somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ ২৯ ডিসেম্বর, চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ২৯ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে অনন্য কৃতৃত্বের অধিকারি মোহাম্মদ মোনাজাত উদ্দিনের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। নিচে চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের বর্ণাঢ্য জীবনী আলোকপাত করা হল।


চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন
মোনাজাত উদ্দিনঃ, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের একটি স্মরণীয় নাম। ডেস্কে বসে সাংবাদিকতায় নির্ভর করে খবরের অন্তরালে যে সব খবর লুকিয়ে থাকে সেই সব তথ্যানুসন্ধান এবং রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে তিনি দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন। গ্রামে-গঞ্জে, পথ থেকে পথে ঘুরে ঘুরে এই তথ্যানুসন্ধানী সংবাদকর্মী তাঁর সাংবাদিক জীবনে নানা মাত্রিকতার রিপোর্ট করেছেন। পাশাপাশি লিখেছেন জীবনের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ নানা ঘটনা। তিনি ছিলেন তৃণমূল মানুষের সংবাদ কর্মী। সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা এবং এই পেশায় সফল এক নাম মোনাজাত উদ্দিন।

জন্মঃ
চারণ সাংবাদিক মোঃ মোনাজাত উদ্দিন-এর জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৮ জুন রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার মরনিয়া গ্রামে।

পারিবারিক পরিচয়ঃ
মোনাজাত উদ্দিনের পিতার মোঃ আলিমউদ্দিন আহমদ আর মাতার নাম মতি জানন্নেছা। আলিমউদ্দিন আহমেদ ছিলেন সে যুগের মেট্রিক পাশ। কর্মজীবনে রংপুর পৌরসভায় উচ্চমান করণিক, রংপুর এসপি অফিসের প্রধান করণিক ছিলেন মোঃ আলিমউদ্দিন। চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন রংপুর কারমাইকেল কলেজের হিসাব রক্ষক হিসেবে। রংপুর শহরের ধাপ এলাকায় ছিল তাঁর আবাস। আলিমউদ্দিন আম্বিয়া চরিত নামে একখানা গ্রন্থ রচনা করেন। অপ্রকাশিত আধুনিক যোদ্ধা নামে একটি বইয়ের পান্ডুলিপিও রচনা করেছিলেন।


শ্রমজীবী মহিলার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করছেন মোনাজাতউদ্দিন
শিক্ষাজীবনঃ
মরনেয়া গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করে মোনাজাত উদ্দিন রংপুরের এক সময়ের নাম করা রংপুর কৈলাশরঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা পাশ করে ভর্তি হন রংপুর কারমাইকেল কলেজের মানবিক শাখায়। এখান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর কারমাইকেল কলেজেই বিএ (পাস) ক্লাশে ভর্তি হন। কলেজে পড়ার সময় মোনাজাত উদ্দিন শিল্প-সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এ সময় তিনি প্রচুর ছড়া ও কবিতা লেখেন এবং অঙ্কন শিল্পী হিসেবেও কলেজে বেশ সুনাম অর্জন করেন। কিন্তু বিএ (পাস) পড়াকালীন হঠাৎ করেই পিতার মৃত্যুতে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে চাকুরী নিতে বাধ্য হলেও চাকুরীর পাশাপাশি তিনি প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে বি.এ পাশ করেন তিনি ।

কর্মজীবনঃ
রংপুর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরত্বের নিসবেতগঞ্জ সরকারী প্রাইমারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন। কিছু দিন শিক্ষকতার পর তিনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে হিসাব রক্ষক হিসেবে চাকুরীতে যোগ দেন। কিন্তু তাঁর কাছে এই পেশা ভালো লাগেনি, তিনি মানিয়ে নিতে না পেরে চাকুরী ছেড়ে দেন। এছাড়া তিনি কিছুকাল কাজ করেন রংপুর পাবলিক লাইব্রেরির ক্যাটালগার হিসেবে। হাতের লেখা সুন্দরের কারণে এই কাজটি তিনি অনায়াসেই পরিছন্নভাবে করতে পারতেন।

