বাহ! বাংলাদেশের ন্যায্য পানি লুণ্ঠন করে বাঁধ দিয়ে তৈরি বিদ্যুৎ ভারত নিয়ে যাবে বাংলাদেশের উপর দিয়েই!
গতকাল ভারতকে বিদ্যুৎ করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ সরকার। এ করিডরের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হয়ে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে যাবে। বিনিময়ে সামান্য কিছু বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ। তবে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ তা এখনো নির্ধারণ হয়নি।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হিমালয় থেকে নেমে আসা বিভিন্ন নদীর ওপর ৪২৯টি বাঁধ দিয়ে এ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। কিছু বাঁধ ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে; আর কিছু নির্মাণাধীন। বাংলাদেশ ও আসামের জনগণ যে টিপাইমুখ বাঁধের বিরোধিতা করছেন, ১৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সেই বাঁধ এইসব বাঁধের একটি।
কিন্তু সব থেকে অবাক করা বিষয় হলো এ করিডর দিয়ে যে বিদ্যুৎ যাবে সেই বিদ্যুৎ তৈরি হবে বাংলাদেশের উজানে হিমালয়ের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশেরই প্রাপ্য পানি প্রত্যাহার করে। অর্থাৎ বাংলাদেশকে ধ্বংস করার বিদ্যুৎ বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঁধ দিয়ে এই বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলে হিমালয় ও হিমালয় থেকে উৎসারিত নদীগুলো ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। বাংলাদেশের প্রায় সব নদীর উৎস হিমালয়। ফলে বাংলাদেশের নদী ও পরিবেশের ওপর তীব্র নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন,উজানে বাধ দিয়ে এই বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ তৈরি হলে বাংলাদেশসহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার পরিবেশ-প্রতিবেশ পাল্টে যেতে পারে। এই বিশেষজ্ঞদের একজন শ্রীপাদ ধর্মাধিকারী। ‘মাউন্টেইন অব কনক্রিট : ড্যাম বিল্ডিং ইন দ্য হিমালয়াস’ শীর্ষক গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন, এ ধরনের বাঁধ নির্মিত হলে হিমালয় অঞ্চলের পরিবেশে মারাতœক প্রভাব পড়বে।
যেখানে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের পানি লুণ্ঠনের বিরোধিতা করা উচিত সেখানে উল্টা বাধ দিয়ে তৈরি ভারতীয় বিদ্যুৎ বাংলাদেশের উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বাংলাদেশ, এর মানে এই পানি আগ্রাসনকে বৈধতা দিচ্ছে বাংলাদেশ, এর মানে এই বাংলাদেশ অংশের নদীগুলোকে ধংস করার পরিকল্পনায় বাংলাদেশ সায় দিচ্ছে, এর মানে বাংলাদেশ নিজেই নিজের ভূমিকে মরুভূমিতে পরিণত করতে সহযোগিতা করছে ভারতকে, এর মানে বাংলাদেশ নিজের পরিবেশ, জীব বৈচিত্র্য ধংস করার উন্নয়ন নীতিকে সাপোর্ট দিচ্ছে। নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত কেন?
বিদ্যুৎ করিডোর দিয়ে বাংলাদেশের কী লাভ হবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সচিব বলেন, বিষয়টিতে এখনই লাভ-লোকসানের হিসাব কষা হয়নি। আর ভারতের বিদ্যুৎ সচিব বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ পাওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে, তবে বিষয়টি নির্ভর করছে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের পরিমাণের ওপর। এই বিদ্যুৎ সচিব কি বাংলাদেশের নাকি ভারতের? বাংলাদেশ কি পাবে সেই লাভলোকসান না করেই ভারতকে বিদ্যুৎ করিডোর দিচ্ছেন কোন যুক্তিতে? ভারত কি কি পাবে সেসব তো কড়ায় গণ্ডায় হিসাব করেছেন, নিজের দেশের প্রাপ্তি নিয়ে হিসেব নিকেশ করতে ভুল গেলেন কেন? আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী হিমালয় থেকে উৎপন্ন এসব নদীর পানিতে বাংলাদেশেরও ভাগ আছে, সেই পানি দিয়ে উৎপন্ন জলবিদ্যুতের মালিকানা বাংলাদেশেরও। তো এদেশের বিদ্যুৎ সচিব এই ভাগ আদায় করে নিতে পারেন নাই কেন?
