somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষয়: ‘বেডরুম পাহারা’

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম আলোর অনলাইন বিভাগটির নাম নিউ মিডিয়া। প্রতিদিন যে পত্রিকাটি ছাপা হয়ে পাঠকদের হাতে যায়, তার সবকিছুই থাকে অনলাইন সংস্করণে। বাড়তি হিসেবে এই সংস্করণের যা থাকে তা হচ্ছে, দিনের ঘটনার সময়ে সময়ে আপডেট। আরও একটি বাড়তি বিষয় আছে এই সংস্করণে, যেকোনো খবর, লেখা বা সংবাদভাষ্যের শেষে পাঠকদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ। সেই সূত্রে প্রতিদিনই কিছু খবর, লেখা বা সংবাদভাষ্য সবচেয়ে আলোচিত হিসেবে চিহ্নিত হয়। প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণ নিয়ে এত ভূমিকা দেওয়ার মূল কারণটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মন্তব্য ও এ নিয়ে পাঠকদের প্রতিক্রিয়া। প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো খবরের ব্যাপারে পাঠকেরা এত বিপুল প্রতিক্রিয়া জানালেন।
‘সরকারের পক্ষে বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়’—প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে খবরটি প্রকাশ পেয়েছিল এই শিরোনামে। ২৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেছিলেন। বলেছেন, ‘দুই সাংবাদিককে নিজ ঘরে মারা হয়েছে। সরকারের পক্ষে কারও বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়।’ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আরও রাজনৈতিক মন্তব্যও করেছেন তিনি। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রীর ‘বেডরুম পাহারা’-সংক্রান্ত মন্তব্যটি। এই খবরটি অনলাইন সংস্করণে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে পাঠকেরা যে হারে প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকেন, তা এক রেকর্ড। সেই তথ্য-উপাত্তে পরে আসছি। পাঠকেরা যে সব মন্তব্য করেছেন, তার কিছু তুলে ধরলে প্রতিক্রিয়াটি কোন ধরনের হয়েছে, তা আন্দাজ করা যাবে।
‘কত কঠিন কথা এত হালাকভাবে বলা কী আপনার সাজে? আমরা কার ওপর ভরসা রাখব? কে আমাদের পথ দেখাবে?’— ফারহান ফারদিন।
‘এটা কোনো গণতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রীর ভাষা হতে পারে না।—মো. জানে আলম।
‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলে এমন কথা এত অবলীলায় বলতে পারলেন...আপনার মনে রাখা উচিত আপনিই আমাদের শেষ ভরসা’— মো. হারুন অর রশিদ।
‘এই না হইলে প্রধানমন্ত্রী! সবাস! এই জন্যই তো মানুষ আপনাকে নির্বাচিত করছে। বুঝবেন, আবারও নির্বাচন আসছে।—এইচ এম আশিক এলাহি।
‘সরকারের পক্ষে কী পাহারা দেওয়া সম্ভব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? সীমান্ত? সংসদ ভবন?—মাহফুজা বুলবুল
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি ঠিকই বলেছেন। আপনি যে এই মামলার তদারকি করছেন এখন আমরা বুঝতে পারছি। সাংবাদিক দম্পতি হত্যার পর আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেভাবে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে মিডিয়াতে ঘোষণা দিলেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে, ৪৮ ঘণ্টা তো দূরে থাক, আজ ১২ দিন অতিবাহিত হলো খুনিরা ধরা পড়েনি। এখন আপনার বক্তব্য শুনে একেবারেই আশাহত হলাম এবং বুঝতে পারলাম মামলাটা হিমাগারে চলে গেছে।’—মো. ইব্রাহিম।
‘... ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সাজা মওকুফ করে দেওয়ার কারণে খুনিরা খুন করতে আর ভয় পাচ্ছে না। সব খুনের সঠিক বিচার করলে সরকারের বেডরুম পাহারা দেওয়ার প্রশ্ন উঠত না।’—মুস্তাফিজ রহমান।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে আইন করুন বেডরুমে হত্যাকাণ্ড হলে কোনো বিচার হবে না!’—আরিফ।
‘বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয় সেটা আমরাও জানি, কিন্তু আপনি জনসমক্ষে না বললেও পারতেন।’—জনৈক পাঠক।
‘বেডরুমের কথা না হয় বাদ দিলাম, যারা বেডরুমের বাইরে খুন হচ্ছেন তাঁদের ব্যাপারে আপনি কী করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?—আবীর শরিফ।
