ঘুরে এলাম পীরগঞ্জ : জেনে আসলাম মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি এবং আধ্যাত্মিক পুরুষ হেয়াত মামুদ এর জীবনী
গত ৩১শে জুলাই ভোরবেলা পৌঁছে যাই রংপুরের পীরগঞ্জে।এটা আমার চতুর্থবার পীরগঞ্জ যাওয়া।পীরগঞ্জ পৌঁছে স্বপরিবারে অস্থায়ী হেলিপ্যাড থেকে সোজা চলে আসেন শ্বশুরবাড়ি।সেখানে আগে ডঃ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করে বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করেন।সেখানে বাংলার চিরচারিত নিয়ম ও অনুষ্ঠানের মাঝে বরণ করে নেওয়া হয় প্রথমবার পীরগঞ্জ আসা জয়ের স্ত্রী ক্রিস্টিনাকে। ঐ সময় আশেপাশের হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে বাড়ীর চারপাশে তাদের ছেলে জয়ের বৌ দেখতে। সেখানে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কুশল বিনিময় এবং খাওয়া দাওয়া করে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে নিয়ে যোগ দেন পীরগঞ্জের জনসভায়।জনসভায় পীরগঞ্জ পরিণত হয় জনসমুদ্রে।তার একটামাত্র কারণ ছিল সজীব ওয়াজেদ জয়। রংপুরসহ সারাদেশের মানুষ তাকিয়ে ছিল জনসভায় জয়ের বক্তব্য ও তার ভোটের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিয়ে।ঐদিনের জয়ের বক্তব্য আগামী সংসদ নির্বাচনের সময় রংপুর-৬(পীরগঞ্জ)থেকে তার প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত।আর এতে উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে যে নতুন মেরুকরণ হচ্ছে তা গত ৪/৫ দিন সেখানে থেকে বুঝেছি।প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সবাই ঐদিন সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে আসেন।আমারও রাতে ফিরে আসার কথা থাকলেও শামীম ভাইয়ের পরিবার ও পীরগঞ্জের বন্ধুরা সমস্ত পীরগঞ্জ বেড়াতে নিয়ে যাবে এই লোভ দেখিয়ে আমাকে আসতে দেয়নি।
যাই হোক পরের দিন বেড়িয়ে পড়লাম পীরগঞ্জ ঘুরে দেখতে।প্রথমে গেলাম সদ্য উদ্ভোধন করা পীরগঞ্জ ও দিনাজপুরের বিরামপুরের মাঝে সংযোগ স্থাপন করা জনগণের দীর্ঘদিনের দাবী ডঃ ওয়াজেদ মিয়া সেতুতে।অদ্ভুত সুন্দর স্থানে করতোয়া নদীর উপর সেতুটি বেড়ানোর জন্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের জন্য।
সেতুর স্থান থেকে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হেয়াত মামুদের সমাধিস্থলে।ঐখানে যাওয়ার আগে হেয়াত মামুদ সম্পর্কে তেমন কিছু জানতামনা।সেখানে কথা হয় স্থানীয় মাদ্রাসার প্রধান এবং মাজার মসজিদের মুয়াজ্জিনের সাথে।তাদের কাছে জানতে পারলাম হেয়াত মামুদ শুধু কবি নন তিনি উত্তরবঙ্গের অন্যতম ধার্মিক ও আধ্যাত্মিক সাধক।মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেব আমাকে নিয়ে গেলেন মাজার জিয়ারতের জন্য।মাজার জিয়ারত করার আগে মুয়াজ্জিন সাহেব আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন কিংবদন্তী "কাঁঠাল গাছ" এর সাথে।
