somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে পাখীর ছায়া নেই...

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খালেক চাচা, ফেরী ঘাটের আমার সবচেয়ে পছন্দের মাঝি, আমাকে দূর থেকেই চিনতে পারল। সে আমাকে ফরমাল স্যুট পরা দেখে খুব মজা পেল মনে হল। তারচেয়ে অবাক হল, নীতুকে দেখে। আমি তার চোখের দিকে তাকালাম, আমাদের দুজনকে আবার একসাথে দেখে সে কি বুঝতে পারছে গত আটটি মাস কি ঝড় পাড়ী দিয়ে আজ আমরা আবার এই বুড়িগঙ্গা পাড়ে বেড়াতে এসেছি ! খালেক চাচা, নৌকার রশি টেনে ধরে আমাকে আর নীতুকে নৌকায় উঠতে সাহায্য করল, আমি তার হাতে একটা নতুন চকচকে একশো টাকার নোট গুজে দিলাম। একবার সে সেদিকে তাকিয়ে হাসল। টাকাটা পকেটে রাখতে রাখতে বলল, কোন তাড়াহুড়া নেই। আপনারা অনেক দিন পর এসেছেন, যতক্ষণ ইচ্ছে ঘুরে আসেন। শুধু বালুর স্টীমার গুলো থেকে একটু সাবধানে থাইকেন।

আমরা দুজনেই হেসে তাকে বিদায় জানালাম। আমি বৈঠা পানিতে নামালাম। নীতু আর আমি একসাথে দূরে ভেসে যেতে লাগলাম।

" অনেক দিন পর। আমি নৌকাভ্রমণ অনেক মিস করেছি, মিহির " সে বলল।
" রাহুল, " আমি তার দিকে না তাকিয়েই শুধরে দিলাম।
" কি ? আমি কি মিহির বলেছি নাকি ? ওহ সরি। আমি খুবই সরি। আমি আসলে বলতে চাই নি... "
" না, ঠিক আছে, " আমি বললাম।

আমি নৌকা অপর পাড়ে নিয়ে গেলাম। বৈঠা অনেক ভারী মনে হচ্ছে । আমার বাহু আগে যখন প্রতিদিন বাইতাম তখকার মত শক্তিশালী নেই । অনেক দূরে সদরঘাট দেখা যাচ্ছে । লঞ্চের ভেপু ভেসে আসছে । নদীর পানি খুব শান্ত । আমি বৈঠা তুলে রেখে, নৌকার মাঝে একটু দুরুত্ব রেখে তার পাশে গিয়ে বসলাম।

" কি ভাবছো, ওদিক তাকিয়ে " আমার দৃষ্টি অনুসরণ করল সে ।
" খুব ইচ্ছে করছে, ওখানে গিয়ে সব থেকে বড় লঞ্চে করে তোমাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাই। "
" যাহ ! তা হয় নাকি, তুমি জানো আমি মিহিরের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ । তাছাড়া আমরা দুজনে খুবই ভাল আছি। "
" ...কিন্তু আমি ভাল নেই । আমার কি অধিকার নেই, ভাল থাকার ? আমি ভাল থাকতে চাই ? "
" তুমিও ভাল আছো রাহুল । আর তুমি আমার সব থেকে ভাল বন্ধু । "
" আমি বন্ধু শব্দ আর শুনতে চাই না । আমি এরচেয়ে বেশি চাই । "
" দেখো সূর্যটা কি সুন্দর দেখাচ্ছে । একটু পরেই সন্ধ্যে নামবে । এরপর রাত, রাত শেষে ভোর, নতুন সূর্য... নতুন দিন । " পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে সে বলল।
" নতুন ভোর । তবে কি আমি আশা করতে পারি । "
" উহু ! কথা বলো না। শুধু দেখ... "

