আমি বুঝিনা মুক্তিযুদ্ধের ৩৬ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা কোটা বরাদ্দ (মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্তদিদের জন্য) রেখে মেধাবীদের সাথে প্রহসন করার। আমি মহান মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন করছিন কিংবা করতে বলছিনা। শুধুই এটুকুই বলতে চাচ্ছি এই কোটা অবিলম্বে বাতিল করে প্রকৃত মেধাবীদের সুযোগ করে দিয়ে দেশের মেধাশুন্য প্রশাসনকে মেধাবী ও শক্তিশালী করতে।
আমি জানি আমার এই কোটা বাতিলের বিরোধীতা অনেকেই করবেন। কিন্তু দেখুন কত রাজাকার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট নিয়ে তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে সরকার থেকে কত সুবিধা বগল দাবা করে নিয়ে গেছে। আবার দেখুন, কত মুক্তিযোদ্ধা (সার্টিফিকেটহীন) প্রকৃতভাবে যুদ্ধ করলেও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন নি। আসলে ১৯৭১ সালে আমাদের দেশের রাজাকার-আলবদর-আলশামস ছাড়া সকলেই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। কেউ সরাসরি যুদ্ধ করেছেন কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন কেউবা বিদেশে বসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন করেছেন। সুতরাং আমি বলবো এরা সকলেই মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭২ সালে সরকারের উচিত ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা না করে রাজাকারদের তালিকা তৈরী করা কারন সাড়ে ৭ কোটি জনগনের কয়েক হাজার রাজাকার বাদ দিয়ে সকলেই ছিলেন মুক্তিকামী।
আমি নারী ও আদিবাসী কোটারও ঘোর বিরোধী। জানি এই ইস্যুতেও অনেকেই আমার সাথে দ্বিমত পোষন করবেন। দেশের সুবিধা বঞ্ছিত এই শ্রেণীদের সুবিধা দেবার লক্ষেই এই কোটা চালু রয়েছে। কিন্তু আমি এই কোটার মাধ্যমে মেধাহীন লোকদের নিয়োগদানের ঘোর বিরোধী। মনে করুন কাউকে গাছে উঠাতে হবে। তাকে টেনে হিচঁড়ে সাময়িকভাবে গাছে উঠানো গেলেও তার পরিনাম কিন্তু ভাল হয়না। তার চেয়ে বরং তাকে যদি একা একা গাছে চড়ার শিক্ষা দেয়া হয় তবে আর টেনে- হিচঁড়ে উঠানোর প্রয়োজন পরবেনা। সে একা একাই চড়তে পারবে। তাই আমি মনে করি পিছিয়ে পড়া নারী ও আদিবাসী শ্রেণীকে এগিয়ে আসার জন্য তাদের আগে শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে হবে। তাহলেই তারা সুযোগের মাধ্যমে নয় সকলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমেই অধিকার করতে সক্ষম হবেন।
দেশের সুবিধা বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোগে এগিয়ে নিতেই বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগে শতকরা ১০ ভাগ আসন রাখা হয়েছে জেলা কোটার নামে। এটাও এক ধরনের প্রহসন। সুবিধা বঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোগে উন্নতি করতে বিসিএস এ কোটা কেন? বরং অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অন্যান্য কর্মসূচীর মাধ্যমেইত এটা সমাধান করা যায়।
পরিশেষে এটাই বলবো- সাবেক নির্বাচিত সরকারগুলোর সময়ে বিসিএস দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত ছিল। সেই সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস, স্বজনপ্রীতি কিংবা ঘুষের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হত। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রশাসনে ব্যাপক রদ-বদল ও দূর্নীতিবাজদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করায় আমরা আশান্বিত। তাই ২৮তম বিসিএস পরীক্ষায় সূষ্ঠুভাবে হবে বলে আশান্বিত হতে পারছি। তাই প্রকৃত মেধাবীদের সুযোগ করে দিতে এই পরীক্ষায় সকল কোটা বাতিলে জোর দাবি জানাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ১১:০২