শোনালেন হেয়াত মামুদের কিছু জীবনী এবং কাঁঠাল গাছটার কাহিনী।
কবি ও আধ্যাত্মিক পুরুষ হেয়াত মামুদ ১৬৮০ থেকে ১৬৯০ সালের মাঝে কোন এক বছর পীরগঞ্জের ঝাড়বিশিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।পিতা কবির মামুদ ও মাতা খায়রুন্নেসার আরও কোন সন্তান ছিল কিনা তা জানা যায় না।কবির পিতা ঘোড়াঘাট সরকারের দেওয়ান ছিলেন এবং ১৭২৩-২৭ সালের মাঝে বাগদ্বার পরগনার কাজী নিযুক্ত হন।ছোটবেলা থেকেই কবি হেয়াত মামুদ খুবই ধার্মিক ছিলেন।শত শত বছর যাবত সেখানকার মানুষেরা তাদের মুরুব্বিদের কাছ থেকে জেনে আসছেন আধ্যাত্মিক মানুষ হেয়াত মামুদ পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করতেন পবিত্র কাবা শরিফে।ধর্ম-বর্ণের হিসাবের বাইরে হেয়াত মামুদ মানুষের মঙ্গল কামনায় সারা জীবন কাজ করেছেন।সুফি সাধনার অনুরাগী কবি তার নৈতিকতা সম্পন্ন জীবনে রচনা করেছেন অসংখ্য কাব্য।সর্বজন স্বীকৃত এবং কবির কবরের গায়ে লিপিবদ্ধ ৪টি কাব্যগ্রন্থের কথা যায়--
১। জঙ্গনামা(১৭২৩ খ্রিঃ),
২।সর্বভেদবাণী বা চিত্ত উল্লাস বাণী’(১৭৩২ খ্রিঃ),
৩।হিতজ্ঞান বাণী(১৭৫৩ খ্রিঃ)
৪। আম্বিয়াবাণী(১৭৫৭খ্রিঃ)।
ধারণা করা হয় আনুমানিক ১৭৬০ থেকে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে উত্তর বাংলার এই সাধক কবি ইন্তেকাল করেন।তাঁকে কবর দেওয়া হয় একটা কাঁঠাল গাছের পাশে।
সাধক কবি হেয়াত মামুদ ইন্তেকালের ২০ বা ৩০ বছর পর একদল দুর্বৃত্ত হেয়াত মামুদের কবরের পাশের কাঁঠাল গাছটি কেটে নিয়ে যায় এবং বলে যায়,যদি হেয়াত মামুদ ধার্মিক বা আধ্যাত্মিক মানুষ হয়ে থাকে তবে আজ রাতের মধ্যে যেন কাঁঠাল গাছটি আগের অবস্থায় ফিরে যায়।কাঁঠাল গাছটি যে কাঁটা হয়েছিল সেই বিষয়টা আজকেও ভালভাবে বোঝা যায়।
যাইহোক,পরেরদিন ভোর বেলা স্থানীয় মানুষেরা দেখতে পায় কেটে নিয়ে যাওয়া গাছটি আগে যেমন অবস্থায় ছিল ঠিক সেইভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।যেন দুর্বৃত্তদের ছুঁড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করে কাঁঠাল গাছটি স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে সাধক কবি হেয়াত মামুদের আধ্যাত্মিকতার সাক্ষী হিসেবে।
সবথেকে বড় বিষয় গাছটি শত শত বছর যাবত একই রকমভাবে রয়েছে।মাজার সংলগ্ন মসজিদের সেই মুয়াজ্জিন সাহেবও তাতে সায় দিয়ে বললেন,তিনি নিজেও ছোট বেলায় যে অবস্থায় গাছটিকে দেখেছিলেন ঠিক সেইভাবে আজকেও রয়েছে।প্রচলিত আছে কাঁঠাল গাছের পাতা মানুষেরা বিভিন্ন নিয়ত করে খেয়ে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি খায় বা পাতাটি চিবিয়ে খায়।সবশেষে সাধক কবির কবর জিয়ারত করে সন্ধ্যার আগে ফিরে আসলাম পীরগঞ্জে।সাথে জেনে আসলাম উত্তরবঙ্গের অন্যতম একজন সাধক কবির জীবনী।
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন