জাতির পিতা অনেক স্বপ্ন দেখেছেন, কিন্তু আমার পিতা কোনও স্বপ্ন দেখেননাই। তিনি চেয়েছিলেন তার সন্তানেরা ভালো মানুষ হবে ভালো চাকরি করবে আর ভালো একটা দেশ গড়বে....তিনি মরার আগে দেখে যাবেন তার সন্তানেরা ভালো আছে... এই ইচ্ছাটুকু তার পূরণ হলো না। দেশকে নিয়ে যারা স্বপ্ন দেখেন তারা হয়ত শুধু ভূ-খণ্ড নিয়েই স্বপ্ন দেখেন, পতাকা নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, মানচিত্র নিয়েই স্বপ্ন দেখেন তাই দেশের মানুষ নিয়ে ভাবার সময় তাদের নেই। তারা কি জানেন দেশের মানুষই হচ্ছে দেশের আসল সম্পদ? আর এই সম্পদকে মানবসম্পদে পরিণত করতে পারলেই কেবল সম্ভব দেশের কল্যাণ!
আমার বাবার সে রকম গলাউঁচু করে বলার মতো কিংবা টেলিভিশনে গলাবাজি করে বলার মতো স্বপ্ন ছিল না, কিন্তু দেশের একজন নাগরিক হিসেবে তিনি যা চেয়েছিলেন তাতো দেশের অকল্যাণের চা্ওয়া নয়, তবে তা কেন তা পূরণ হলো না? তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেননি কিন্তু রাজাকারও ছিলেন না। দেশ আজ দু'ভাগে বিভক্ত একদল মুক্তিযোদ্ধা আর একদল রাজাকার। তাহলে আমাদের জায়গা কোথায়? মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দেশের সর্বত্রকতটুকু সুযোগ-সুবিধা তা আমি না বললেও যারা চাকরির বাজার থেকে শুরু করে সামান্য অটোগাড়ির লাইসেন্স বা মেইন রাস্তায় পারমিট পেতে চেষ্টা করেছেন তারা বুঝবেন। খুব হিংসা হয় কেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হতে পারলাম না। কেন বিসিএসে ৫৫ভাগসহ বিভিন্ন চাকরিতে সিংহভাগ কোটা দখলদারদের একজন হতে পারলাম না।...
যুদ্ধে যারা অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিৎ আছেও...কিন্তু সর্বত্র যখন শুধু মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার তখন ভাবি এ দেশে জন্ম নিয়ে কি তবে পাপ করলাম?
একটা ট্যাক্সি চালানোর পারমিট পেতেও মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট লাগবে?
এখন প্রশ্ন জাগে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের নামে এতসব সুবিধা বাগিয়ে নিচ্ছেন, তারাই কেন মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দিচ্ছেন...তা কি শুধু এই কারণে নয় যে স্পর্শকাতর এ ব্যাপারটি নিয়ে কেউ কিছু বলবে না বললেই দেশবাসী খেপে উঠবে অতএব যতো ফায়দা লুটে নেয়া যাবে একটা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট হলেই....
মুক্তিযোদ্ধা শব্দটার প্রতি আমাদের বিশেষ দুর্বলতা এবং শ্রদ্ধা আছে বলেই কি একশ্রেণির রাজনীতিবিদ এই চান্সটা নিচ্ছেন?
সুযোগবুঝে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে দিয়ে এখন অবৈধ ব্যবসারও প্রসার ঘটানো হয়েছে...যেমন এমএল কোম্পানি ডেসটিনি। কোটি কোটি মানুষকে পথে বসিয়ে এরা বিলাসবহুল গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়ায়...রফিকুল আমীন নিজে মুক্তিযোদ্ধা নয় কিন্তু ঢাল হিসেবে আমদানী করেছেন হারুণ সাহেবকে...কে ঠেকায় তার প্রতারণার ব্যবসাকে..
এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে...যেখানেই অবৈধ কাজ সেখানেই মুক্তিযোদ্ধা অথবা সেনা অফিসার....এনারা কি ব্যবহৃত হচ্ছেন? নাকি নিজেরাই জড়িত এসব অপকর্মে? বেশিরভাগ ভূমিদস্যু হাউজিঙ কোম্পানিগুলোর কর্ণধারসাইনবোর্ড হিসেবে রাখা হয়েছে সাবেক সেনা অফিসারদের। কেন?....হাসপাতালগুলোর অ্যডমিনস্ট্রিশনে আছে সেনা সংশ্লিষ্টরা...এর একটাই উদ্দেশ্য তাদের গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের রমরমা ব্যবসা।...
মাননীয় সরকারের কাছে এই বিজয়ের মাসে আমাদের আবেদন আমরা যারা স১৯৭১এ জন্মাইনি, পারিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট জোগাড় করতে তাদেরকে এ দেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদা দিন, নতুবা তাদের নাগরিকত্ব ক্যান্সেল করে শুধু মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের নাতিপুতিদের নিয়েই দেশ গড়ুন....এভাবে নিজের দেশে পরবাসী হয়ে থাকার চেয়ে নির্বাসনে যাওয়াই ঢের ভালো.....
হয়ত জাতির পিতা এমনই স্বপ্ন দেখেছেন.....
মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে তিনগুণ বেশি হবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা
একজন সুশিক্ষত নাগরিকের চেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা পাবে সেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্ত্রাসী-বখাটে-অমেধাবী সন্তান....