১] বিটি বেগুনের মালিকানা নিয়ে মিথ্যাচার
বিটি বেগুনের মালিকানা আত্মসাৎ করে বাংলাদেশের ৯ টি বেগুনের জাতের মেধাসত্ত এবং বাণিজ্যিক সত্ত্ব যখন বহুজাতিক কোম্পানি মনসান্তো-মাহিকো দখল করে নিল তখন এদেশের বহুজাতিক কোম্পানির এজেন্টরা এই বীজের মালিকানা বাংলাদেশেরই থাকবে বলে মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে। সর্বশেষ সাদ হাম্মাদি নামক এক সাংবাদিক গার্ডিয়ানে একই মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে দাবি করেছে এই বীজের মালিকানা মনসান্তোর নয় এবং বাংলাদেশের কৃষকদের এজন্য কোন রয়ালিটি ফি অথবা টেকনোলজি ফি দিতে হবে না!
সাদ হাম্মাদি লিখেছেন_
Who owns the crops?
The Bt gene was developed by the Maharashtra Hybrid Seed Company, the Indian partner of the US seed giant Monsanto and later donated to the public sector partners in India, Bangladesh and Philippines. Bt brinjal was developed by the government-operated Bangladesh Agricultural Research Institute with technical assistance from Cornell University in the US and funding from USAid. Monsanto has no ownership rights over the technology and because it has been developed by a public institution there are no technology fees or royalties payable on the crop by any farmer in Bangladesh. Hence, farmers will be encouraged to save seeds and use them in future. Click This Link
সাদ হাম্মাদির দাবি যে অসার তা প্রমাণের জন্য বিটি বেগুন চুক্তিনামাই যথেষ্ট। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকার সময় ২০০৫ সালের ১৪ মার্চ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), মার্কিন বহুজাতিক বীজ কোম্পানি মনসান্তো পক্ষে ভারতীয় কোম্পানি মহারাষ্ট্র হাইব্রিড সিড কোম্পানি লিমিটেড (মাহিকো) ও ভারতীয় কোম্পানি সাতগুরু ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেডের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় যে সাব-লাইসেন্স চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তাতে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে এ বিটি বেগুনের বীজের মেধাস্বত্ব মনসান্তো-মাহিকো কোম্পানির (ধারা ১.১৯) এবং তা বাংলাদেশের বারিকে কিনে নিতে হবে কোম্পানি থেকেই (ধারা ১.৬)।
1.19 " Monsanto/MHSCL IP Rights" shall mean all intellectual property rights that Monsanto or MHSCL owns or controls which will be infringed by making, using or selling Licensed Domestic Eggplant Products containing MHSCL Technology or Monsanto Technologty (i.e. the B.t. Gene).
Article 1.6: It is expressly understood by Sublicensee (BARI) that this sublicense is granted solely for the distribution of ‘Licensed Domestic Eggplant products’ (i.e. Bt seeds) at Cost (defined in article 1.6 and elaborated in Annexure 2)