সাংবাদিক জীবনঃ
মোনাজাত উদ্দিনের সাংবাদিকতা জীবনের শুরু ছাত্র অবস্থাতেই। তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ‘বগুড়া বুলেটিন’ পত্রিকার মাধ্যমে। ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকার দৈনিক আওয়াজ পত্রিকায় কিছুদিন কাজ করেন স্থানীয় সংবাদদাতা হিসেবে । পরে কিছুদিন দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় কাজ করে ১৯৬৬ সালে ‘দৈনিক আজাদ’ পত্রিকার উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি হিসেবে কাজে যোগদান করেন। স্বাধীনতার পর রংপুর থেকে প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক রংপুর বন্ধ হয়ে গেলে অর্থাভাবে পরেন তিনি। কারণ তখন ঢাকায় দৈনিক আজাদ পত্রিকাও বন্ধ । মোনাজাত উদ্দিনকে তাই জীবিকার তাগিদে একটি কীটনাশক কো¤পানিতে চাকুরী নিতে হয় বাধ্য হয়ে।
এরপরে ১৯৭৬ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’-এ কাজ করার সুযোগ পান। তারপর থেকে একটানা প্রায় বিশ বছর সেখানেই কাজ করেছেন । সংবাদই ছিল তাঁর ঠিকানা। বিশ বছর একটানা সংবাদ-এ কাজ করার পর তিনি দৈনিক জনকণ্ঠে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করেন ১৯৯৫ সালের ২৪ এপ্রিল। মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তিনি সেখানেই কর্মরত ছিলেন।