‘বেডরুম পাহারা সরকার কেন দেবে? মানুষ এটুকু বুঝতে পারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।...খুনিদের বিচার করুন। মানুষ খুনিদের বিচার দেখতে চায়।’— এম এন হাসান বাবু।
‘বেডরুম পাহারা দেওয়া কোনো সরকারের দায়িত্ব নয়। তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখা সরকারের অবশ্যদায়িত্ব। যেকোনো হত্যাকাণ্ডের পর খুনিরা দ্রুত ধরা পড়লে এবং সঠিক বিচার করলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটত না।’—মনিউর রহমান।
যে মন্তব্যগুলো উল্লেখ করলাম তা সাধারণ ধরনের মন্তব্য। এর বাইরে আরও অসংখ্য মন্তব্য আছে অনেক কঠোর ভাষায়। আছে তীর্যক মন্তব্য। রম্য করেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে। একজন পাঠক অনলাইনের পাঠকদের এসব মন্তব্য পত্রিকায় ছেপে দেওয়ার অনুরোধও করেছেন। একজন পাঠক লিখেছেন, শুধু প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতেই তিনি প্রথমবারের মতো প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। অনলাইনে প্রথম যেদিন এই খবরটি ছাপা হয় সেদিন, অর্থাৎ ২৩ ফেব্রুয়ারি মন্তব্য পড়ে মোট ৫৫২টি। পরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি একই খবর পত্রিকায় ছাপা হওয়ার পর মন্তব্য আসে ১৬১টি। দুই দিন মিলিয়ে মোট ৭১৩টি মন্তব্য। প্রথম আলোর নিউ মিডিয়া সূত্রে জানা গেল, আরও প্রায় একই সংখ্যক মন্তব্য পাঠকেরা করেছিলেন। কিন্তু সম্পাদকীয় নীতিমালা মেনে সে সব মন্তব্য প্রকাশ করার সুযোগ ছিল না।
প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পঠিত বাংলা নিউজ পোর্টাল। নিয়মিত প্রথম আলো পড়েন প্রায় ১১ লাখ পাঠক। যাঁরা অনলাইনে পত্রিকাটি পড়েন, তাঁরা সবাই যে প্রতিক্রিয়া জানান, এমনটি নয়। প্রতিদিন যেসব লেখা সর্বোচ্চ পঠিত হিসেবে স্থান পায়, সেগুলো যে সবচেয়ে আলোচিত লেখা হয়, তেমন নয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই লেখাটি একদিকে সর্বাধিক পঠিত, অন্যদিকে সর্বাধিক আলোচিত। সাধারণভাবে সর্বাধিক আলোচিত একটি লেখা বা খবরে সর্বোচ্চ ১৬০ থেকে ১৮০টি মন্তব্য থাকে। প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যটি পাঠক তথা জনগণের মধ্যে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, সেটা বোঝার জন্য এই তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যানগুলো যথেষ্ট।
নিজেদের বাসায় নৃশংসভাবে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর জনগণের মধ্যে খুব স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি হয়েছে। এ ধরনের মানসিক পরিস্থিতি অস্বাভাবিক কিছু নয়। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এই খুনের কোনো কূল-কিনারা না হওয়ায় জনগণের মধ্যে হতাশাও বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তাই এতটা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
কোনো দেশেই কোনো সরকারের পক্ষে জনগণের বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। জনগণ সেটা চায়, এমনও নয়। তবে একই সঙ্গে এটাও ঠিক যে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের, তা ঘরে বা বাইরে যেখানেই হোক না কেন। আবার আমরা এটাও জানি, দুনিয়ার কোনো সরকারের পক্ষেই এই দায়িত্ব শত ভাগ পালন করা সম্ভব নয়। খুন-খারাবি বিষয়টি কোনো দেশ থেকেই বিদায় করা সম্ভব হয়নি। এ ধরনের ঘটনা কোনো কারণে ঘটে গেলে সরকার দ্রুত এর বিহিত করবে, অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করবে—এটাই যেকোনো রাষ্ট্র বা সমাজের জনগণের চাওয়া। সাগর-রুনির ঘটনাটি ঘটার পর আমাদের জনগণের চাওয়া ছিল এমনই। এর কোনো সুরাহা হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে হতাশ এক পাঠক তাই তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘আপনার মনে রাখা উচিত, আপনিই আমাদের শেষ ভরসা।
source
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×