সাদ হাম্মাদির এই বিটি প্রযুক্তি এবং এর মালিকানা বিষয়ে অজ্ঞতা কোন পর্যায়ে হলে তিনি দাবি করতে পারেন "Monsanto has no ownership rights over the technology and because it has been developed by a public institution there are no technology fees or royalties payable on the crop by any farmer in Bangladesh." চুক্তির ধারা অনুযায়ী এই বিটি প্রযুক্তি এবং বিটি বেগুনের মালিকানা বহুজাতিক কোম্পানির এবং তার জন্য রয়ালিটি ফি , টেকনোলজি ফি অবশ্যই দিতে হবে। সাংবাদিক সাদ কি চুক্তি পড়ে দেখার ফুরসৎ পান নাই? বাংলাদেশের বেশ কয়েকটা পত্রিকায় ( ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ইউএনবি, ডেইলি সান, দৈনিক সকালের খবর) এ চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট হয়েছে তাও কি চোখে পড়েনি তাঁর। (আমার কাছে চুক্তি কপি আছে, চাইলে সাদ ভাই দেখতে পারবেন)
চুক্তির ধারা ৯.২ (গ)তে বলা হয়েছে, ‘This Agreement may be terminated by Sub licensor (read MHSCL) if in Sub licensor’s judgment, reasonably exercised, laws and regulations in the Territory (read Bangladesh) do not provide adequate assurance of protection for commercial and intellectual property rights, including, but not limited to: i) effective, legal and practical protection of Licensed Domestic Eggplant Products, the B.t. Gene and/or MHSCL Technology against unauthorized reproduction; and ii) implementation in the Territory of legislation affording protection for patented technology incorporated in living organisms.’ অর্থাত্ বিটি বেগুন বীজের ও প্রযুক্তির বাণিজ্যিক ও মেধাস্বত্ব অধিকারের সংরক্ষণ লঙ্ঘিত হলে কোম্পানি এ চুক্তি বাতিলের অধিকার রাখে! চুক্তির এসব ধারা অনুযায়ী প্রমাণিত হচ্ছে বাংলাদেশের বেগুন বীজের মালিকানা চলে যাবে মার্কিন-ভারতীয় কোম্পানি মনসান্তো-মাহিকোর কাছেই। এটা বায়োপাইরেসি ছাড়া আর কিছুই নয়। গেটকো এগ্রো ভিশন লিমিটেড এবং সুপ্রিম সিড কোম্পানি লিমিটেড এরই মধ্যে বিটি বেগুন বীজ উত্পাদন ও বাজারজাতকরণের জন্য আবেদন করে রেখেছে বারির কাছে। দেশী-বিদেশী কোম্পানির মুনাফা লাভের বলি হবে এ দেশের নিজস্ব বেগুন জাত।
আবার কৃষিমন্ত্রী নিজেই কৃষকদের মাঝে বিটি বেগুনের চারা বিতরণ অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে বলেছেন, ‘বুদ্ধিবৃত্তিক অধিকার, বাণিজ্য-সংক্রান্ত অধিকার, পেটেন্ট ইত্যাদিসহ বিদ্যমান এবং অনাগত অন্য অনেক বিধিবিধান মেনেই জিএম ফসলের বাস্তবতাকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করতে হবে’ অর্থাত্ জিএম ফসলের পেটেন্ট, বাণিজ্য, মালিকানা সবই বহুজাতিক এগ্রো করপোরেশনের হাতে থাকবে, এর মানে বাংলাদেশের ফসল ও সবজির ওপর কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের হাজার বছরের নিজস্ব কৃষিজ সম্পদের ওপর বহুজাতিক কোম্পানির এ আগ্রাসন দেশের কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তাকে যে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে, তা মন্ত্রীর কথায়ই বোঝা যায়। এতে মানবকল্যাণ না হয়ে বহুজাতিক এগ্রো করপোরেশনেরই কল্যাণ হবে।
