দারসে কুরআন
হে বনী ইসরাঈল ৷১ আমার সেই নিয়ামতের কথা মনে করো, যা আমি তোমাদের দান করেছিলাম, আমার সাথে তোমাদের যে অংগীকার ছিল, তা পূর্ণ করো, তা হলে তোমাদের সাথে আমার যে অংগীকার ছিল, তা আমি পূর্ণ করবো এবং তোমরা একমাত্র আমাকেই ভয় করো ৷ (সূরাহ বাকারা ৪০)
ব্যাখ্যা:
১ . 'ইসরাঈল' শব্দের অর্থ হচ্ছে আবদুল্লাহ বা আল্লাহর বান্দা৷ এটি হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের উপাধি৷ আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি এ উপাধিটি লাভ করেছিলেন৷ তিনি ছিলেন হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামের পুত্র ও ইবরাহীম আলাইহিস সালামের প্রপুত্র ৷ তাঁরই বংশধরকে বলা হয় বনী ইসরাঈল৷ আগের চারটি রুকূ'তে যে ভাষণ পেশ করা হয়েছে তা একটি ভূমিকামূলক ভাষণ৷ এই ভাষনে সাধারণভাবে সমগ্র মানবজাতিকে সম্বোধন করা হয়েছে ৷ আর এখন এই পঞ্চম রুকূ' থেকে চৌদ্দ রুকু' পর্যন্ত যে ভাষণ চলছে, এটি একটি ধারাবাহিক ভাষণ৷ এই ভাষণে মূলত বনী ইসরাঈলকে সম্বোধন করা হয়েছে ৷ তবে মাঝে মধ্যে কোথাও কোথাও খৃস্টান ও আরবের মুশ্রিকদের দিকে লক্ষ্য করেও কথা বলা হয়েছে৷ আবার সুবিধামতো কোথাও হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতে সাড়া দিয়ে যারা ইসলামের ওপর ঈমান এনেছিল তাদেরকেও সম্বোধন করা হয়েছে৷ এ ভাষণটি পড়ার সময় নিম্নোক্ত কথাগুলো বিশেষভাবে সামনে রাখতে হবেঃ
একঃ পূর্ববর্তী নবীদের উম্মাতের মধ্যে এখনো কিছু সংখ্যক সত্যনিষ্ঠ এবং সৎবৃত্তি ও সদিচ্ছাসম্পন্ন লোক রয়ে গেছে৷ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে সত্যের আহবায়ক এবং যে আন্দোলনের মহানায়ক করে পাঠানো হয়েছে তাদেরকে তাঁর প্রতি ঈমান আনার এবং তাঁর আন্দোলনে শরীক হবার জন্য আহবান জানানোই এ ভাষণের উদ্দেশ্য৷ তাই তাদের বলা হচ্ছে, ইতিপূর্বে তোমাদের নবীগণ এবং তোমাদের কাছে আগত সহীফাগুলো যে দাওয়াত ও আন্দোলন নিয়ে বার বার এসেছিল এই কুরআন ও এই নবী সেই একই দাওয়াত ও আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন৷ প্রথমে এটি তোমাদেরকেই দেয়া হয়েছিল ৷ উদ্দেশ্য ছিল, তোমরা নিজেরা এ পথে চলবে এবং অন্যদেরকেও এদিকে আহবান জানাবে এবং এ পথে চালাবার চেষ্টা করবে ৷ কিন্তু অন্যদেরকে পথ দেখানো তো দূরের কথা, তোমরা নিজেরাই সে পথে চলছো না৷ তোমরা বিকৃতির পথেই এগিয়ে চলছো৷ তোমাদের ইতিহাস এবং তোমাদের জাতির বর্তমান নৈতিক ও দ্বীনি অবস্থাই তোমাদের বিকৃতির সাক্ষ্য দিয়ে চলছে৷ এখন আল্লাহ সেই একই জিনিস দিয়ে তাঁর এক বান্দাকে পাঠিয়েছেন এটি কোন নতুন ও অজানা জিনিস নয়৷ তোমাদের নিজেদের জিনিস৷ কাজেই জেনে-বুঝে সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করো না৷ বরং তাকে মেনে নাও৷ যে কাজ তোমাদের করার ছিল কিন্তু তোমরা করো নি৷ সেই কাজ অন্যেরা করার জন্য এগিয়ে এসেছে৷ তোমরা তাদের সাথে সহযোগিতা করো ৷
