''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
একটা সময় ছিল যখন কারও সামনে ধর্ষণ শব্দটা খুব নিচু গলায় উচ্চারণ করতাম, লজ্জাজনক একটা শব্দ ছিল। সময় পাল্টে গেছে। এখন বেশ উচু গলাতেই শব্দটি উচ্চারিত হয়। কারন বর্তমান সময়ের আলোচিত এবং সর্বাধিক উচ্চারিত শব্দ হচ্ছে "ধর্ষণ "
ইতোমধ্যেই এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কেউ দায়ী করছেন মানসিকতাকে, কেউ দায়ী করছেন পোষাককে, কেউ দায়ী করছেন ধর্মীয় অনুশাসন অগ্রাহ্য করাকে। আর আমরা হয়েছি দ্বিধাগ্রস্ত, আসলে কে দায়ী?
আসলে সব কয়টা কারনই দায়ী।
কোনটাই শুধুমাত্র কিংবা পুরোপুরি দায়ী নয়।
পশ্চিমা দেশগুলোতে মেয়েরা বিকিনি পরে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, কেউ ফিরে ও তাকাচ্ছে না, কোন মন্তব্যও করছেনা। আরব দেশগুলোতে মোটা কাপড়ের ঢিলা বোরখা পরছে, হাতে পায়ে মোজা লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদেরকেও কেউ সেকেলে বা ব্যাকডেটেড বলে গালি দিচ্ছে না। সমস্যাটা হয়ে গেছে আমাদের দেশেই।
অনেকেই বলছেন আমাদের মানসিকতায় সমস্যা। ওই দেশে ওইরকম খোলামেলা চলে কেউ কিছু বলেনা, আমাদের দেশেই সমস্যা। আমিও স্বীকার করছি আমাদের মানসিকতা এখনো অতদুর যায়নি। তবে একটা বিষয় জানেন কি, আমেরিকা ফ্রি সেক্সের দেশ, সেখানে যার যাকে খুশি, যখন খুশি, যেভাবে খুশি, যেথায় খুশি...... নিয়ে যায়। কেউ কিচ্ছু বলেনা। কিন্তু তারপরও দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমেরিকায় প্রতি ৩ সেকেন্ডে ১ জন নারী ধর্ষিতা হয়। কি বলবেন তাহলে?
আরব দেশগুলোতে ধর্ষণের শাস্তি খুবই কঠোর।
সেসব দেশে গুলোতে নারীদের ক্ষমতা সম্পর্কে আপনি ভাবতেই পারবেন না। আমার এক ভাইস্তা বাহরাইন ছিল, বললো সেদেশে মেয়েদের ধর্ষণ তো থাক, কোন মেয়ে যদি পুলিশকে কেবল নালিশ করে ওই ছেলে আমার দিকে এইভাবে তাকিয়েছে বা বাজে ইঙ্গিত করেছে, মুহর্তেই তার থোবড়া পাল্টে দেবে পুলিশ। ফলাফলও ভাল। সেসব দেশে ধর্ষণের হার খুবই নগন্য।
আমাদের দেশে ধর্ষণপুর্বক খুন এখন যেন একটা সংস্কৃতিতে পরিনত হতে যাচ্ছে। খবরের পাতা খুলে ধর্ষণের নিউজ না দেখলেই বরং অবাক হই। কারন এখানে কোন মেয়ে ধর্ষিতা হলে প্রথমেই আমরা খোঁজ নেই, কোথাকার মেয়ে? হিন্দু নাকি মুসলিম? তখন রাত নাকি দিন ছিল? মেয়েটা বোরখা পরা ছিল, নাকি বোরখা ছাড়া? তারপর সুবিধামত পক্ষ নিতে থাকি। এ তো গেল জনগনের দিকটা।
আর ধর্ষণের পর পুলিশ এবং প্রশাসন প্রথমেই দেখে মেয়েটা কে? প্রভাবশালী কিংবা ভিআইপি নাকি? আসামী কে? প্রভাবশালী রাজনৈতিক লিডার কিংবা পয়সা ওয়ালা নাকি? তারপর তারাও সুবিধামত পক্ষ বেছে নেয়। এভাবেই বিচারের বাণী কিতাবের ভিতর গুমরায়।
একসময়, বাংলা সিনেমার একটা কমন ব্যাপার ছিল, ভিলেন কোন নায়িকার সামনে গেলেই বুঝতাম এখন একটা ধর্ষণের দৃশ্য আসবে। নায়িকার ওড়না বা শাড়ি ভিলেন একটানে খুলে ফেলে লোভাতুর দৃষ্টিতে তার শরীরের দিকে তাকাবে। তার লালসাপুর্ন নজর দেখেই নায়িকা বলে উঠবে, ছেড়ে দে শয়তান, তুই আমার দেহ পাবি কিন্ত মন পাবি না। তারপর আবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে গেলে আরেক দফা ধর্ষণ করে। জানিনা এখন কি অবস্থা। তাহলে কি শিখছি আমরা!