আমি একবার তাকালাম । গোধূলী বেলার সূর্যটা আসলেই সুন্দর । নদীর জলে সূর্যটার একটা ছায়া পড়ছে । মাঝে মাঝে ছোট ছোট ঢেউ এসে, এই সূর্যটাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে আমি নীতুর দিকে তাকালাম। এই সুন্দর গোধুলী বেলার চেয়ে সে হাজার গুণ সুন্দর । সে একটু হেসে দিলে, আমি পুরো দুনিয়া ভুলে যেতে পারি। আমি তাকে দেখতে লাগলাম।

সূর্যটা ডুবে যাওয়ার পরও বেশ খানিকটা সময় নিঃশব্দে কেটে গেল।

" এই ! তুমি আমার দিকে এমন ভাবে কি দেখছ । কি দেখছো ? " সে বেশ অবাক হয়ে বলল।
" তোমাকে দেখছি । তুমি আমার হলে, আমার পৃথিবীতে সন্ধ্যা আসত না। গোধুলী হত না। "
" আমাকে নতুন দেখছ মনে হয় ! "
" হু... তুমি সব সময়ই নতুন। " আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কি ! স্নিগ্ধ... ! কি ! অপূর্ব... !
" হয়েছে । চল, ফিরে যাওয়া যাক । বাবা তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে যেতে বলছে। সন্ধ্যার পর বাইরে থাকলে সে ইদানিং খুব চিন্তা করে। "
" আর মিহিরের সাথে আশুলিয়া গিয়ে তার অফিস পার্টিতে ডিনারে এটেন্ড করলে তখন চিন্তা করে না, তাইতো ।"
" আহ ! রাহুল, তুমি কি এই বেলা আমাদের মাঝে মিহিরকে টেনে না এনে পারো না ? "
" না, পারি না । সে আমার আর তোমার মাঝে অদৃশ্য দেয়াল হয়ে আছে । আমি এই দেয়ালটা সহ্য করতে পারছি না । শুধু তোমার, একবার তোমার দিক থেকে অনুমতি পেলে, এই দেয়াল আমি ভেঙ্গে গুড়োগুড়ো করে ফেলব । "
" আহ ! কি হল, এমন ভাবে বলছ কেন ? সে না তোমার বন্ধু ? "
" ... বালের বন্ধু । " আমি রাগ কন্ট্রোলে রাখতে পারলাম না।

নীতু, চুপ করে রইল। আমিও আর কথা বাড়ালাম না। যতক্ষন সূর্যটা ডোবার পরেও চারপাশ দেখা যাচ্ছিল। সন্ধ্যা হয়ে এলে, আমি পকেট থেকে লাইটার আর সিগারেট বের করে ধরালাম।
" অনেক হয়েছে চল যাওয়া যাক। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে । " নীতু আস্তে করে বলল ।
" আর একটু পরে ফিরব । তার আগে আমার একটা জিনিস চাই । সে পেয়ে... " আমি পাশে রাখা বৈঠার দিকে তাকিয়ে বললাম।
" আমার কাছে চাওয়ার মত তোমার নতুন কিছু নেই, যেটুকু দেওয়ার আমি তার সবই দিয়েছি । যেটুকু দিতে পারিনি, সেটুকু মিহিরের... " বলে সে আমার গাল টেনে দিল।
" আমি তোমার ভাগ কাউকে দিতে রাজি নই। আমি ওটুকুও চাই... "
" তা হয় না। মশাই, সে টুকু মিঃ ব্যাংকার মিহির সাহেবের জন্য সংরক্ষিত " বলে সে তার কনুই দিয়ে আমার পেটে গুতো দিল।
" খন্ডিত কিছু পেতে আমি রাজি নই । আমার ওটুকুও চাই... "
" তুমি কি জোর করবে... " সে আমার চোখের দিকে তাকাল।
" যদি তুমি না চাও, আমি তাই করি... " তার হাত ধরে, তাকে আমারদিকে টানলাম।
.
(চলবে...)
(একটি বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে )
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×