দুইঃ সাধারণ ইহুদিদের কাছে চূড়ান্ত কথা বলে দেয়া এবং তাদের দ্বীনি ও নৈতিক অবস্থাকে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরাই এর উদ্দেশ্যে৷ তোমাদের নবীগণ যে দ্বীনের পতাকাবাহী ছিলেন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে দ্বীনেরই দাওয়াত দিচ্ছেন- একথাটিই তাদের সামনে প্রমাণ করা হয়েছে৷ দ্বীনের মূলনীতির মধ্যে এমন একটি বিষয়ও নেই যেখানে কুরআনের শিক্ষা তাওরাতের শিক্ষা থেকে আলাদা- এ কথাই তাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছিল তার আনুগত্য করার এবং নেতৃত্বের যে দায়িত্ব তোমাদের ওপর অর্পণ করা হয়েছিল তার হক আদায় করার ব্যাপারে তোমরা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছ৷ এমন সব ঘটনাবলী থেকে এর সাক্ষ্য প্রমাণ পেশ করা হয়েছে যার প্রতিবাদ করা তাদের পক্ষে কোনক্রমেই সম্ভবপর ছিল না৷ আবার সত্যকে জানার পরও যেভাবে তারা তার বিরোধিতায় চক্রান্ত, বিভ্রান্তি সৃষ্টি, হঠধর্মিতা, কূটতর্ক ও প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছিল এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিশনকে সফলকাম হতে না দেয়ার জন্য যেমন পদ্ধতি অবলম্বন করছিল তা সবই ফাঁস করে দেয়া হয়েছে৷ এ থেকে একথা পরিস্কার হয়ে যায় যে, তাদের বাহ্যিক ধার্মিকতা নিছক একটি ভন্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়৷ এর পেছনে সক্রিয় রয়েছে বিশ্বস্ততা ও সত্যনিষ্ঠার পরিবর্তে হঠধর্মিতা, অজ্ঞতা মূর্খতাপ্রসূত বিদ্বেষ ও স্বার্থান্ধতা৷ আসলে সৎকর্মশীলতার কোন কাজের উন্নতি ও সমৃদ্ধি তারা চায় না৷ এভাবে চূড়ান্ত কথা বলে দেয়ায় যে সুফল হয়েছে তা হচ্ছে এই যে একদিকে ঐ জাতির মধ্যে যেসব সৎলোক ছিল তাদের চোখ খুলে গেছে এবং অন্যদিকে মদীনার জনগণের বিশেষ করে আরবদেশের মুশরিকদের ওপর তাদের যে ধর্মীয় ও নৈতিক প্রভাব ছিল, তা খতম হয়ে গেছে৷ তৃতীয়ত নিজেদের আবরণহীন চেহারা দেখে তারা নিজেরাই হিম্মতহারা হয়ে গেছে৷ ফলে নিজের সত্যপন্থী হবার ব্যাপারে যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ রূপে নিশ্চিত সে যেমন সৎসাহস ও দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলায় এগিয়ে আসে তেমনটি করা তাদের পক্ষে কোনদিন সম্ভব নয়৷
তিনঃ আগের চারটি রুকূ'তে সমগ্র মানবজাতিকে সাধারণভাবে দাওয়াত দিয়ে যেসব কথা বলা হয়েছিল সে একই প্রসংগে যে জাতি আল্লাহ প্রেরিত মুখ ফিরিয়ে নেয় তেমনি একটি বিশেষ দৃষ্টান্ত দিয়ে তার পরিণাম বর্ণনা করা হয়েছে৷ এভাবে বক্তব্য সুস্পষ্ট করার জন্য বনী ইসরাঈলকে বাছাই করার একটি বিশেষ কারণ রয়েছে৷ পৃথিবীর অসংখ্য জাতিদের মধ্যে বর্তমান বিশ্বে একমাত্র বনী ইসরাঈলই ক্রমাগত চার হাজার বছর থেকে সমগ্র মানবজাতির সামনে দৃষ্টান্ত হয়ে বেঁচে আছে৷ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করার পথে কোন জাতির জীবনে যত চড়াই উতরাই আসতে পারে তার সবগুলোরই সন্ধান পাই আমরা এ জাতিটির মর্মান্তিক ইতিকথায়৷
