ডাঃ টুটুল সশস্ত্র ধারার রাজনীতিতে দ্রুত জনপ্রিয় সাংগঠনিক ও তাত্ত্বিক নেতায় পরিণত হন। ২০০২ সালে দলের অপর তাত্ত্বিক নেতা মোফাখকার চৌধুরীর সাথে বিপ্লবের প্রশ্নে দ্বিমত পোষণ করে দল ছেড়ে বেরিয়ে আসে গঠন করেন পূর্ব-বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল-লাল পতাকা; পরবর্তীতে যা লাল পতাকা নামে অধিক পরিচিত)।
১৯৮৫ সালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন টুটুল। এরপর অল্প কিছু দিনের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে চাকরী করেন তিনি। ঝিনাইদহ কৌট চাঁদপুরের এলেঙ্গায় উচ্চবিত্ত এক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন টুটুল। টুটুলের বাবা দাউদ হোসেন বেঁচে না থাকলেও ৮০ বছরের বৃদ্ধা নভেরা খাতুন এখোনো বেঁচে আছেন। এক মাত্র বোন নুরজাহান বেবীর বিয়ে হয়ে গেছে বেশ আগেই। অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে টুটুল অপরের উপকার করতে গিয়ে নিজেদের জমিজমার প্রায় সবটুকু বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
টুটুল বিয়ে করেছিলেন খুলনা ফুলতলা উপজেলার দামোদার গ্রামে। গোপন বিপ্লবী জীবনের কারণে বিয়ের কিছুদিন পরে স্ত্রী লুসি খানম তাকে ছেড়ে চলে যায়। পিতুল নামে টুটুলের একটি ছেলে রয়েছে। পিতুল বর্তমানে ঢাকায় পড়াশোনা করছে।
বৃদ্ধা মায়ের আকুতি বাঁচাতে পারলো না টুটলকে
টুটুলের মা নভেরা খাতুনের বক্তব্য অনুযায়ী ২৬ জুলাই কোট চাঁদপুর পুলিস বাড়ীতে এসে টুটুলকে গ্রেফতার করার খবর জানায়। এরপর টুটলের মা প্রায় ২শো মানুষ সাথে নিয়ে ঝিনাইদহ ডিসির কাছে স্মারকলিপি দিতে যান। স্মারকলিপিতে নভেরা খাতুন উল্লেখ করেন যে, তার ছেলে কোনো সন্ত্রাসী নয়। কোনো খুনের সাথে জড়িত নয়। এলাকায় ভালো মানুষ ও দয়ালু ডাক্তার হিসেবে টুটুলের সুনাম রয়েছে। ছেলেকে ক্রসফায়ারে না দিয়ে বিচারের মুখোমুখি জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান মা নভেরা খাতুন। কিন্তু টুটুলের মায়ের এ-আর্তি ডিসি গ্রহণ করেনি। শেষ পযর্ন্ত ছেলের প্রাণের জন্য নভেরা খাতুনকে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করতে হয়। রাষ্ট্রের কানে টুটুলের মায়ের হাহাকার গিয়ে শেষ পযর্ন্ত পৌছায়নি। ২৭ জুলাই ভোর রাতে তথাকথিত ক্রসফায়ারের টুটুলকে হত্যা করা হয়।
একই গল্পঃ মানুষ আর বিশ্বাস করছে না
সংবাদপ্রত্রে ক্রসফায়ারে মৃত্যুর সংবাদ সব দিনের জন্য সব পত্রিকার জন্য সমান। একই সংবাদ শুধু ভিকটিমের নাম ও স্থান পাল্টে যায়। গল্পটা প্রত্যেকবার হয় মোটামুটি এ-রকমঃ
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে গোপন আস্তানা বা অস্ত্রের সন্ধান দেয়ার জন্য আটক রাখার স্থান থেকে বাইরে নিয়ে যায় র্যাব বা পুলিশ। এ-সময় আটক ব্যক্তিটিকে মুক্ত করে নেয়ার জন্য ওঁত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। আক্রান্ত হবার কারণে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে পালটা গুলি চালাতে হয়। গোলাগুলির সময় পালাতে গিয়ে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিটি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
রাষ্ট্রের দেয়া এহেন বক্তব্যের আদৌ কোনো গ্রহণযোগ্যতা জনগণের কাছে নেই। সকলেই জানে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিটিকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে সরকারী বাহিনীর সদস্যরা। ডাঃ টুটুলের ক্ষেত্রেও ঘটানো হয়েছে একই ঘটনা। দেয়া হয়েছে একই বক্তব্য।
জামাত-বিএনপি আমলে গঠিত র্যাবের হাতে এ-পযর্ন্ত ৪১৯টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫১১ জন। র্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২৪৮টি ঘটনায় ক্রসফায়ারে ২৮৪ জন এবং ১৭১টি ঘটনায় এনকাউন্টারের ঘটনায় ২২৭ জন মারা গেছে। এর বাইরে আরও ২১ জন র্যাব হেফাজতে মারা গেছে। র্যাবের দাবী হার্ট এটাকে মারা গেছে এরা।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রধান ও সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামালের মতে, ৫০০ বার একই ধরণের ঘটনা কীভাবে ঘটলো? রাষ্ট্রের হেফাজতে বার-বার মানুষ মারা যাচ্ছে এটা কাম্য হতে পারে না। আইনে বলা আছে আটক হওয়ার পর ওই লোকটির নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। তা তারা দিতে ব্যার্থ হচ্ছে। আইনজীবী শাহদীন মালিকের মতে, রাষ্ট্র যখন ক্রমাগতভাবে বিনা বিচারে হত্যার কারণ হয়, তখন সেই রাষ্ট্রে আইন ও সাংবিধানিক শাসনের সম্ভাবনা সুদূরপরাহত হয়ে যায়। এসব বাক্যকে অবশ্য বুর্জোয়া নীতি বাক্য হিসাবেই দেখছেন অনেকে। একাধিক বামপন্থী-কর্মী একান্ত আলাপে ইউকেবেঙ্গলিকে জানিয়েছেন, টুটুলকে হত্যা করা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। কারণ তাঁর বেঁচে থাকাটা রাষ্ট্রের জন্য বিপদজনক ছিলো। এরা মনে করেন নেপাল ও ভারতে মাওবাদী আন্দোলনের বিকাশ ও সাফল্য দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। এ-কারণেই বাংলাদেশে আণ্ডারগ্রাউন্ড বামদের নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সূত্রঃ http://www.ukbengali.com
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৩:৫৭