আহ্ কত দিন হলো রাত জেগে আড্ডা দেয়া হয় না । এক সময় রাত জাগা ছিল আমাদের রুটিন ওয়ার্ক । এখন চাকুরির চিপা আর সংসারের ঠেলায় পড়ে রাতজাগার ফ্যান্টাসি আর হয় না ।
হল লাইফে আমরা কয়েক বন্ধু ছিলাম নিশি জাগা পাখি । তবে রাতের আড্ডায় সমস্যাও ছিল, রাত গভীর হলেই খিদেয় পেট চুচু করত । ইতিমধ্যে দোকানপাট সব বন্ধ । মাঝে মাঝে কারো রুমে চাল-ডাল মিলে গেলে বসিয়ে দিতাম খিচুরি- ইলেকট্রিক হিটারের চুলায় । আহ যেন অমৃত!
সবচেয়ে মুশকিল হতো সিগারেট ফুড়িয়ে গেলে । সেটারও একটা সমাধান ছিল । সিগ্রেটের নেশা মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে হল থেকে দলবেধে বেরিয়ে পড়তাম । ক্যাম্পাসের শিয়াল ডাকা নির্জন রাস্তায় হাটতে হাটতে পেয়ে যেতাম নাইট ডিউটিরত কোন গার্ডমামাকে । আমরা দুইটা চারটা করে ভাংতি সিগারেট কিনি, গার্ডমামারা আমাদের মত ফকির নয় । তাদের পকেটে থাকত বিড়ির পুরো বান্ডেল । শেষ রাতে গার্ডমামার সাথে আকিজ বিড়ি ফুকতে ফুকতে গল্প করার মজাই ছিল আলাদা ।
আগামিকাল চিটাগাঙে শিবিরের হরতাল । কক্সবাজার ট্যুর পিছিয়ে দিয়েছি, কাল সকালের শিপে যাব সন্দ্বীপ । শিপে বসে বসে সাগর আর কত দেখা যায়, তাই ঘুমানোর মাস্টারপ্ল্যান করে রেখেছি । আর এজন্যই আড্ডার পিনিক উঠেছে মাথায় ।
আমাদের বাঙালীর আড্ডা মানেই রাজনীতির ভেতর এক পর্যায়ে পলিটিক্স ঢুকিয়ে ছ্যাড়াবেরা কারবার । তবে পলিটিক্স নিয়ে আম্রিকার পপুলার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির একটা কথা মনে পড়ছে । মিঃ কেনেডি তার প্রতিটা বত্তৃতায় কবিতার উদ্ধৃতি দিতেন । তিনি বলতেন, পলিটিশিয়ানদের আরো বেশি কবিতা পড়া উচিত । এবং কবিদের আরো বেশি পলিটিক্সে আসা উচিত । কারণ কবিরাই ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানে ।
আমাদের দেশে রাজনীতিবিদ কবির কথা উঠলেই বদমাশ বিশ্বলুচ্চা লেজেহোমো'র গাধামার্কা মুখটা ভেসে উঠে । তার শাসনামলে প্রতি রাতে টিনটেড কারে কোন না কোন নায়িকা, গায়িকা, খবর পাঠিকা কিংবা উঠতি সমাজসেবিকা সমবিহারে ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াত । পেছনে থাকত সিকিউরিটি ফোর্স । লোভী মানুষের তো এদেশে কোন অভাব নেই, তাই তার নতুন নতুন মধ্যবয়সী ড্রাইভ পার্টনার পেতেও কোন সমস্যা হতো না । আধুনিক বারলুসকোনিরা তার কাছে ছিল নস্যি । রাসপুটিন আর ভগবান রজনীশকেও থেমে যেতে হয়েছিল, কিন্তু লেজেহোমো এখনো চলমান । সবচেয়ে মজার খবর হলো, তার কবিতা নাকি লিখে দিত কবি ফজল শাহাবুদ্দিন ।
নাহ বিশ্বলুচ্চার কথা থাক, তারচেয়ে তরুণ সমাজের কথা বলি । আমাদের ছোটবেলায় মাঝরাতের বীভিষিকা ছিলেন প্রতিবেশি দোলন কাকা । গভীর রাতে হেলতে দুলতে নবাব সিরাজউদ্দৌলার ডায়লগ দিয়ে চারপাশ কাঁপিয়ে তিনি বাড়ি ফিরতেন । শুঁড়িখানা থেকেই কয়েকটা কুকুর তার সঙ্গী হত আর কাকার ডায়লগের গ্যাপে গ্যাপে ঘেউ ঘেউ করে ডেকে উঠত । মদ খাওয়ার পর কি অসীম তেজ, কি ঝাঁঝ থাকতো তার কথায় । সিনা টানটান করে নবাবের মত হেটে যেতেন । তখন স্বপ্ন দেখতাম বড় হয়ে তার মত হব । তার মত মানুষ কি চাইলেই হওয়া যায়! তরুণ বয়স থেকেই তিনি ছিলেন কঠিন পানাসক্ত । কিন্তু দেশমাতৃকা যখন ডাকলো ৭১ এ, তিনি ঠিকই ঐ ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন । অসীম সাহসী এই মুক্তিযোদ্ধা দেশ স্বাধীন করে তবেই ফিরেছিলেন ।
অথচ আজকালকার পোলাপানদের দেখেন, ডাইল-হিরোইন-ইয়াবা চিবিয়ে একেকটা ফার্মের মুরগীর মত শুধুই ঝিমায় ।
হল লাইফের শেষের দিকে নেতা বন্ধুদের সাথে খুব খাতির হয়েছিল । তখনই দেখেছিলাম দল আর লীগের নেতারা গোপন লিঁয়াজুর মাধ্যমে কিভাবে রাজনীতি করে । তো একবার তাদের রাতের আড্ডায় আমাকে নিমন্ত্রণ করলো । একজন কন্ট্রাক্টর গভীর রাতে কার নিয়ে হলে আসলো । উপঢৌকন হিসেবে ছাত্রনেতাদের জন্য সে তিন বোতল ফরেন নিয়ে এসেছে । গাড়ি থেকে নামার পর ঐখানেই দাঁড়িয়ে আমরা আড্ডা দিচ্ছি । সে গাড়ীর ব্যাকডালা থেকে ফরেন মাল নিয়ে যেতে বললো । নেব নিচ্ছি করে তার সাথে আড্ডা চালিয়ে যাচ্ছি । ফরেন মালের কথা শুনে আমিতো উত্তেজনায় ঘামতে শুরু করেছি । হঠাৎ ইউনিভার্সিটির একটা মাইক্রো এসে কিছুটা দুরে দাড়ালো । নেতারা বললো, সমস্যা নেই প্রক্টর স্যার এসেছে । প্রক্টরের কথা শুনেই ঐ কন্ট্রাক্টর এক লাফে গাড়িতে চড়ে দিলো টান । আমরা পেছন থেকে চিৎকার করতে থাকলাম, কোন সমস্যা নাই ভাই । কে শোনে কার কথা! হায়হায় ব্যাকডালা থেকে তো ফরেন মাল নামানো হয়নি!! একেকজন মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়লো, আপচুচ, আপচুচ!!!
আপচুচের গল্প দিয়েই পোস্ট শেষ করি । তবে আড্ডা চলতে থাক, যে কোন বিষয় নিয়ে..