চারঃ মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীদের শিক্ষা দেয়াই এর উদ্দেশ্য৷ পূর্ববর্তী নবীদের উম্মাতরা অধপতনের যে গভীর গর্তে পড়ে গিয়েছিল তা থেকে উম্মাতে মুহাম্মাদ্বীকে রক্ষা করাই এর লক্ষ্য৷ ইহুদিদের নৈতিক দুর্বলতা, ধর্মীয় বিভ্রান্তি এবং বিশ্বাস ও কর্মের গলদগুলোর মধ্যে থেকে প্রতিটির দিকে অংগুলি নির্দেশ করে তার মোকাবিলায় আল্লাহর সত্য দ্বীনের দাবীসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে৷ এভাবে মুসলমানরা পরিষ্কারভাবে নিজেদের পথ দেখে নিতে পারবে এবং ভুল পথ থেকে দূরে থাকতে সক্ষম হবে৷ এ প্রসংগে ইহুদি ও খৃস্টানদের সমালোচনা করে কুরআন যা কিছু বলেছে সেগুলো পড়ার সময় মুসলমানদের অবশ্যি নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি বিখ্যাত হাদীস মনে রাখা উচিত৷ হাদীসটিতে তিনি বলেছেনঃ তোমরাও অবশেষে পূর্ববর্তী উম্মাতদের কর্মনীতির অনুসরণ করবেই৷ এমন কি তারা যদি কোন গো-সাপের গর্তে ঢুকে থাকে, তাহলে তোমরাও তার মধ্যে ঢুকবে৷ সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ইহুদি ও খৃস্টানদের কথা বলছেন? জবাব দিলেন, তাছাড়া আর কি? নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উক্তিটি কেবলমাত্র একটি ভীতি প্রদর্শনই ছিল না বরং আল্লাহ প্রদত্ত গভীর অন্তরদৃষ্টির মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছিলেন, বিভিন্ন নবীর উম্মাতের মধ্যে বিকৃতি এসেছিল কোন্ কোন্ পথে এবং ক্নো আকৃতিতে তার প্রকাশ ঘটেছিল ৷
হাদীসে রাসূল:
১৭। আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ হে আবু যার! যখন শাসকগণ নামায আদায়ে বিলম্ব করবে- তখন তুমি কি করবে? জবাবে আমি {আবু যর} বলি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ ব্যাপারে আমার জন্য আপনার নির্দেশ কি? তিনি বলেনঃ তুমি নির্ধারিত সময়ে একাকী নামায আদায় করবে। অতঃপর যদি তুমি ঐ ওয়াক্তের নামায তাদেরকে জামায়াতে আদায় করতে দেখ, তবে তুমিও তাদের সাথে জামায়াতে শামিল হবে এবং তা তোমার জন্য নফল হবে। (হাদীস নং-৪৩১)
১৮। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ লোকেরা মসজিদে পরস্পরের মধ্যে (নির্মাণ ও কারুকার্য নিয়ে) গর্ব না করা পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না। (হাদীস নং-৪৪৯)
১৯। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দেন এবং তা পবিত্র, সুগন্ধিযুক্ত ও পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন রাখারও নির্দেশ দেন। (হাদীস নং-৪৫৫)
২০। আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: আমার উম্মাতের কাজের বিনিময় (ছওয়াব) আমাকে দেখান হয়েছে- এমনকি মসজিদের সামান্য ময়লা পরিষ্কারকারীর ছওয়াবও। অপরপক্ষে আমার উম্মাতের গুনাহসমূহও আমাকে দেখান হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এ থেকে অধিক বড় কোন গুনাহ দেখিনি যে, কোন ব্যক্তি কুরআনের কোন আয়াত অথবা সুরা মুখস্ত করবার পর তা ভুলে গেছে। (হাদীস নং-৪৬১)
(আবু দাউদ শরীফ থেকে সংগৃহীত)
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন