনই না। অতএব আমেরিকাকে এমন কিছু করতে হবে, যাদের মনে শান্তির খোরাক হতে পারবে। আর সেটাই হল আইএসআইএস।
১৯১০’র দশকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগ মূহুর্তে ফ্রান্স-ব্রিটেনের গোপন এক ষড়যন্ত্র হচ্ছে আলবার্ট ফিগোর অঙ্কিত আরব বিশ্বের মানচিত্র। যেখানে ওসমানী বা অটোম্যান সাম্রাজ্যকে ভেঙ্গে খন্ড খণ্ড স্বাধীন (!) আরব রাষ্ট্র গঠন করা হয়। আজকের ইরাক, সিরিয়া ও মিশর রাষ্ট্র সমূহ তারই ফসল।
১০০ বছর এই ষড়যন্ত্র এখন বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে ওয়েস্টার্নদের জন্য। তাই এখন আবার নতুন করে কোন কিছুর উদ্ভব হবে এবং এমনটাই স্বাভাবিক।
আমিরিকা গত দশকে ইরাক, আফগানিস্তানে এসে যুদ্ধ করে গেছে। হয়ত ওদের এখন আর নতুন কোন যুদ্ধে জড়ানোর মত অর্থনৈতিক শক্তি নাই। তাই ওরা নতুন এক পরিকল্পনা এঁটেছে। তা হল এসব আরব দেশগুলোতে অভ্যন্তরীন সংঘাত বাঁধানো হবে। এতে করে এদের কেউ আমেরিকা, কেউ ফ্রান্স আবার কেউ রাশিয়া কিংবা জার্মানি থেকে অস্ত্র কিনবে এবং হত্যা করবে স্বজাতিদের, যা আমরা দেখছি সিরিয়া এবং ইরাকে।
ইরাক একটি মুসলিম দেশ হলেও মূলত এখনে তিনটি বৃহৎ জাতি-গোষ্টি বাস করে- শিয়া, সুন্নি আর কুর্দি। এরমধ্যে কুর্দিরা আরাক ও তুরষ্কের বিশাল অংশ জুড়ে নেজেদের আলাদা দেশ কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে সংগ্রাম করে আসছে। বর্তমান আইএসআইএস’র গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে কুর্দিদের সে চেষ্টায় ঘি ঢেলে দেয়া হবে।
এছাড়া আজইতো সুন্নি আইএসআইএস ঘোষনা করেছে নিজেদের আলাদ ভূখন্ড। এখন বাকি থাকে শিয়াদের ভূমিকা। সুন্নি ও কুর্দিদের আলাদা ভূখণ্ড হয়ে গেলে শিয়াদের জন্য একটা ভূখন্ডতো ইরান-আমেরিকা মিত্রতার মাধ্যমে বেরিয়ে আসাই স্বাভাবিক। এবং এটার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে আমাদের।