মানুষ সবসময় যেমন আনুগত্য খুঁজে ঠিক তেমনিভাবে প্রভুও খুঁজে। প্রভূ খুঁজতে গিয়েই একসময় মানুষ প্রকৃতিকে প্রভু বানিয়েছে। মানুষ যখন দিন দিন বুদ্ধিমান হতে লাগল তখন প্রকৃতিকে প্রভু হিসেবে মানতে পারলো না। প্রকৃতির সাথে যোগ করল কাল্পনিক দেবতা আর প্রভুর। সাথে সাথে মানুষ শুধুমাত্র অল্পসময়ের জন্য পৃথিবীতে থাকাকেও মানতে পারলোনা। ঠিক তখনি সৃষ্টি করল পরজনমের ধারণা। যে মানুষ আবার রিসাইকেল হয়ে পৃথিবীর বুকে আসবে। তখনই তৈরী হল পাপ পুণ্যের ধারণা। এই ধারণা তৈরী হল কিছুটা মানুষের নৈতিকতা আর অন্তর্চেতনা মিলিয়ে আর বাকিটা ধর্মের কাল্পনিক রীতিনীতি লঙ্ঘনকে নিয়ে। নৈতিকতা আর introspection মানে অন্তর্চেতনা থেকে সৃষ্ট পাপের ধারণা সমাজের জন্য কিছু নিয়ন্ত্রণ আর কল্যাণ বয়ে আনলো। অপরদিকে কাল্পনিক ধর্মীয় বিধিনিষেধ থেকে সৃষ্ট পাপের ধারণা সমাজে সৃষ্টি করল অনিষ্ট আর তা হয়ে গেল শাসক শ্রেণীর শোষণের হাতিয়ার।
এরপর ধীরে ধীরে মানুষ প্রকৃতি আর কাল্পনিক দেবদেবীর প্রার্থনা থেকে সরে নতুন কিছু ভাবতে লাগলো। তখনি আসলো একেশ্বরবাদের ধারণা। মূলত আব্রাহাম( ইব্রাহীম) প্রথম একেশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠা করলেন। প্রার্থনা পদ্ধতিতেও আসলো পরিবর্তন। স্রষ্টাকে একেকজন একেক নাম দিল। ইব্রাহীম দিয়েছিল জাহুভা যে নামে ইহুদীরা ডাকে। কয়েক হাজার বছর চলল। তারপর কয়েকজন পেরিয়ে এল জেসাস(ঈসা) যিনি দিলেন গড।
তিনি চেষ্টা করলেন সমাজ পরিবর্তনের। পারলেন না। তাকে ক্রুশ বিদ্ধ করে শাসক গোষ্ঠী হত্যা করল। যারা তাকে হত্যা করল তারাই জেসাসকে ঈশ্বরের পুত্র বানিয়ে খৃস্টান ধর্মের সূচনা করলেন।
সবশেষে মুহাম্মদ। অতীতের সকল প্রচলিত ধর্মকথাকে এক করে আর আরবের প্রচলিত আইনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ভার্স বা সূরা তৈরী করে দীর্ঘ ২৩ বছরে সৃষ্টি করলেন নতুন ধর্ম। যার নাম দিলেন শান্তি। যার আরবি ইসলাম। আল্লাহ নামটা মুহাম্মদের দেওয়া বা কুরআনে নাযিল হওয়া নাম নয়। এটা আরব পৌত্তলিকদের মুখে আগে থেকেই প্রচলিত ঈশ্বরের নাম। খুব সহজ উদাহরণ। মুহাম্মদের পৌত্তলিক পিতার নাম ছিল আবদুল্লাহ। মানে আল্লাহর বান্দা। এ থেকে খুব সহজেই বোঝা যায়।
আবার জেসাস ব্যভিচারের দায়ে পাথর ছুঁড়ে হত্যাকে ঘৃণা করতেন। তিনি বাতিলও করেছিলেন। মুহাম্মদ পৌত্তলিক সমাজে প্রচলিত ফৌজদারি আইনসমূহকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলেন। যার মধ্যে বেশিরভাগই নিষ্ঠুর এবং মানবতাবিরোধী আইন।
আমরাই স্রষ্টা তৈরি করেছি এবং একেক সময় একেক নাম দিয়েছি। কখনো জাহুবা, কখনো গড আবার কখনো আল্লাহ। ভারতবর্ষে এসেছে ঈশ্বর আর ভগবান।
তাই বলে স্রষ্টা নেই তা নয়। স্রষ্টা আছেন। তিনি আপন মহিমায় মহিমান্বিত। তিনি মানুষের সৃষ্টি করা জাহুবা, গড বা আল্লাহ নন। তবে যে নামেই ডাকা হোক তিনি একজন। যেকোন নামে ডাকলেই তিনি সাড়া দেন। তিনি মৃত্যুর পর হুর, গেলমান আর সরাবে ভর্তি স্বর্গও তৈরী করেননি আবার sadistic বা সবচেয়ে নির্মম উপায়ে জঘন্যতম শাস্তির ব্যবস্থাও করেননি। তবে আপনি যা করবেন তার ফল মৃত্যুর আগ মুহূর্তে হলেও ভোগ করে যেতে হবে।
কোরআন এবং হাদিসে তখনকার নতুন ধর্ম গ্রহণকারী উদ্দাম যোদ্ধাদের কামলিপ্সা নিয়ন্ত্রণের জন্য জান্নাতে অপরুপা সুন্দরী হুরের অবতারণা করা হয়েছে। সৌন্দর্য বর্ণনার জন্য প্রাচীন মিথের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় অনেক ক্ষেত্রে মিথকে অতিক্রমকে করে আরো অনেক বেশি উদ্ভট কথাবার্তা বলা হয়েছে, বিকৃত কথাবার্তা বলা হয়েছে। আমার কথা শুনে হয়তো আপনার ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগছে কিন্তু এর জন্য অনেক পড়াশুনার প্রয়োজন। অনেক অনেক।
জন্মের আগেও আপনার কোন অস্তিত্ব ছিলনা। ঠিক তেমনি মৃত্যুর পরেও থাকবেনা। আজ পর্যন্ত যত বড় বড় মনিষী, বিজ্ঞানী পৃথিবীকে বদলে দিয়েছেন তারা কেউ ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না। মুসলমানরা যেসব মনিষী এবং বিজ্ঞানীদের নিজেদের বলে দাবি করেন তাদের কেউই ইসলামে বিশ্বাসী ছিলেন না। তবে স্রষ্টাতে বিশ্বাসী ছিলেন আর নৈতিকতাপূর্ণ ছিলেন। ইবনে সিনা , উমার খৈয়াম ,মুসা আল খারিজমি , মির্জা গালিব এমনকি মওলানা আবুল কালাম আজাদ পর্যন্ত।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১০