শিশুশ্রমিকদের পাশে মোনাজাত উদ্দিন
একটি চাকরি চাই এবং অতপরঃ
১৯৭৬ সালের মে মাস। পদ্মা নদী উপর ভারতে কর্তৃক অন্যায় ভাবে নির্মিত মরন ফাঁদ ফারাক্কা বাঁদের প্রতিবাদে মজলুম জননেতা মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে রাজশাহী থেকে ফারাক্কা মিছিল বের হবে। মিছিলের তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করার জন্য ঢাকা থেকে সাংবাদিকরা রাজশাহীতে পৌঁছেছেন। মোনাজাত উদ্দিনের তখনো পর্যন্ত কোনো পত্রিকায় স্থায়ী চাকুরী হয়নি।
তাঁর নিজের কোনো অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড নেই। তারপরও প্রবল উৎসাহ ও চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে তিনি মিছিলের দু’দিন রাজশাহীতে এসে পৌঁছেন। ভাসানীর মিছিল কাভার করার জন্য সংবাদ অফিস থেকে সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফার পাঠানো হয়েছে। তাঁদের কাছে মোনাজাত উদ্দিন পাত্তাই পেলেন না। বরং মোনাজাত উদ্দিনকে পেয়ে তারা ‘পান-বিড়ি-সিগারেট’ আনার মতো ফুট-ফরমায়েসের কাজ কিছুটা করিয়ে নিলেন। মোনাজাত উদ্দিনও ‘ভয়ে ভয়ে, বিনয়ের সাথে’ সেই কাজ করে দেন। প্রতিবাদ করতে পারেননি। ঢাকার সাংবাদিকরা ‘যদি মাইন্ড করে’! কারণ তাঁর তো তখন একাট ‘চাকুরী চাই। ‘সংবাদ’-এর সন্তোষ গুপ্ত সরাসরি বলে দিয়েছেন, “সংবাদ-এর জন্য উত্তরাঞ্চল ভিত্তিক খবর ও ছবি পাঠাতে পারেন, ভালো হলে ছাপাও হবে। কিন্তু চাকুরীর ব্যাপারে আমি কোনো সুপারিশ করতে পারবো না। আপনার নিজের কাজের যোগ্যতায় যদি এ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার আদায় করতে পারেন, করুন।” ফলে মোনাজাত উদ্দিনের কাছে প্রশ্নটা যোগ্যতার। তাঁকে সেই যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে।
ভাসানী মিছিল শুরুর আগে স্থানীয় এক মাদ্রাসার মাঠে বক্তব্য দিলেন। মোনাজাত উদ্দিন তাঁর নিজের ভাঙ্গা ক্যামেরা দিয়ে দূর থেকে সমাবেশে ভাসানীর বক্তব্যরত অবস্থার কয়েকটি ছবি তুলে নিলেন। যদিও জানেন এগুলো কোনো কাজে লাগবে না। তারপরও নেশায় পড়ে তুলে নিলেন ছবিগুলো। একবার ভাসানীর মঞ্চের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কোনো পত্রিকার কার্ড না থাকায় সেটি সম্ভব হয়নি।
ভাসানী বক্তব্য শেষ করে যে স্থান দিয়ে মিছিল নিয়ে যাবেন আগে থেকেই তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন মোনাজাত উদ্দিন। কারণ, অন্যান্য সাংবাদিক ও ফটো সাংবাদিকদের জন্য গাড়ি তৈরি আছে মিছিলের সাথে যাবার জন্য। মোনাজাত উদ্দিনের সেখানে জায়গা হবে না তা তিনি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু অন্যান্য সাংবাদিকদের বহনকারী গাড়িটি মুহূর্তেই মিছিল যে দিকে যাবে সেদিকে না গিয়ে ঠিক তার উল্টো দিকে যাত্রা শুরু করল। গাড়ির সাংবাদিকরা ‘গাড়ি ঘুরাও, গাড়ি ঘুরাও’ বলে চিৎকার শুরু করে দিলেন। কিন্তু ততক্ষণে জনতার স্রোত এতো প্রবল হয়ে উঠেছে যে বেচারা চালকের আর সেই ক্ষমতা ছিল না। এদিকে মিছিল প্রায় চলে গেছে আধা মাইলের মতো। উপায়ান্তর না দেখে সাংবাদিকরা গাড়ি থেকে নেমে দৌড় লাগালেন মিছিলের সামনের দিকে। কিন্তু জনতার স্রোতে সেই প্রচেষ্টাও খুব বেশি সফল হল না।
প্রমোদ গুনলেন মোনাজাত উদ্দিন। যে অবস্থা তাতে ‘সংবাদ’-এর ফটোগ্রাফারের পক্ষে কোনো অবস্থাতেই মিছিলের সামনে ভাসানীর ছবি তোলা সম্ভব নয়। অথচ এই ছবি মোনাজাত উদ্দিনের কাছে তোলা আছে। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলেন এই ছবি ও সংবাদ নিয়েই রওনা দেবেন ঢাকার পথে।
রাত সাড়ে এগারোটায় বংশালের ‘সংবাদ’ অফিসে পৌঁছেন। সন্তোষ গুপ্ত তখন ‘সংবাদ’-এর টেবিলে মাথা গুজে বসে আছেন। রাজশাহী থেকে কোনো ছবি তো দূরের কথা সংবাদও এসে পৌঁছেনি। মোনাজাত উদ্দিনকে দেখে সন্তোষ গুপ্ত বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, ‘আমি ঠিকই ধারণা করেছিলাম, আপনি আসবেন। ছবি এনেছেন? ফিল্মটা দিন, আপনি বসুন। আমি আপনার খাবারের ব্যবস্থা করি।’ কিন্তু মোনাজাত উদ্দিন খাবার স্পর্শ না করে লিখতে বসে যান। একটানা সংবাদ লিখে শেষ করে তারপর বসেন খাবার টেবিলে। ‘সংবাদ’-এর প্রথম পাতায় ফারাক্কা মিছিলের লীড নিউজ এলো ছয় কলাম জুড়ে। খবরটি ছাপা হলো মোনাজাত উদ্দিনের নামে। দু’টি ছবিও ছাপা হলো তাঁর নাম দিয়ে। রাতে, অফিসেই পত্রিকার ফাইলের ওপর শুয়ে থাকলেন। কিন্তু সেই রাতে আনন্দে ঘুম এলো না মোনাজাত উদ্দিনের দু’চোখে।
সকালে সন্তোষ গুপ্ত বাসা থেকে ফোন করে জানালেন, ‘সংবাদ’ সম্পাদক আহমেদুল কবীর তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন। কবির সাহেব এলেন। মোনাজাত উদ্দিনকে ডেকে নিলেন কামরায়। বললেন, ‘তোমার কাজে আমি খুব খুশি হয়েছি। কি চাও তুমি?’ এই কথা শুনে, হাঁটু-বুক-গলা তিনই কেঁপে উঠলো মোনাজাত উদ্দিনের। মিনমিনে গলায় বললেন, ‘একটা চাকুরী’। শেষ পর্যন্ত মোনাজাত উদ্দিন নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পেরেছিলেন ‘সংবাদ’ তথা সারা বাংলাদেশের সংবাদ জগতের কাছে। যোগ্যতা দিয়েই তিনি হয়ে উঠেছিলেন এ দেশের প্রথম সার্থক ‘চারণ সাংবাদিক’।


ফারাক্কা মার্চ; মোনাজাত উদ্দিনের স্বপ্নের সিড়ি

চারণ সাংবাদিকতাঃ
মোনাজাত উদ্দিনের সংবাদ সংগ্রহের স্টাইল ও নিষ্ঠা জড়িয়ে গিয়েছিল; কোথাও ভঙ্গী দিয়ে চোখ ভোলানোর আয়োজন ছিল না। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, ফলোআপ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি অনন্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। গ্রাম বাংলার জনজীবনের একটা নিখুঁত তথ্য নির্ভর এবং একই সঙ্গে সংবেদনশীল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ও চিত্ররূপময় বর্ণনা এবং চিত্র তিনি দেশবাসীকে উপহার দিয়েছেন খবরের মাধ্যমে। তাঁকে চারণ সাংবাদিক আখ্যা দান যথার্থ। এই একটি অভিধাতেই তাঁর সাংবাদিকতার বৈশিষ্ট্য ও অনন্যতা ধরা পড়ে। [সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত]