এ বীজের বিতরণ, সংরক্ষণ যে কত কঠোরভাবে বহুজাতিক এগ্রো করপোরেশন ও তাদের দেশীয় এজেন্সিগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে, তার আরেকটি প্রমাণ সাব লাইসেন্স চুক্তির ৯.৬ ধারা, যেখানে বলা হয়েছে, চুক্তি বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে বারিকে বাংলাদেশে এ বিটি বেগুন বীজ বিতরণ বন্ধ করতে হবে এবং সব বীজ ধ্বংস করে ফেলতে হবে। এমনকি বারিকে জিএম বেগুনের সব Germplasm (A collection of genetic sources for example seed collections) কোম্পানির প্রতিনিধির সামনে ধ্বংস করতে হবে এবং ওই প্রতিনিধি এ ব্যাপারে লিখিতভাবে কোম্পানির কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবে। ট্রিপস চুক্তির মাধ্যমে বহুজাতিক কোম্পানির পেটেন্ট আগ্রাসন ও বায়োপাইরেসির আমরা বিরোধী বলেই বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার আলোচনায় অর্থনীতিতে পিছিয়ে পড়া দেশগুলো সম্মিলিতভাবে তাদের ছাড় দেয়ার দাবি জানালে প্রথমে ২০১৩ এবং পরে ২০২১ সাল পর্যন্ত মেধাস্বত্ববিষয়ক বিধিনিষেধ থেকে ছাড় পাওয়া যায়। কিন্তু ডব্লিউটিওর এ আইনও লঙ্ঘন করা হয়েছে মনসান্তো-মাহিকো কোম্পানি এবং বারির মাঝে ২০০৫ সালে স্বাক্ষরিত সাব-লাইসেন্স চুক্তিতে। বিটি বেগুন বীজের মেধাস্বত্ব অধিকার কোম্পানির বলে স্বীকৃতি দেয়ায় এ চুক্তি তাই ডব্লিউটিও থেকে বাংলাদেশের পাওয়া সুবিধারও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং তাই অবৈধ। এসব গণবিরোধী চুক্তি বাংলাদেশের হাজার বছরের লোকায়ত জ্ঞান, বীজ সম্পদসহ সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থাকে বহুজাতিক কোম্পানির করপোরেট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশে গোল্ডেন রাইস প্রবর্তনের জন্য বহুজাতিক কোম্পানি সিনজেন্তা এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মধ্যেও একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। জিএম আলুর জন্যও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, এসব চুক্তিতেও বাণিজ্যিক ও মেধাস্বত্ব অধিকার কোম্পানির বলেই বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন। সংবিধানের ১৪৫ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি আন্তর্জাতিক চুক্তি সংসদে তুলতে বাধ্যবাধকতা আছে। বলা আছে, জাতীয় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত হলে সংসদের গোপন বৈঠকে উত্থাপন করতে হবে। জিএম শস্য নিয়ে ২০০৫ সালে করা চুক্তি তত্কালীন বিএনপি সরকার সংসদে আলোচনা করেছে বলে আমাদের জানা নেই। এসব চুক্তি সংসদে আলোচনা না করেই, দেশের বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে পরামর্শ না করেই গোপনে স্বাক্ষর করার মাজেজা কি? নাকি এক্ষেত্রে সংবিধান লঙ্ঘন হলেও বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থে তা জায়েজ!
গত পরশু ভারতীয় বীজ কোম্পানি মাহিকোর প্রতিনিধি বাংলাদেশে এসে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ( বারি ) এর মহাপরিচালকের সাথে বিটি বেগুনের বাণিজ্যিক ব্যবহার ও মালিকানা নিয়ে বৈঠক করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। মাহিকোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মাহিকো বাংলাদেশে বিটি বেগুনের বীজ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে চায় কিন্তু বারি মহাপরিচালক ড. রফিকুল ইসলাম বৈঠকে জানান, বিটি বেগুন বীজ বাংলাদেশ সরকার কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ( বিএডিসি) এর মাধ্যমে করতে পারবে । তখন মাহিকোর কোম্পানীর প্রতিনিধি বারি মহাপরিচালককে জানান, "চুক্তির শর্ত অনুয়ায়ী বিটি বেগুনের মালিক বাংলাদেশ সরকার বা বারি’ নয়; বিটি বেগুনের মালিক মাহিকো - মনস্যান্টো কোম্পানী বারি বিটি বেগুন মাঠ পর্যায় চাষে ফেল করেছে ফলে মাহিকো ও মনস্যান্টোর ব্যবসায়িক সুনাম বিনষ্ট হয়েছে। তাই বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে মাহিকো বিটি বেগুনের বীজ উৎপাদন করবে "
