somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনি মুরগী কিনতে পারছেন না, সেই দায়ও 'স্বাধীনতার' ?

০১ লা এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে বা যারা বলছেন, স্বাধীনতার পরে সেই স্বাধীনতাকে আমরা রক্ষা করতে পেরেছি কি না, তাদের প্রতি আমার প্রশ্ন, স্বাধীনতাকে রক্ষার দায় কার ?
সরকারের ?
নাকি সবার ?

যদি সবার হয়, তাহলে আপনি দরকার হয়, এই জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন !
ধর্ষনের প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন!
বাকস্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনে নামেন !.....

বলবেন, রাস্তায় নামলেই তো গুলি !

তো ? 

মুক্তিযোদ্ধারা গুলি খায় নি?
আপনিও খাবেন !
মরলে মরবেন !

না মরলে গাজী !

হ্যাডম নাই আআআপনার ! আর দুষতে আইছেন স্বাধীনতারে ?

ভাত/কাপড় পিন্দনের স্বাধীনতা না পাওয়ার ব্যর্থতা আপনারই ! আপনার জেলে পচেই মরা উচিত, কিন্তু সেই মরাটা যদি রাস্তায় নেমে গুলি খেয়ে মরতেন, অন্তত আপনার কারনে বাকী ১৭ কোটি মানুষ মুক্তি পাইতো, যেটা সেই সময়ের মুক্তিযোদ্ধারা করেছিলো, তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে হলেও বাকীদের জীবন রক্ষা করেছিলো! যখন বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর দেখলেন, এই মুহুর্তে পিছপা না হলে তার সঙ্গীদের  কেউই বেঁচে ফিরবে না তখন তিনি নিজে, মেশিনগান ধরে সঙ্গীদের সবাইকে বলেছিলেন, দ্রুত পিছু হটো ! সঙ্গীরা তাকে ছেড়ে যেতে না চাইলেও কমান্ডারের হুকুমে বাধ্য হলেন, সঙ্গীরা সবাই বেঁচে গেলেও ক্যাপ্টেন আর ফিরলেন না, ঝাঝরা হয়ে গেলেন শত্রুর গুলিতে !

তো আপনি ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর হন! নিজে গুলি খেয়ে বাকী ১৭ কোটিকে বাঁচতে দেন।

আপনার উপর অনেকে নির্ভরশীল, নন্দলালের মতো আপনি মরে গেলে দেশ/জাতি/পরিবার/রাষ্ট্রের কি হবে, তাই আপনার বেঁচে থাকা খুব জরুরী? তাইতো আপনার মৃত্যু অনেক দামী?

তাহলে মতিউর রহমান কি করেছিলো?
সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী মিলিকে রেখে চলে যুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন। তিনি জানতেন, তার বাচার সম্ভাবনা একদমই নাই, তাইতো যখন মিলিকে শেষ চিঠি লিখলেন, তখন চিঠির শুরুতেই লিখলেন, 'প্রিয় মিলি, এই চিঠি যখন তোমার হাতে, তখন হয়তো আমি পৃথিবীতে নেই....'
কার জন্যে শহীদ হয়েছিলেন তিনি ?

নিজেকে মতিউর রহমান ভেবে রাস্তায় নামেন !
প্রতিবাদ করেন, অনশন করেন, জেলে যান, গুলি খান, মরেন....।

কিন্তু তার কোনোটিই করতে রাজি নন আপনি, কারন আপনি সর্বদা চিন্তা করেন, 'মতিউর রহমান যেনো পাশের বাড়ি থেকে হয়, আমার সন্তানটা নিরাপদ থাকুক' ।

আপনি চান, মতিউর রহমান আবার এসে আলু পটল চাউলের দামের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে জীবনটা দিয়ে দিক আর আপনি সারাদিন শুয়ে শুয়ে বিকেলবেলায় বাসা থেকে বের হয়ে একটা  সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে দিয়ে এক টাকায় আট মন চাল নিয়ে ঘরে ফিরবেন। আর সেটা না হলেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলবেন, 'আলু/পটল কেনার স্বাধীনতা চাই'
সবাই এমন করে ভাবলে চলবে কেনো ভাই ?

আপনি স্বাধীনতার সুমিষ্ট স্বাদ ভোগ করতে চাইবেন অথচ সেটাকে রক্ষা করতে চাইবেন না, তা তো হয় না ভাই! 
 
