যে সমস্ত কাজ কোনো মানুষ করতে পারে বলে ধারণাও করা যেত না, তা আজ আমাদের দেশবাসীরা প্রকাশ্যে করে যাচ্ছে। বড় বড় অঞ্চলের প্রায় সমস্ত লোক গুন্ডায় পরিণত হয়েছে। গুন্ডারা যে কাজ করার ধানণাও কোনদিন করেনি তাও এখন তারা করছে। দুগ্ধ-পোষ্য শিশুদের মায়ের বুকের ওপর রেখে জবাই করা হয়েছে। জীবন্ত মানুষদেরকে আগুনে জ্বালানো হয়েছে। ভদ্র মহিলাদের হাজার হাজার লোকের সামনে উলঙ্গ করে তাদের ওপর প্রকাশ্যে পাশবিক অত্যাচার করা হয়েছে। পিতা, ভাই ও স্বামীর সামনে তাদের মেয়, বোন ও স্ত্রীর শ্লীলতা হানি করা হয়েছে। মসজিদ, মন্দির ও ধমীয় গ্রন্থরাজির ওপর ক্রোধ প্রকাশ করতে গিয়ে অত্যন্ত পৈশাচিক উপায় অবলম্বন করা হয়েছে। রুগ্ন, আহত ও বৃদ্ধদেরকে অত্যন্ত নিষ্টূরভাবে হত্যা করা হয়েছে। পথিক যাত্রীদেরকে চলন্ত গাড়ী থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে। জীবন্ত মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্তন করা হয়েছে। নিরীহ ও অক্ষম লোকদেরকে জন্তু-জানোয়ারের মতো শিকার করা হয়েছে। প্রতিবেশী প্রতিবেশীর গৃহ লুটতরাজ করেছ। বন্ধুর প্রতি বন্ধ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আশ্রয়দাতা আশ্রয় দিয়ে নিরাশ্রয় করেছে। শান্তি ও নিরাপত্তার রক্ষকগণ (পুলিশ, সৈন্য ও ম্যাজিষ্ট্রেটগ) প্রকাশ্যে দাংগায় অংশ গ্রহণ কররেছে, এমনকি তারা নিজেরাই দাংগা করেছে। এবং নিজেদের সাহায্য সহানুভূতি ও তত্ত্বাবধানে দাংগা বাধিয়েছে। মোটকথা- অত্যাচার, অনাচার, নিষ্ঠুর ও নির্দয় ব্যবহার, বর্বরতা ও জঘন্য কার্যকলাপ ইত্যাদির কোনো কিছু আর বাকী নেই, যা এ কয়েক মাসের ভেতর আমাদের দেশের লোকেরা সমষ্টিগতভাবে করেনি। তবুও মনে জ্বালা মেটেনি। আলামত যা দেখা যাচ্ছে, মনে হয় এর চেয়ে অনেক বেশী ভয়াবহ ও বিরাট অশান্তির দাঙ্গা এখন দেখা যাবে।
আপনারা কি মনে করেন, এসব কিছুই একটা আকস্মিক উত্তেজনার ফলমাত্র? এরুপ ধারণা করে থাকলে আপনারা বিরাট ভুলের মধ্যে আছেন বলতে হবে।
এ দেশের শতকরা পাঁচানব্বইজনের নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। দেশের জনসমষ্টির এত বিরাট অংশ যদি অসৎচরিত্রের হয়ে পড়ে তাহলে জাতির সমষ্টিগত স্বভাব-চরিত্র কেমন করে ঠিক থাকতে পারে? এজন্যই তো মুসলমান, হিন্দু বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে সত্যবাদিতা, সুবিচার ও সতততার কোন দামই এখন নেই। সত্যপন্থী, সৎ এবং ভদ্রস্বভাব বিশিষ্ট লোকেরা তাদের ভেতর কোণঠাসা ও দুর্বল হয়ে রয়েছে। মন্দ কাজে বাধঅ দান এবং ভাল কাজ করার জন্য উপদেশ দেয়া তাদের সমাজে অসহনীয় অপরাধে পরিণত হয়েছে। সত্য ও ন্যায় কথা শুনতে তারা প্রস্তুত নয়। তাদের মধ্যে প্রত্যেকটি জাতিউ এমন লোকদের পছন্দ করে যারা তার সীমাহীন লোভ লালসা ও স্বার্থের পক্ষে ওকালতি করে এবং অন্যের বিরুদ্ধে তাকে উত্তেজিত করে তার ন্যায় ও অন্যায় সব রকম স্বার্থোদ্ধারের জন্য সংগ্রাম করতে প্রস্তুত হয়। এজন্যই এরা নিজেদের ভেতর থেকে বেছে বেছ সবচেয়ে দুষ্ট প্রকৃতির লোকদেরকে নিজেদের নেতা নির্বাচন করেছে। তারা জঘন্যতম অপরাধীদেরকে খুজেঁ বের করে তাদেরকে নিজেদের নেতৃত্বপদে বরণ করে নিয়েছে। তাদের সমাজের সবচেয়ে দুশ্চরিত্র, দুর্নীতিবাজ, বিবেকহীন লোকেরা তাদের মুখপাত্র সেজে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অত্যধিক বরণীয় হয়েছে। অত:পর এসব লোকেরা নিজ নিজ পথভ্রষ্ট জাতিকে নিয়ে ধ্বংসের পথে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। তারা জাতির পরস্পর বিরোধী আশা-আকাংখাকে কোন ইনসাফের কেন্দ্রবিন্দুতে একত্র না করে তাকে এতখানি বাড়িয়ে দিয়েছে যে, তা অবশেষে সংঘর্ষের সীমান্তে পৌছেছে।
বহু বছর ধরে নিজেদের প্রভাবাধীন জাতিগুলোকে উত্তেজনামূলক বক্তৃতা ও রচনার ইনজেকশন দিয়ে এতোখানি উত্তেজিত করে তুলছে যে, এখন উত্তেজনাবশত কুকুর ও হিংস্র পশুর মতো লাড়াই করার জন্য খড়গ উঁচিয়ে দাড়িয়েছে। জনসাধারণ ও শিক্ষিত সমাজের মনতেপৈশাচিক আবেদ ও উচ্ছাসে দুর্গন্ধময় এবং অন্ধ শত্রুতার চুল্লী বানিয়ে ফেলেছে। আপনাদের সামনে এখন যে তুফান প্রবাহিত হচ্ছে তা মোটেই সাময়িক ও আকস্মিক নয়। বহুদিন থেকে বিকৃতির যেসব বেশুমান কার্যকরণক আমাদের মধ্যে সক্রিয় রয়েছে এ হলো তারই স্বাভাবিক পরিণতি। এটা একবার দেখা দিয়েই ক্ষান্ত হবে না। বরং যতোদিন পর্যন্ত এসব কার্যকরণ সক্রিয় থাকবে, ততোদিন এ বিকৃতির ক্রমশ বড়তে থাকবে। এটা একটা শর্সপূর্ণ ক্ষেত্রের মতো। বহ বছরের বীজ বপন ও জল সেচনের পর এ ফসল খাবার উপযুক্ত হয়েছে। এখন আপনাকে এবং আপনার বংশধরকে কতোদিন পর্যন্ত এ ফসল কাটতে হবে তা বলা যায় না
তথ্যসূত্রঃ ভাঙ্গা ও গড়া
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:৫৬