“ধিক্কার” শব্দটার প্রতি আজন্ম অবিরাম ধিক্কার জানিয়ে এসেছি আমি
“ঘৃণা” শব্দটার প্রতিও এক তীব্র ঘৃণা পোষণ করি এখনও
এখনও জাতি বিদ্বেষ এতটুকুন স্পর্শ করেনি আমার কোমল হৃদয়!
আজন্ম লালন করেছি বুকের গহীনে এক মানবিক স্রোতধারা,
উপভোগ করে এসেছি সবুজের লাবণ্য, পুষ্পিত সৌরভ
আর রাতের আকাশের কোল থেকে ঝরে পড়া মানবিক জ্যোৎস্না!
আশৈশব পাঠ করে এসেছি ইউরোপীয় রেনেসাঁর আলোকিত অধ্যায়
পাঠ করে এসেছি গণতন্ত্রের অমলিন সুশোভিত মহিমা
আর আধুনিকতার সুর ঝংকার তুলে গেয়েছি অবিরল
স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের মায়াবী সংগীত!
অথচ আজ এই মহান গণতন্ত্রের যুগে
আজ এই মহান মানবাধিকারের যুগে
আজ এই উত্তর আধুনিক সভ্যতার হিরণ্ময় প্রগতির যুগে
আজ এই রৌদ্র করোজ্বল দিনে
আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে
দিকে দিকে হুঙ্কার তুলে যখন গাজায় নেমে আসে দানবীয় আগ্রাসন
এয়ার স্ট্রাইকে যখন দেখি একে একে ধুলায় মিশে যায় জলপাই গাছ,
হাজারো বসতি, কম্পাউন্ড আর প্রতিরোধ যুদ্ধের সদর দপ্তর.........
এই মৃত্যু উপত্যকায় বিধ্বস্ত বসতির পাশে দাঁড়িয়ে
আজ যখন মৃত্যুর প্রহর গুনে প্রতিটি ফিলিস্তিনী বালক
আজ যখন হায়েনাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মৃত্যুর অমিয় সুধা পান করে
পরাপারে চলে যান হামাসের এক এক জন বিপ্লবী নায়ক
আজ যখন এয়ার স্ট্রাইকে ক্ষতবিক্ষত লাশ হয়ে মরুভূমির তপ্ত বালিতে
লুটোপুটি খায় গাজার ছোট্ট বালিকা হাওয়া ভাইরি
ইসমাইল বকরের মত ফুটফুটে শিশুর খণ্ড বিখণ্ড দেহ থেকে আজ যখন
শ্রাবণ ধারার ন্যায় বয়ে যায় অবিরল রক্তপ্লাবন
এইসব নারকীয় হত্যাযজ্ঞের বীভৎসতা দেখে
আজ আমি কী করে “সভ্যতা” শব্দটার প্রতি আস্থা রাখতে পারি?
আজ আমি কী করে “স্বাধীনতা” আর “মানবাধিকারের প্রতি আস্থা রাখতে পারি?
আজ আমি কী করে আস্থা রাখতে পারি বুর্জোয়া গণতন্ত্রের প্রতি?
কী করে আস্থা রাখতে পারি একবিংশ শতকের বিপর্যস্ত মানবতার প্রতি?
এই মৃত্যু উপত্যকায় হায়েনাদের উল্লাস দেখে
এই বন্দীশিবিরে ধ্বংসযজ্ঞের পৈশাচিক উন্মাদনা দেখে
যখন আলোকিত ইউরোপ প্রতিবাদহীন নির্লিপ্ততায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত
এই গণহত্যার হিংস্র আয়োজন দেখে
এই নারকীয় খাণ্ডব দাহনের উন্মত্ততা দেখে
যখন মানবাধিকারের প্রতিভূ উত্তর আমেরিকা
নীরব দর্শক হয়ে গোপনে উল্লাসে ফেটে পড়ে
তখন নিমিষেই ঘৃণা শব্দটার প্রতি আমার একান্ত ভালোবাসার সৃষ্টি হয়!
তখন বিদ্বেষ শব্দটার প্রতি আমি এক নিষিদ্ধ টান অনুভব করি!
আর ধিক্কার শব্দটি আমার শোণিতে নিমিষেই বয়ে যায়
দেহের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে!
আজ এই বাংলার তীরে দাঁড়িয়ে চোখে মুখে ঘৃণার অগ্নি স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে
আমি তাই কেবলি ধিক্কার দেই তোমাদের দানবীয়
মিলিটারি গণতন্ত্রের প্রতি।
কেবলি ধিক্কার দেই তোমাদের পক্ষপাতদুষ্ট মানবাধিকারের প্রতি।
কেবলি ধিক্কার দেই তোমাদের একদেশদর্শী
মুক্তি ও স্বাধীনতার শ্লোগানের প্রতি।
আজ আমি ধিক্কার দেই তোমাদের বর্ণবাদী অন্ধ এনলাইটেনমেন্টের প্রতি!