একটা আঙুল শোষকের দিকে তোলার সময় নিজ আঙুলগুলার দিকে তাকিয়ে দেখেন, হাতের বাকী চারটা আঙুল আপনাকে দুষছে ।

জানেনই তো, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা অনেক কঠিন ! তাহলে মুক্তিযোদ্ধারা যা করেছে তার চেয়ে ঢের বেশী যুদ্ধ আপনাকে করতে হবে সকল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, শোষনের বিরুদ্ধে, তবেই সেটা রক্ষা পাবে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সময়ের সর্বোচ্চ ত্যাগটুকু স্বীকার করেছিলেন, আপনি তাদের এনে দেওয়া স্বাধীনতাকে রক্ষার প্রয়োজনে কতটুকু ত্যাগ করেছেন, নিজেকে প্রশ্ন করেন ।

সেটাও করতে পারবেন না, আর বলতে থাকবেন, 'মুক্তিযোদ্ধারা আজকের বাংলাদেশ দেখলে কখনো জীবন দিতেন না'?
ওরা এই জাতির জন্যে জীবন দিয়ে বড় ভুল করে ফেলেছে ?

বরং এই সময়ে রুমি/জামি/আজাদ/বাদলরা আরো বেশী উজ্জীবিত হতেন! তাদের আফসোস বরং এটা হওয়া উচিত যে, কাদের জন্যে লড়লাম ? এরা তো শুধু স্বাধীনতার নির্যাস চায়, তারপর বাকীদেরকে ছোবড়া ভেবে ডাস্টবিনে ফেলে দেয় !

আলু/পটল/মুরগী... কিনতে পারছি না বলে 'স্বাধীনতা'কে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো এতো মহামনীষি হইয়েন না, বরং যে বা যাদের কারনে কিনতে পারছি না, তাদের বিরুদ্ধে বলে, তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে, এই অর্জিত স্বাধীনতাকে আকড়ে ধরে সেটাকে রক্ষা করার হ্যাডম থাকা আরো বেশী জরুরী ! স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে, বরং সেটাকে রক্ষা করেন, সেটাই হবে এই সময়ের শ্রেষ্ঠ কাজ, এই সময়ের যুদ্ধ ।

যারা আপনাকে শোষন করছে তাদেরও কোনো দোষ নাই, কারন এই শোষকশ্রেণী ব্রিটিশআমল থেকেই ছিল, ঘষেটী বেগম, মীর জাফর, লর্ড ক্লাইভ...আইয়ুব খানরা তো থাকবেই, আজীবনই ছিল। তাহলে দোষটা কি "স্বাধীনতার" ?
এই স্বাধীনতা যারা ভোগ করছে, দোষটা তাদেরই।

আজাদ/রুমি/জামী/বাদল/জাহাঙ্গীর/মতিউর  হতে পারছি না বলে আমি নিজেকে থুথু দিলাম, আপনিও দেন, তাও প্রিয় স্বাধীনতারে গালাগাল দিয়েন না, ওটা অমূল্য ।


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:২৯
১০টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন: প্রতারকদের ভীড়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃত ভুক্তভোগীদের সহায়তা কার্যক্রম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৪


জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত হওয়ার ভুয়া দাবি করে সহায়তার টাকা নিতে গিয়ে ফাঁস হয়েছেন মামি-ভাগনে ফারহানা ইসলাম ও মহিউদ্দিন সরকার। তাঁদের জমা দেওয়া এক্স-রে রিপোর্ট যাচাই করে দেখা যায়, দুটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামনে বিপুল, বিশাল চ্যালেঞ্জঃ মোকাবেলায় কতটুকু সক্ষম বিএনপি?

লিখেছেন শেহজাদ আমান, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



১. ভুল রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, দূরদর্শিতার অভাব

বিএনপি বাংলাদেরশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। লোকবল ও জনপ্রিয়তায় তাঁর ধারেকাছেও নেই অন্যকোনো রাজনৈতিক দল। মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক ধারায় আছে বলেই বাংলাদেশের মধপন্থী ও উদারপন্থী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ বিশ্বাস

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:০৮




সূরাঃ ৫৭ হাদীদ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩।তিনি প্রথম, তিনি শেষ, তিনি প্রকাশ্য, তিনি গোপন এবং তিনি সব কিছু জানেন।

সূরাঃ ১১২ ইখলাস, ১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চিঠি।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৩০



চিঠি: এক হারিয়ে যাওয়া অনুভূতির নাম

চিঠি—শুধু একটুকরো কাগজ নয়, এটি আবেগের স্পর্শ, অপেক্ষার মধুরতা, ভালোবাসার নিঃশব্দ উচ্চারণ। এক সময় মানুষের ভাব বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম ছিল এই চিঠি। স্বামী লিখতেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমা করবেন আরেফিন সিদ্দিক স্যার..

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭


আরেফিন সিদ্দিক স্যারের লাশটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দিচ্ছে না। ক্যাম্পাসের সাথেই সংযুক্ত হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে লাশ রাখা। শহীদ মিনারেও শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেবে না, ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে হবে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×