হে কর্মবীর,
আপনি কিছু কর্ম করেছেন। এই কর্ম বীরত্বের কর্ম। বীর ছাড়া এইভাবে আমাদের কেউ বিপথগামী বলতে পারে না। আমরা গাঁজা খেলে আপনি কিছু বলতেন না। মদ খেলেও না। তাসপাশা খেললে না। আমরা গোপনে নেটে বসে সানি লিওন দেখলে আপনার কোন আপত্তি ছিল না। ফেসবুকে আমরা লক্ষ লক্ষ কোটি ঘন্টা অপব্যায় করি। আপনি কিছু বলেননি।
আজকে নিজের নিজের পেশা ছেড়ে, পড়ালেখা শিকায় তুলে, জীবন বাজি রেখে আমরা বাংলাদেশের উপর অত্যাচারের পূর্ণ বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম জনাব।
জনাব আমরা শুধু এটুকু বলেছিলাম, সাড়ে তিনশত হত্যা প্রমাণিত হলে ওই অপরাধীর ফাসি প্রাপ্য। আমরা শুধু এটুকু বলেছিলাম, যারা একাত্তরের হাতিয়ার আবার বাংগালির উপর চালাতে চায় তাদের নিষিদ্ধ কর। বলেছিলাম, আমাদের দেশকে কেন তোমরা দুই মাস ধরে গৃহযুদ্ধে ঠেলে দেয়ার হুমকি দিচ্ছ?
জনাবেষু, এতে আমাদের পাপ হয়েছে। রাতে সানি লিওন না দেখে বুক চিরে বাংলা মাকে ভালবেসেছি। এতে আমাদের অপরাধ হয়েছে। আমরা বিপথগামী।
হে সুহৃদ,
আমরা মানপত্রে আজীবন মুখে বলে এসেছি সুহৃদ। কিন্তু কখনো সুন্দর হৃদয়ের দেখা পাইনি। সুহৃদ, আপনার হৃদয় আজকে বাংলাদেশের পোড়া পতাকার চিত্র হয়ে রইল। আপনার হৃদয় আজকে ভাংগা সব শহীদমিনার হয়ে রইল। আপনার হৃদয়ের ধ্বণি শুনতে পাই চট্টগ্রামে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে ঝাঁপিয়ে পড়া সব যুদ্ধ শিবিরের সব বীরের মুখে মুখে। আপনার হৃদয় ওইসব পিস্তলের বাঁটে বাঁটে, যেখানে চাপ পড়াতে চৌচিড় হয়ে গেছে দশজন সাংবাদিকের হাড়। আপনার কথা আজকে মলম হয়ে বিঁধে আছে সহকর্মীদের স্প্লিন্টার মাখা গায়ে। বাইতুল মুকাররামের পোড়া কার্পেটের তলায়।
আপনি আজ আমাদের বিপথগামী বলেছেন।
উদারেষু হে,
আপনার ওউদার্য ছাড়িয়ে গেছে সর্বকালের সব বাঁধ। আপনি বলেছেন, আমরা ফ্যাসিবাদী। সেই প্রথম থেকেই বলেছেন। আজো পুনরুচ্চারণ করেছেন। কারণ মাত্র একটা, আমরা ফাঁসি চেয়েছি প্রমাণিত সাড়ে তিনশ হত্যাকারীর, আমরা নিষিদ্ধ চেয়েছি জামাত ও শিবিরের।
আমাদেরকে ফ্যাসিবাদী বলার মাধ্যমে একাত্তরের পাক পবিত্র রাজাকার বাহিনীর প্রতি দেখানো উদারতা জাতি মরে গেলেও ভুলবে না।
হে ক্ষণজন্মা,
আপনি স্বয়ং ক্ষণজন্মা। আপনাকে টিভিতে যারা দেখেছে, এমনকি তারা সবাই ক্ষণজন্মা। কারণ আজ থেকে একশ বছর পর আজকের চার বছর বয়েসি ছেলেটাও বলতে পারবে, জানিস দাদু, আমি মাহমুদুর রহমানের লাইভ টেলিকাস্ট দেখেছিলাম ওই সময়।
আতকে উঠবে নাতি।
প্রিয়তমেষু, আমরাও ক্ষণজন্মা। আমরা নিরো দেখিনি, এজিদ-সীমার দেখিনি, চেঙ্গিস খা, মীর জাফর, ঘষেটি বেগম, রায়দূর্লভ, রাজবল্লভ, হিটলার, গোলাম আযমকেও ইন একশন দেখিনি।
আমাদের পরম সৌভাগ্য প্রিয়তমেষু, আপনাকে দেখেছি।
আর পরমতম সৌভাগ্য, আপনার চোখের তারায় দেখা পেয়েছি তাঁদের।
হে জনসমর্থিত,
মির জাফরকে সমর্থন করা যায়। ঘসেটি বেগমকে সমর্থন করা যায়। এজিদকে সমর্থন করা যায়। বুশকে সমর্থন করা যায়। গোলাম আজমকে সমর্থন করা যায়- তাহলে মাহমুদুর রহমানকে কেন সমর্থন করা যাবে না?
নন্দিতহে, আপনি আমাদের আরো দর্শনদানে বাধিত করুন। আপনার অকরুণ বাণী বারিধারার মত বর্ষিত হোক এই জাতির উপর।
গুণমুগ্ধ,
শাহবাগের বিপথগামী জনতা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৪৫