এই পর্বে আমি বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান লেখক মানিক বন্দোপাধ্যায়ের একটি জনপ্রিয় এবং কালজয়ী উপন্যাসের অবিনশ্বর চরিত্রের 'লুলমর্টেম' করিবো । তবে 'লুল' শব্দটাকে 'রসিক প্রেমিক' 'রসিক মানুষ' কিংবা কিন্চিত 'আলু-দোষ পূর্ণ প্রেমিক' জাতীয় ধনাত্মক অর্থবোধে গ্রহন করিবার জন্য অনুরোধ করিবো । প্রিয় 'মানিক দা'র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক আমি ইহা শুরু করিলাম ।
কুবের মাঝি : পদ্মা নদীর মাঝি
আমরা জানি মানিক বন্দোপাধ্যায় মার্কসবাদের শিষ্যত্ব গ্রহন করেছিলেন । কিন্তু তিনি তার আদি গুরু ফ্রয়েড সাহেবের কথা কখনও ভূলিতে পারিতেন না । 'কমিউনিজম' তার স্বপন-জাগরন-চিন্তা-চেতনায় শিকড় গাড়িলেও তিনি কখনোই উপেক্ষা করিতে পারেন নি ফ্রয়েডীয় দর্শনের মূল চেতনা- যৌন-জৈব চাহিদার কথা । 'পদ্মা নদীর মাঝি' উপন্যাসে তাই আমরা দেখি, মসৃন ত্বকের পঙ্গুবধু মালা কুবের মাঝিকে আকর্ষন করিলেও যৌবনাবতী শ্যালিকা কপিলার প্রতি অবৈধ ভালোবাসা আর সম্পর্ককে সে কিছুতেই অগ্রাহ্য করিতে পারেনা ।
পদ্মার মতোই রহস্যময়ী কপিলা কখনো অবাধ্য বাঁশের কন্চির মতো নুয়ে পড়েছে কুবেরের দিকে । আবার কখনো সোজা হইয়া কুবেরের কাছ হইতে সরিয়া গিয়াছে তার নিজের স্বামীর দিকে । পদ্মার গভীরতার মতোই কপিলার মন আর দেহের তল পাওয়া কুবেরের মতো পাকা মাঝিরও অসাধ্য হইয়া যায় ।
প্রিয় লুল ভ্রাতা-ভগিনিরা আমরা এখন উপন্যাসের চতুর্থ পর্বে প্রবেশ করিবো, যেখানে অকাল বানের পানির লাহান যৌবনাবতী কপিলার আগমন । কুবেরের শ্বশুড়ের গ্রাম আকষ্মিক বন্যায় তলিয়া যায় । তাহাদের সৌজন্য খোজ-খবর নিতে গিয়ে সদ্য স্বামী-খেদানো সদা হাস্য-লাস্য শ্যালিকা কপিলার উপর নজর পড়ে কুবেরের । প্রথমে নির্দোষ চিরকালীন শ্যালিকা-দুলাভাইয়ের ঠাট্টা-মশকারা, ইশারা-ইংগিতেই ব্যাপারটা সীমিত ছিলো । কিন্তু কুবের কাঁচা বয়সী কপিলার "হাসছো কেনো মাঝি?" প্রশ্নের যুৎসই উত্তর কুলকিনারা করিতে পারিলোনা । এই বিভ্রান্তির মাঝেই যৌবনাবতী কপিলাকে নিয়ে কুবের স্বগৃহে প্রত্যার্পন করিলো । কিন্তু কি সর্বনাশ সংগী করিয়া নিয়া আসিলো তাহা কিছু বাদেই টের পাইবেন ।
কুবের পদ্মার তীরে নিরালায় একাকী মৎস্য আহরনে ব্যস্ত । তখনই কপিলা তাহার পিছু পিছু আসিয়া এমনই অট্টহাসিতে ফাটিয়া পড়ে, কুবের ভয়ে আধমরা হইয়া যায় । তারপরেও কপিলা খুঁচানোর সুযোগ ছাড়েনা, "ডরাইছিলা হ ?? আরে পুরুষ" !! :!>
"আমারে নিবা মাঝি লগে" ? এই বলিয়া কুবেরের হাত ধরিয়া টানাটানি করিয়া ইশারায় দুরে কোথায় যেন লইয়া যাইতে বলে । পুরুষালীর আঁতে ঘা লাগা কুবের এইবার জ্বলিয়া উঠে । কপিলাকে জড়াইয়া ধরিয়া বাঁশের কন্চির মতো এদিক-ওদিক হেলাইয়া-দুলাইয়া কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বলে, 'বজ্জাতি করস যদি, নদীতে চুবান দিমু কপিলা' । কপিলা কুবেরের পৌরুষের বাত্তি দপ করে পুরোপুরি জ্বালিয়া দিতে আবার বলে, 'আরে পুরুষ' !!