এখন বাংলাদেশের বেগুন বীজের ওপর মার্কিন ও ভারতীয় কোম্পানি মনসান্তো-মাহিকোর এ পেটেন্ট আগ্রাসনের বিরূপ প্রভাব কি হবে? প্রথমত বিটি বেগুনের বাণিজ্যিক ব্যবহার আমাদের বেগুনের জেনেটিক বৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে। অধিক ফলনের বিজ্ঞাপন দিয়ে বিটি বেগুন চাষে কৃষকদের উত্সাহিত করা হলে কৃষকরা শুধু জিএম জাতের ফলনের দিকে নজর দেবে ফলে ঐতিহ্যবাহী লোকায়ত জাতগুলোর জায়গা দখল করে নেবে জিএম বীজ। দ্বিতীয়ত পরাগায়নের মাধ্যমে বিটি বেগুনের বাইরে জিনটি বাংলাদেশের নিজস্ব অন্য জাতের বেগুনে প্রবেশ করলে এসব জাতও জেনেটিক দূষণের কবলে পড়বে এবং কোম্পানি তারও মালিকানা দাবি করতে পারে। ফলে বাংলাদেশের নিজস্ব জাতের সব বেগুনের ওপর কোম্পানির মেধাস্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। আবার বিটি বেগুনের মধ্যে থাকা বিটি টক্সিনের প্রতি প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে বেগুনের পোকা। উদাহরণস্বরূপ ২০০৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রুট ওয়ার্ম নামের পোকা দমনকারী বিটি ভুট্টার বিটি টক্সিন প্রতিরোধী রুট ওয়ার্মের সন্ধান পাওয়া যায়। ফলে বিটি ভুট্টা চাষের মূল লক্ষ্যই ভেস্তে যেতে পারে। মাহিকো কোম্পানির সঙ্গে বারির সাব লাইসেন্স চুক্তির ৯.২ (ই) ধারায়ও বলা হয়েছে, ‘বারি এ চুক্তি বাতিল করতে পারবে যদি পোকা এ বিটি বেগুনের প্রতি প্রতিরোধী হয়ে উঠে।’ শুধু বিটি বেগুনেই সীমাবদ্ধ না, জিএম আলুর ফিল্ড ট্রায়ালও চালাচ্ছে বারি। এ জিএম আলু প্রকল্প হচ্ছে মার্কিন সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে; উদ্দেশ্য এ দেশের শস্য-বীজের ওপর মার্কিন কোম্পানির মনোপলি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। এভাবে একে একে কৃষিতে বীজ আগ্রাসন আমাদের হাজার বছরের বীজবৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে। ফলন বৃদ্ধির নামে বীজ মালিকানা নিজের দখলে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে এগ্রো জায়ান্টরা। এবারতো আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় প্রচার চালাচ্ছে, পত্রিকায় খবর এল কৃষক আলুর দাম না পেয়ে প্রচুর আলু রাস্তায় ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তো তার পরও জিএম আলুর কি দরকার?
সাংবাদিক সাদ কি বাংলাদেশের জনগণকে গিনিপিগ বানানোর চক্রান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন?
বিটি বেগুনের উপর পর্যাপ্ত দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়া পরীক্ষা (Chronic Toxicity Testing) সম্পন্ন করা হয় নাই বলে এর স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ আসার পরও ভারতের মাহিকো কোম্পানির করা কিছু টেস্ট রিপোর্ট এর উপর ভিত্তি করে অনেকেই দাবি করছেন এটা সাস্থের জন্য ক্ষতিকর নয়। সাংবাদিক সাদও উল্লেখ করেছেন, The growers say they have been subjected to intimidation and misinformation about the safety of their produce by anti-GMcampaigners. ...The gene makes a protein that is deadly to a voracious and highly costly pest, a fruit and shoot boring caterpillar, but is harmless to humans and other animals."
