গল্পের নামঃ বসন্ত বৃষ্টি
ধরনঃ রোমান্টিক
লেখকঃ শেখ মামুনুর রশিদ
#১ম_পর্বঃ
-এক কাপ চা দাও তো।
বারান্দা থেকে আমার স্বামীর আওয়াজ ভেসে আসল। ওনার নাম মিহির হাসান।কলেজে বাইলোজির প্রভাষক। দুপুরের এ সময়টায় সাধারনত তিনি চা খান না। আজ কেন হঠাৎ চেয়ে বসলেন বুঝলাম না। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। উঠে দেয়ালে ঝুলে থাকা ঘড়িটার দিকে তাকালাম। বিকাল ৩টা বাজে। ঘুম ঘুম চোখে তাড়াতাড়ি চা করে নিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি সেখানে কেউ নেই। অবাক হলাম। প্রচন্ড গরম পড়ছে। দুপুরের রোদের তেজ এখনও কমেনি। পুরো বারান্দা জুড়ে টানা রোদ। এ অবস্থায় সেখানে কারো থাকাও অসম্ভব। কিন্তু আমি স্পষ্ট ওনার গলা শুনেছি। পরক্ষনেই মনে পড়লো,উনি তো এ সময় কলেজে থাকেন। আমি হয়তো ভুল শুনেছি ঘুমের মধ্যে।
আমি মহুয়া হাসান। ডাক নাম মহু। একটু বোকা ও লাজুক প্রকৃতির মেয়ে।আমি ওনার ছাত্রী। আমাদের গোপনে লাভ ম্যারেজ হয়েছে সপ্তাহখানিক হলো। আর বিয়েটা আমাদের কোন পরিবার মেনে নেয় নি।
আমার থেকে স্যার ১০ বছরের বড়। আমাকে খুব বোঝে এবং প্রচন্ড ভালোবাসে।আমি মাঝে মধ্যে অনেক ঝামেলা পাকিয়ে ফেলি।উনি রাগ না করে হাসি মুখে সব সমাধান করেন। আমি ওনার শখের নারী বলে কথা। যদিও অসম্ভব রকমের সুন্দরী আমি। তবে উনি আমার রুপের থেকে আমার বোকামিটাই বেশি পছন্দ করেন। আমাদের প্রেমটাও হয়েছিল আমার মস্তবড় একটা বোকামির কারনে। সেসব পরে বলবো।
ওনি আমার স্বামী তবুও ওনাকে আমি সবসময় স্যার বলে ডাকি। তবে মনে মনে ডাকি মিহির। বাসায় বা কলেজে যেখানেই হোক,ওনি দাঁড়িয়ে থাকলে আমিও দাঁড়িয়ে থাকি। ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারি না। লজ্জা ও ভয় দুটোই লাগে। আমার একটা স্বভাব আছে। আমি রাগলে বা ভয় পেলে কেঁদে ফেলি।
ডোর বেল বেজে উঠলো। এক দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললাম। স্যার আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘামে সারা শরীর ভিজে জবজব করছে। হাতে বড় এক বান্ডেল খাতা। উনি চেঁচিয়ে উঠলেন,
- সেই কখন থেকে বেল বাজাচ্ছি। কোথায় ছিলে এতক্ষণ?
আমি নিচু স্বরে বললাম,
-কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন?