আমাদের মানসিকতায় আসলেই কিন্তু সমস্যা আছে। বিজ্ঞাপন বলেন, সিনেমা বলেন,সব জায়গায় নারীকে আমরা ভোগের বস্তু হিসেবে দেখেই অভ্যস্ত। আর ভিনদেশী সংস্কৃতি চর্চা করতে গিয়ে আমরা রীতিমত খিচুড়ি হয়ে গিয়েছি। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বলতে আর কিছু থাকছেনা।
বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। এখানে সবাই স্বাধীন। কেউ শাড়ী পরবে, কেউ কামিজ পরবে, কেউ বোরখা পরবে, যার যা খুশি তাই পরবে, তবে পরার আগে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, কোন পোশাকটা আমি কোথায় পরছি। পরিবেশটা আমাকে বুঝতে হবে। সব বোরখাই যেমন শালীন নয়, বোরখা ছাড়া অন্যসব পোশাকই অশালীন, এমনটিও নয়।
শোবার ঘরের পোষাক আর অফিসের পোষাক যেমন এক হয়না। খেলার মাঠের পোষার আর স্কুলের ইউনিফর্ম যেমন ভিন্ন হয়, স্বামীর সামনে পরা পোষাক আর শ্বশুরের সামনা পরা পোশাকেও যেমন ভিন্নতা থাকে। বাইরের শকুনি চোখগুলো থেকে বাঁচার জন্যও অবশ্যই আপনাকে পোশাকের ব্যাপারেও একটু সতর্ক থাকতে হবে।
কারন খারাপ লোকগুলো সবসময়ই ওতপেতে থাকে। ওরা সুযোগ পেলেই যে কাউকে ছোবল দিবেই।
কারন, কামনা বাসনার উর্ধ্বে আমরা কেউই নই। কেউ সেটাকে দমন করত পারে, কেউ পারেনা। যারা পারে, নিঃসন্দেহে তারা মহাপুরুষ। তবে সেই মহাপুরুষের সংখ্যা এ জগত সংসারে দিনদিন কমেই যাচ্ছে।
ধর্ষণের জন্য কেবল পোষাকই দায়ী নয়। আমাদের সমাজব্যাবস্থা , প্রসাশন, মানসিকতা আমি, আপনি, সব্বাই দায়ী। এই দায় এড়ানোর কোন সুযোগ নেই।
সবশেষে বলবো, মেয়েদেরকে নিজের রক্ষা নিজেকেই করতে হবে। অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। কারন খারাপ মানসিকতার মানুষগুলোকে আমরা চাইলেই ভাল করে ফেলতে পারবো না। আর প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, অশ্লীলতা আমাদের দিনদিন আরও মনুষত্ব আর বিবেকহীন করে দিচ্ছে।
যার প্রভাব পড়ছে নিষ্পাপ শিশুর উপরও। অন্য কোথাও এই কুলষিত মানসিকতা প্রয়োগ করতে না পেরে, ঝাঁপিয়ে পড়ছে নিরীহ শিশুর উপর। অভিবাবকদেরও এসব বিযয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
ধর্ষিতা প্রতিটি বোনই আমার বোনের মত, তাদের জন্য আমারও কষ্ট হয়। তাই ভাল থাকুক প্রতিটি বোন, নিশ্চিন্তে থাকুক প্রতিটি পরিবার।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:৫২