কিন্তু মাহিকো কোম্পানির এসব টেস্ট যথাযথ প্রোটোকল অনুসরণ করে সম্পাদন করা হয়নি বলে বেশ কয়েকজন বায়োটেক বিশেষজ্ঞ এই পরীক্ষাকে অগ্রহণযোগ্য বলে মত দিয়েছেন এবং ভারতের আদালতই এই বেগুনের পরীক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।মাহিকোর এসব টেস্ট যে অগ্রহণযোগ্য এবং অপর্যাপ্ত তা নিচের দুইটি রিভিউ থেকে বুঝা যায়ঃ ১] A review of Mahyco's GM Brinjal food safety studies Dr Judy Carman Click This Link review of Mahyco.pdf২] BT BRINJAL Event EE1 / The Scope and Adequacy of the GEAC ToxicologicalRisk Assessment/ Review of Oral Toxicity Studies in Rats by Dr Lou M Gallagherhttp://www.testbiotech.de/sites/default/files/Report Gallagher_2011.pdf
আমরা মনে করি বিটি বেগুনের উপর স্বাধীন ও পর্যাপ্ত পরীক্ষা সম্পন্ন না করে ( Chronic Toxicity test, Reproductive test, Irritation test, etc.) এই বেগুন কৃষক পর্যায়ে ছাড়া অন্যায়। সাংবাদিক সাদ এর যেখানে উচিত ছিল স্বাধীন ও পর্যাপ্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার দাবি জানানো সেখানে উল্টা তিনি এই জিএম ক্রপকে স্বাস্থ্য ঝুকিহীন বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশের জনগণকে গিনিপিগ বানানোর চক্রান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
জিএম বীজের মধ্য দিয়ে কৃষিতে এগ্রো জায়ান্টদের করপোরেট মনোপলি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা কৃষি ও কৃষকের স্বার্থপরিপন্থী
সাংবাদিক সাদ মার্ক লাইনাসের বরাতে বলেছেন, "The powerful anti-GMO lobby knows that if Bangladeshi farmers successfully adopt this new crop, other GMO crops in the pipeline such as golden rice (also being developed in Bangladesh) will be advantaged and their cause of banning the technology permanently will be harmed," he wrote in a blog about the project.
সাংবাদিক সাদ মার্ক লাইনাসের বরাত ইউজ করতেই পারেন কিন্তু মার্ক এদেশের কৃষিতে বহুজাতিক কোম্পানির আগ্রাসনের এজেন্ট আকারেই কাজ করছেন। বীজ নিয়ে বহুজাতিক কোম্পানির যে রাজনীতি তার নিষ্করুণ শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি ও প্রাণবৈচিত্র্য! ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস (বিটি) বেগুন চাষের অনুমোদন দেয়ার পর এবার জেনেটিক্যালি মডিফাইড (জিএম) আলুর ফিল্ড ট্রায়াল চলছে বাংলাদেশে, লক্ষ্য এখানে জিএম আলুর চাষ শুরু করা। জিএম টমেটো, জিএম তুলাও আনার প্রক্রিয়া চলছে। অর্থাত্ বাংলাদেশ এখন বহুজাতিক এগ্রো করপোরেশনের জিএম বাণিজ্যের উর্বর ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। জিএম প্রযুক্তি নিয়ে দুনিয়াজুড়ে বিজ্ঞানীরাই দুই ভাগে বিভক্ত। একপক্ষ দাবি করছে জিএম শস্য মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর, আরেক পক্ষ বলছে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। এ স্বাস্থ্যঝুঁকির বিতর্ক বাদ দিলেও জেনেটিক্যালি মডিফাইড অর্গানিজম (জিএমও)-এর সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে বীজের মালিকানা, খাদ্যনিরাপত্তা, পেটেন্ট আগ্রাসন তথা বায়োপাইরেসির প্রশ্ন অর্থাত্ এগ্রি-বিজনেস। এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে হাজার হাজার বছরের কৃষকের নিজস্ব সম্পদ নন-জিএম বীজের অবলুপ্তির আশঙ্কা। কৃষিতে জিএম মানে শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নয়। জিএম যখন বহুজাতিক এগ্রো-করপোরেশনগুলোর এগ্রি বিজনেসের হাতিয়ার, তখন এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে বীজ নিয়ে রাজনৈতিক অর্থনীতি। বিজ্ঞান জিএম নিয়ে গবেষণা করতেই পারে, কিন্তু তাকে খাদ্যশস্য হিসেবে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সামগ্রিকভাবেই বিষয়গুলোকে বিবেচনা করতে হবে। মানবদেহ, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এসবের ওপর জিএম হুমকি কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়েই জিএম বীজের বাণিজ্যিক ব্যবহার যেমন বিপজ্জনক, তেমনি এ জিএম বীজের মধ্য দিয়ে কৃষিতে এগ্রো জায়ান্টদের করপোরেট মনোপলি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা কৃষি ও কৃষকের স্বার্থপরিপন্থী।