somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষমা করিস ফেলানী

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাল আমার বিয়ে। সারাদিন ব্যাপক খাটাখাটনিতে কেটেছে। ব্যস্ততা বলতে যা বুঝায় তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি হল টেনশন। কাজ কারবার যা আছে, তাতো বাবা-মা, ভাই-বোন আর আত্মীয় সজনরাই করছে। আমার আর কি কাজ, চুল কাটা, সেভা করা, অভিজ্ঞ বন্ধুদের কাছ থেকে বিড়াল মারার অভিজ্ঞাতা নেয়া এইতো। সন্ধ্যোর পর কণে পক্ষের মেয়েরা এসে গায়ে হলুদ লাগিয়ে গেছে। তাদের এবং আমার আত্মীয় সজন আর পারাপশ্বির হৈহুল্লর আনন্দের মাঝেইতো আমার আনন্দ।

রাত ১২টা বেজে গেছে, এই রাতটুকু পেরিয়ে গেলেই সেই মহেন্দ্রক্ষণ। পঁচিশটি বছর পেরিয়ে আগামী কাল আমি সফল পুরুষদের কাতারে দাঁড়াবো; না সময়টুকু যেন কাটছেই না। শুতে গিয়ে বরাবরের মত মাঝ খাটে শুলাম। কিন্তু মনে হচ্ছে যেন দুটো চোখ আমার দিকে মিটিমিটি করে চেয়ে আছে, আর বলছে কি ব্যাপার আমাকে শুতে দেবে না? চমকে উঠে চারদিকে চেয়ে দেখি কেউ নেই। মনেমনে হেসে ডানপাশে সরে শুলাম। কারন কাল থেকেতো আমাকে একপাশেই শুতে হবে। ক্লান্ত শরীর, যার কারনে শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

এই ভাইয়া ওঠ, ওঠ না! ধরমরিয়ে ঘুমঘুম চোখে বল্লাম কে? কে?

-ভাইয়া আমি,

- আমি কে?

- বাহ ভুলে গেলি আমাকে? ভুলবিইতো, ভোলারই কথা, তানাহলে কি আর কাল তুই বিয়ে করতি? আমি... আমি ফেলানী

- ফেলানী! ফেলানী তু..তুই এখানে? এ সময়ে?

- হ্যা, ভাইয়া বড় অসময়ে এলাম। অন্তত তোর এই সুখ সময়ে আমার তোর কাছে আশা উচিত হয়নি! কাল কয় তারিখ তোর মনে আছে, ভাইয়া?

- কাল ৭-ই জানুয়ারী, কালতো আমার বিয়ে। ভাল হয়েছে তুই এসেছিস, বস আমি মাকে ডেকে আনছি।

- হ্যাঁ, কাল তোর বিয়ে কত্ত আনন্দ তোদোর। তোদের এই আনন্দে আমার শরিক হতে ইচ্ছে করেরে ভাইয়া। আমার ইচ্ছে করছে তোর হাতে আমার মনের মত করে মেহেদী লাগিয়ে দেই, যেন তোর রাঙ্গা বউটা সারা জীবন আমার আঁকা আলপনা মনে রাখে।

- সমস্যা কি? করনা?

- হাহাহা, নিজের বিয়ের চাপে সব ভুলে গেলি? কিভাবে করবো? আমিযে মৃত! জানিষ ভাইয়া, তোর মত আমারও এক বুক স্বপ্ন ছিল। তুই যেমন তোর বউয়ের হাত ধরে চাঁদনী রাতে জোছনার আলোতে মেঘেদের আড়ালে হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিস, সেরকম ইচ্ছে আমারও ছিল। তাইতো সেদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসছিলাম দেশের মাটিতে। স্বপ্ন ছিল, লাল টুকুটুকে সাড়ি পড়ে ডানা কাটা পরী বেসে স্বপমীর বাড়িতে যাব, নিজের সংসারটকে নিজের মত করে সাজিয়ে নেবো। কিন্তু ওরা তা হতে দিল না

- ফেলানী!