- প্রায় আধা ঘণ্টা হাতে এতোগুলো খাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
-খাতাগুলো হাত থেকে নামিয়েও তো দাঁড়িয়ে থাকতে পারতেন।
আমার এমন কথায় স্যার যেন রাগে গিড়গিড় করতে লাগল।একে তো প্রচন্ড গরম।তার উপর এতগুলো খাতা নিয়ে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে।ওদিকে স্ত্রী তাকে ভিতরে ঢুকতে না দিয়েই দরজায় দাঁড়িয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করছে।
মিহির তেড়ে এলেন আমার দিকে। হাত উঁচিয়ে বললেন,
-বাসায় ঢুকতে দিবে নাকি দরজায় দাঁড় করিয়েই জেরা করবে। থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেয়া দরকার।
বলেই আমার হাতে খাতাগুলো ধরিয়ে দিয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে হনহন করে ভিতরে ঢুকে গেলেন।'থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেয়া দরকার' কথাটা শুনে আমি অভ্যস্ত। কথায় কথায় উনি এ কথাচা বলেন।এটা উনার মুদ্রা দোষ।
আমি আবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। সাধারনত উনি আমার উপর রেগে কথা বলেন না। কারন আমি কেঁদে ফেলি। কিন্তু আজ হয়তো একটু বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।
হাতে পরীক্ষার খাতা গুলো নিয়ে ওনার পেছনে পেছনে রুমে ঢুকলাম। রুমে ঢুকে আর কোন কথা না বলে মিহির বাথরুমে ঢুকে গেলেন। ভাবলাম, আজ হয়তো কাজের প্রেসার একটু বেশি গেছে। মিহির গোসল সেরে ফিরতেই খাবার টেবিলে তার পছন্দের ভুনা খিচুড়ী হাজির করলাম। তার আগে একটু হালকা মেকাপ দিয়ে একটা সুন্দর শাড়ি পরে সেজে নিলাম।কষ্ট দিয়েছি একটু মন সন্তুষ্ট তো করতে হবে। পছন্দের খাবার দেখে ভেবেছিলাম উনি আমার রান্নার প্রশংসা করবেন। আর ওমনি আমি কিছুক্ষণ আগের ঐ পাগলামিটা বলবো। কিন্তু ঘটনা ঘটলো তার উল্টো।একবার মুখে দিয়েই থু করে ফেলে দিলেন খাবারটা।
চোখ পাকিয়ে আমার দিকে ফিরে বললেন,
-এটা কী রেঁধেছো! গেলা যায়!
উঠে পড়লেন মিহির। আমি থ হয়ে ওর প্লেটের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। উনি জানেন তো আমি রাঁধতে জানি না।তাও রাঁধার চেষ্টা করেছি। আর আসিতো খেয়েও দেখেছি। একোটাও অখাদ্য নয় যে থু করে ফেলে দিতে হবে। পাকা রাঁধুনি বউ দরকার ছিল তো আমাকে প্রেম করে বিয়ে করার দরকার ছিল কি। একটা কাজের বেটিরে বিয়ে করলেই হতো। সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করলে তার থেকে বেশি কিছু আশা করা ঠিক না তা সে জানে না নাকি। মনে মনে এমন হাজারটা কথা বলে কিছুটা শান্ত হলাম। ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লাম। ভাবতে লাগলাম আজ আমার সাথে এসব হচ্ছেটা কী, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
মেঝটা পরিস্কার করে চোখ মুছতে মুছতে চলে এলাম বেডরুমে। হিমু চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে।আমিও পাশে গিয়ে অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম। আমার কান্না ক্রমেই বাড়ছে। ওনাকে দেখে যেন আরো বাড়ছে। সামলাতে পারছিনা। 'কাঁটার আঘাত সয় গো যার তার ফুলের আঘাত সয় না' গানের লাইনটা বারবার মনে পড়তে লাগলো। আমি ওনাকে এতো ভালোবাসি আর উনি আমার সাথে এমনটা করতে পারলো।আবার ভাবলাম, আমার বোকামিও তো কম নয়। তবু মন মানতে চাইল না। আমার কান্না দেখে উনি আমার বাহুতে হাত রেখে বললেন,
- কী হয়েছে?
আমি আর কান্না আটকে রাখতে পারলাম না। উচ্চস্বরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। পাশ ফিরে উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
- প্লিজ আমাকে মাফ করে দেন স্যার। খাবারটা এতোটা খারাপ হবে বুঝিনি।
আমার কথাটা শুনে স্যার অবাক হলেন ।
চলবে.....