বাংলাদেশ আর ভারতের বিদ্যুৎ সচিবের কথায় বুঝা যাচ্ছে বাংলাদেশ আসলে কিছুই পাবে না, ৫০-১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেয়া ছাড়া ভারত কিছুই দিবে না বাংলাদেশকে, তাও কিনে নিতে হবে ভারত থেকে। বাংলাদেশের শত শত নদীর পানির হিস্যা থেকে দেশকে বঞ্চিত করে, দেশের পরিবেশ, প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য সব কিছুকে ধংস করার দিকে ঠেলে দিয়ে এই দেশবিরোধী সিদ্ধান্ত কেন?
একটা সিজোফ্রেনিক জাতিতে পরিণত হচ্ছি আমরা। নিজের লাভ নাকি পাগলেও বুঝে, কিন্তু আমরা বুঝি না। ভারত আমাদের যৌথ নদীর পানি প্রত্যাহার করে ৪২৯ টা বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করবে আর সেই বিদ্যুৎ এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে নিয়ে যাবে বাংলাদেশের উপর দিয়ে, মানে আমরা ভারতকে বিদ্যুৎ করিডোর দিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলাম। এর মানে কি? এর মানে এই শত শত ড্যাম নির্মাণের মত অবৈধ বেআইনি কাজকে আইনগত ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ স্বীকৃতি দিয়ে দিল! এতে আমাদের ৬৫০ মেগাওয়াট ( প্রথম আলোর হিসেবে, কিন্তু দুই দেশের বিদ্যুৎ সচিবের মতে এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি) বিদ্যুৎ নাকি ভারত দিবে আর ভারত লক্ষ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পার করবে এদেশের উপর দিয়ে। এই গরু মেরে জুতা দানকে ফলাও প্রচারের মাজেজা কি তা পত্রিকাই ভাল জানে। প্রথমত এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প যা এদেশের নদীগুলোকে হত্যা করবে, এদেশের পানি লুণ্ঠন করে ভারত বাঁধ দিয়ে পানি সরিয়ে নিজেদের কৃষি কাজে লাগাবে, এটা সম্পূর্ণ অন্যায় এবং অন্যায্য। দ্বিতীয়ত এই লক্ষ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মালিকানা বাংলাদেশেরও , সেখানে বাংলাদেশকে তেমন কোন বিদ্যুৎ না দিয়ে খালি ১০০/২০০ মেগাওয়াট করিডোর বাবদ দেয়া মস্করা ছাড়া আর কিছুই না।
পুরা জাতি যে সিজফ্রেনিক তার প্রমাণ বিদ্যুৎ করিডোর দেয়া। বিরোধী দল ভারতের কৃপা লাভের আশায় এই ব্যাপারে চুপচাপ। বিএনপি'র ভারত বিরোধিতা ভোটের রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই না। গণ ইস্যুতে বিএনপি মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। দেশের টকজীবীরা এই ব্যাপারে চুপচাপ। তাবৎ মিডিয়া ভারতের নির্বাচনের নিউজ ফলাও করে প্রচারে ক্লান্ত, এই ব্যাপারে সিরিজ প্রতিবেদনে গরজ নাই তাদের। অনুভূতি শূন্য পুরা জাতি মেনে নিচ্ছে পানি আগ্রাসন, নদী হত্যা। যে ১০০ জন কৃষক তিস্তা রক্ষার আন্দোলনে সক্রিয় হচ্ছিলেন তাদের মামলা দিয়ে ঠাণ্ডা করে দেয়া হয়েছে। এই এক আজব দেশ যেদেশের কৃষক পানি না পেয়ে আন্দোলনে যাওয়ায় পুলিশ মামলা দিয়ে ধাওয়া করলে তাদের। জীবন জীবিকার প্রথম শর্তই হচ্ছে পানি আর নদী নাব্যতা। সেটা রক্ষা না করতে পারলে এই মৃত বাংলাদেশ দিয়ে কার কি লাভ?
সূত্র ঃ Click This Link
Click This Link
Click This Link