প্রকাশিত গ্রন্থঃ
মোনাজাত উদ্দিনের মৃত্যুর আগে ৯টি ও পরে ২টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি লিখেছেন জীবনের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ নানা ঘটনা। তাঁর বইগুলোর মধ্যে রয়েছে পথ থেকে পথে, সংবাদ নেপথ্য, কানসোনার মুখ, পায়রাবন্দের শেকড় সংবাদ, নিজস্ব রিপোর্ট, ছোট ছোট গল্প, অনুসন্ধানী রিপোর্ট গ্রামীণ পর্যায়, চিলমারীর এক যুগ, শাহ আলম ও মজিবরের কাহিনী, লক্ষীটারী, কাগজের মানুষেরা।
এছাড়াও মাসিক মোহাম্মদি, দৈনিক আজাদ, সওগাত ও অন্যান্য পত্র-পত্রিকায় তাঁর বেশ কয়েকটি গল্প প্রকাশিত হয়। নাটকের একমাত্র প্রকাশিত বই ‘রাজা কাহিনী। এছাড়াও তিনি প্রচুর ছড়া লিখেছেন।

সংসারজীবনঃ
সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন নাসিমা আক্তার ইতির সাথে ১৯৭০ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ইতি রংপুর বেগম রোকেয়া কলেজ থেকে বি.এ. পাস করেছেন। পরে সংসার জীবনে মনোনিবেশ করেন। মোনাজাতউদ্দিন ও নাসিমা আক্তার ইতি’র দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে মাহফুজা মাহমুদ চৈতি একজন ডাক্তার, ছোট মেয়ে হোসনাতুল ফেরদৌস সিঁথিও ডাক্তার এবং একমাত্র ছেলে আবু ওবায়েদ জাফর সাদিক সুবর্ণ ছিলেন বুয়েটের মেধাবী ছাত্র। সে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাবস্থায় ১৯৯৭ সালে আত্মহত্যা করে।

মৃত্যুঃ
১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর ফুলছড়ি থানাধীন যমুনা নদীতে কালাসোনার ড্রেজিং পয়েন্টে দুটি নৌকাডুবির তথ্যানুসন্ধান করতেই অসুস্থ শরীর নিয়ে যাত্রা শুরু করেন গাইবান্ধায়। যাবার পথে শেরেবাংলা নামক ফেরিতেই তিনি দুর্ঘটনার মুখে পতিত হন। ফেরির ছাদ থেকে হঠাৎ করেই পানিতে পড়ে যান। স্থানীয় নৌকার মাঝিরা তাঁর দেহ তাৎক্ষনিকভাবে উদ্ধার করতে পারলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। ধারণা করা হয়, পানিতে পড়ার সাথে সাথেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর এই অকাল মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান হয়ে ওঠে পুরো বাংলাদেশ। ৩০ ডিসেম্বর তাঁকে রংপুর শহরের মুন্সীপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সম্মাননা ও প্রদকঃ
চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন তাঁর কর্ম জীবনের সাধনা ও স্বীকৃতিস্বরূপ নানা পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর মধ্যে রয়েছে ১৯৭৭ সালে রংপুর নাট্য সমিতি কর্তৃক সংবর্ধনা, ১৯৮৪ সালে পান সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী স্মৃতি পদক, ১৯৮৬ সালে ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব বগুড়া কর্তৃক সম্মাননা সার্টিফিকেট অর্জন করেন, দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত মানুষ ও সমাজ শীর্ষক প্রতিবেদনের জন্য বাংলা ১৩৯৩ সালে পান ঐতিহ্যবাহী ফিলিপ্স পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে সংবাদপত্রে প্রভূত অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স পুরস্কার পান, ১৯৯৫ সালে মর্যাদাশালী অশোকা ফেলোশিপ লাভ করেন, ১৯৯৭ সালে অর্জন করেন রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদক একুশে পদক।

তথ্যসূত্রঃ
পথ থেকে পথে - লেখক মোনাজাত উদ্দিন
মোনাজাত উদ্দিন - লেখক মোহাম্মদ জয়নুদ্দিন (বাংলা একাডেমী প্রকাশিত)
মঙ্গার আলেখ্য - লেখক মাহবুব রহমান
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×