('পদ্মা নদীর মাঝি' সিনেমায় কুবের সত্য সত্য ব্লাউজলেস কপিলাকে পানিতে অনেকক্ষন ধরে চুবায় )
কপিলা শুধু লীলাখেলা আর মউজ-মস্তিতেই পটু নয়, কুবেরের ভাগ্যে অশেষ সেবাও জুটিতে থাকে । সেই সেবার সহিত সুযোগমত ঢলাঢলি-মাখামাখি, চিমটি কাটা, চুল-গোঁফে টান আর রহস্যময় হাস্য-পরিহাসের পর্ব চলিতেই থাকে ।
এইরকম সুখে-আহলাদে দিন কাটিতে কাটিতে একদিন একখান বিষম ঝড় আসিয়া সারা গ্রাম লন্ডভন্ড করিয়া দিলো । সেই ঝড়ে কুবেরের মাইয়া গোপী পায়ে ব্যথা পাইলো । পায়ের ব্যাথা যখন চরমে উঠিলো তখন তাহাকে লইয়া একদিন কপিলা সমেত কুবের মহুকুমা হাসপাতালে রওয়ানা হইলো । এই পর্যন্ত পড়িয়া যাহারা বিরক্ত হইয়া ক্লান্ত চোখে-মুখে হাই তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাহাদের বলি, কাহিনিতো মাত্র শুরু হইলো ।
গোপীকে হাসপাতালে ভর্তি করিতেই সন্ধ্যা ঘনাইয়া আসিলো । নানান ঘটনা শেষে কুবের তাহার মেয়েকে হাসপাতালে একা ফেলিয়া যাইবেনা বলিয়া মনস্থির করিলো । কপিলাও তাহার সাথে জেদ ধরিলো এই রাত্রি থাকিয়া যাইবে বলিয়া । কুবের তাহাতে রাজি না হইলে কপিলা তাহার মোক্ষম অস্ত্র প্রয়োগ করিলো, আরে পুরুষ !! কপিলার জেদের কাছে পরাভূত হইয়া অবশেষে কুবের তাহাকে রাখিতে রাজি হইলো । কিন্তু এই যৌবনাবতী অগ্নিকন্যার সাথে কুবের কোথায় রাত্রিযাপন করিবে ?? পরিশেষে অনেক ভাবিয়া কুবের একটা ঝুপড়ি হোটেলের রুম বুকিং করিলো । সেই রুমের পুরো মেঝে জুড়িয়া মাত্র একখান পাটি পাতা আছে । সেই পাটিতেই তাহারা একত্রে রাত্রিযাপন করিলো । :#>
কুবের-কপিলা সারারাত ঝুপড়ি ঘরের এক পাটিতে কি কি করিয়াছিলো, তাহা আমি জানিনা । আমাকে এই প্রশ্ন করা নিতান্তই অমূলক এবং অবান্তর । মানিক বন্দোপাধ্যায় ইহা জানিয়া থাকিতে পারেন । আপনারা বরং মানিক দাদাকেই জিজ্ঞেস করে দেখুন ।
************************************
অট:১- উদ্ভীন্ন যৌবনা কপিলার রুপ বর্ননায় মানিক তাহাকে বারংবার বেগুনী শাড়িতে দেখিয়েছেন । বেগুনী কি তাহলে 'লুল' দের প্রিয় রঙ ??
অট:২- মানিক বন্দোপাধ্যায় নিজেই গুরুচন্ডালীতে দুষ্ট ছিলেন । আর এই নগন্য পোস্ট লেখক কোন ছাড়
************************************
এই সিরিজের আগের 'লুলমর্টেম'
বাংলা সাহিত্যের চিরায়ত লুল নায়কেরা : শ্রীকান্ত-দেবদাস পর্ব ।
ক্যুইজ: কে অধিক 'লুল' ?? শ্রীকান্ত, দেবদাস না কুবের মাঝি ???