- তোরই বা কি দোষ ভাইয়া? আমরাতো চোর, দুষ্কৃতিকারি।

- কি যা তা বলছিস তুই ? তুই আমাদের আদরের বোন ফেলানী। তোর জন্য সারাদেশের তোর ভাইয়ের কত কান্না করছে। এই দেখ তুই আমার বাহু দেখ, তোর হত্যাকারির শাস্তি দাবী করতে খুলশীর ভারতীয় এম্বাসির সামনে মানববন্ধন করতে গেলে আমার মত এরকম অনেকেই পুলিশের বাড়ি খেয়েছে।

- হ্যা, জানিরে ভাইয়া, আমার জন্য এখনো অনেকেই জেল খাটছে। তোদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু দুঃখ কোথায় জানিষ? আমাদের দেশের মন্ত্রীরা বলছে, আমারা যারা সীমান্তে মারা যাই, তারা নাকি চোর.....হুহুহু

- কাদিস না বোন। এটা ওদের রাজনৈতিক অসহায়ত্ব।

- বড় আজব এক জাতি আমরা নারে ভাইয়া?

- রাগ করিস না বোন

- রাগ! জানিস ভাইয়া, ওরা যখন আমাকে গুলি করেছিল গুলিটি আমার বুকের একপাশে লেগেছিল। এরপরও আমি অনেকক্ষণ বেঁচে ছিলাম। উপ্ এই বেঁচে থাকাটা আমার কাছে সবচেয়ে যন্ত্রণাকির ছিল। গুলি খাওয়ার পর আমি পরে গেলেও পা দুটো আমার কাঁটা তারের মাঝে আটকে যায়। এতে আমার মাথা নীচের দিকে আর পা তারের সাথে ঝুলে ছিল। ফোটা ফোটা রক্ত পরে মাটি বিজতে থাকে। পানি পানি করে আমি কাঁদছিলাম, কিন্তু আমাকে কেউ নামায়ওনি, এক ফোটা পানিও দেয়নি। আমার মা-বাবা তারের ওপাশে দাঁড়িয়ে কাদছিল আর এপাশে ঐ নরপিচাশ বিএসএফ গুলো অট্ট হাসিতে ফেটে পরছিল। তৃষ্ণায় আমার বুক ফেটে যাচ্ছে, কিন্তু আমার বুকের তাজা রক্তে তপ্ত মাটির পিপাসা মিটছে। অনেক্ষণ ঝুলে থাকার কারনে আমার নাক, মুখ দিয়েও রক্ত পড়তে থাকে। কিন্তু সেদিন কেউ আমার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। এক সময় তৃষ্ণার্তাবস্থায়ই আমার প্রাণ পাখি উড়ে যায়। কি দোষ ছিলরে আমার, বলতে পারিস ভাইয়া? আজও আমার বাবা-মা আমার শোকে পাথর হয়ে আছে। তাদের কান্না থামানোরতো কেউ নেই। তোরাতো নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। দোয়া করি, ভাল থাকিস। এই বলে অভিমানী ফেলানী জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে শিমুল গাছটিতে গিয়ে বসে আমাকে কি যেন বলছে আর হাত নাড়ছে, কিন্তু আমি শুনতে পাচ্ছি না।

- যাসনে বোন, ফিরে আয় ফেলানী....

আচমকা ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে বসলাম আমি। মাথা ঝাঁকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম, আসলে কি হয়েছে? । জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি আকাশ ফার্সা হয়ে এসেছে। জানালার পাশের গাছটিতে কয়েকটি পাখি কিচিরমিচির ডেকে যাচ্ছে। বুঝলাম, স্বপ্ন দেখছিলাম। হঠাৎ মনে হল আজতো জানুয়ারীর ৭ তারিখ। এই দিনেইতো ব্লাডি বিএসএফ সদস্য অমীয় ঘোষের গুলিতে বাংলাদেশের এক অতি সাধারন মেয়ে ফেলানীর করুণ মৃত্য হয়েছে।

অযু করে এসে নামাজ পগে ফেলানীর জন্য দোয়া করলাম। তারপর একেএকে সবাইকে কল দেয়া শুরু করলাম। সকাল ১০টায় প্রেসক্লাব চত্ত্বরে চলে আসতে। মানববন্ধন করবো, অমীয় ঘোষের শাস্তি এবং ঢাকার গুলশানে ভারতীয় দূতাবাসের সামনের সড়কটির নামকরণ ফেলানীর নামে করার দাবীতে……

বি.দ্র. প্রতিবার ফেলানী হত্যার দাবীতে মানববন্ধন করলেও, এইবার রাজনৈতিক অসুস্থতার কারনে সম্ভব হবে কিনা জানি না!

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×