কুমিল্লা কথন
কুমিল্লার নামকরা একটি প্রাইমারী স্কুলে আমার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল।স্কুলে বেশীরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই ছিল সরকারি চাকরিজীবীর সন্তান... মানে সবাই কুমিল্লার বাইরের।ছোটবেলায় একটু ডানপিটে স্বভাবের ছিলাম বলে মারামারি,দুষ্টামিতেই ব্যস্ত থাকতাম।ক্লাসের মেয়েরা এজন্য আমাদের খুব ভয় পেত।শুধু নিশি নামের একটা মেয়েই শুধু ছেলেদের সাথে মিশত।তবে আমাকে একটু বেশি কেয়ার(:p)করতো মনে হয়।কেননা তার টিফিন-বক্সের অর্ধেক খাবার অলিখিতভাবে আমার জন্য বরাদ্দ ছিল।অন্য ছেলেরা এজন্য ভালই জেলাস হতো।ক্লাস টুতে থাকলেও এটা বুঝতাম যে সে আমার একটা ভাল বন্ধু।কিন্তু হঠাৎ একদিন আমার খাবারের বরাদ্দে টান পরল...মানে নিশি আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করল।টিফিনের ভাগ না পেয়ে যতটা মন খারাপ হয়েছিল...তার চেয়ে মন খারাপ হল ওর মত বন্ধু হারিয়ে।কিন্তু কি কারনে এড়িয়ে যাচ্ছে টা বুঝতে পারলাম না।পরে শুনলাম ওর মা ওকে কুমিল্লার কারো সাথে মিশতে না করেছে।
আমি ছেলেদের স্কুলে পড়লেও ক্লাস এইটের বৃত্তি পরিক্ষার সময় ওইবারই প্রথম ছেলে-মেয়ে একসাথে সিট পরল।আমরা ছেলেরা সবাইতো মহাখুশি।সবাই মিলে প্লান করলাম এবারই সুযোগ দাঁও মারার।আমার ভাগ্যটা ভালই আমার পিছনে তরু নামের অতিব সুন্দরীর সিট পড়ল।প্রথম দিন পরিক্ষা দিয়েই বুঝে গেলাম ছাত্রী হিসাবে তিনি তেমন সুবিধার না।কিন্তু উনিযে পরিক্ষার হলে আমার উদারহস্ত দানে বিশেষ মুগ্ধ হয়েছেন সেটা ভালই টের পেলাম।পরীক্ষার বিরতিতে তাই আমাদের ভালই আলাপ জমে গেল।শেষ পরীক্ষায় ওনার কাছে হিরো হবার আশায় একটু বেশি সাহসী হয়ে গেলাম।ফলশ্রুতিতে আমার খাতা ৩০ মিনিট আটকে রাখা হল।পরে যখন খাতা পেলাম তখন আর ঘাড় ফেরানোর সুযোগ হল না।কিন্তু পরীক্ষার পরে তরু আমার সাথে কথাই বলতে চাইল না।যাওয়ার সময় যা বলল তা বোধহয় আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।বলল কুমিল্লার ছেলেরা কি আমার মতো হিপোক্রেট কিনা।মেয়েটার প্রতি আমার সকল ভাললাগা ঘৃণায় পরিণত হয়ে গেল।যার জন্য চুরি করলাম সেই বলল চোর।
মেডিক্যাল কোচিং করার জন্য ৫ বন্ধু মিলে ঢাকা এলাম।সারাটা দিন ঢাকার ফার্মগেট আর মনিপুরিপাড়া চষে ফেললাম...কিন্তু কোন বাসা পেলাম না।অবশেষে রাত ৯টার দিকে পছন্দমত একটা বাসা পেলাম। কথা পাকাপাকির পর যখন চুক্তিপত্রে ঠিকানা লিখলাম...তখন বাড়িওয়ালী সাফ বলে দিলেন তিনি কুমিল্লার কারো কাছে বাসা ভাড়া দিবেন না।অনেক অনুরোধ করেও লাভ হল না।পরে অন্য ভাড়াটিয়াদের কাছে শুনলাম ওনার ৩ মেয়ের মধ্যে ২ মেয়েই কুমিল্লার দুজনের সাথে পালিয়েছে।কিন্তু মহিলাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততোটা খারাপ ছিলেন না।ওই রাতে আমাদের ফোন দিয়ে তার বাসায় উঠে যেতে বললেন।ওনার বাসায় প্রায় ৭ মাস ছিলাম।ওনাকে সবসময় নিজের মায়ের মতো দেখেছি।খালাম্মা আমাদের এতোই আপন হয়ে গিয়েছিলেন যে উনি আমাদের ৫ জনকে নিজের সন্তানের মত দেখতেন ।এলাকাটা খারাপ থাকাতে আমরাই খালার মেয়েকে কোচিং এ দিয়ে আসতাম।শেষের দিকে আমাদের খাওয়ার সমস্যা দেখে খালা নিজের বাসায় নিয়ে জোর করে খাওয়াতেন।যেদিন চলে আসি সেদিনের কথা ভাবলে এখনো চোখ ভিজে উঠে।খালা আমাদের ৫ জনকে জড়িয়ে ধরে কেদেছিলেন।আমরা ৫ জনও চোখের জল আটকে রাখতে পারিনি।খালা সেদিন বললেন...তোদের না দেখলে কুমিল্লার মানুষদের প্রতি খারাপ ধারনাটা থেকেই যেতো।
ধার্মিক মেয়েদের প্রতি আমার দুর্বলতা সবসময়েই ছিল।সুন্দরীর চাইতে মেয়েদের ওইগুনটাই আমায় বেশি টানত।ফোরথ ইয়ারে উঠে আমি যেরকম মেয়েকে জীবনসঙ্গিনী হিসাবে কল্পনা করতাম সেইরকম একটা মেয়ে পেয়ে গেলাম।কাসপিয়া ছিল যেমন সুন্দরী তেমনি ধার্মিক।ওদের ক্লাসমেটদের শুনলাম ওর নাকি প্রেমের ইচ্ছা নেই।রিফিউজড হবো এই ভয়ে ওকে প্রপোজ করার সাহস পেলাম না।আটটা মাস নিজের সাথে যুদ্ধ করলাম।এরপর নিজের কাছে নিজেই হেরে গিয়ে ছেঁকা খাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা নিয়ে ওকে প্রপোজ করে বসলাম।দীর্ঘ ৭ মাস ১৩ দিন পর রাজকন্যার মন পেলাম।ওর পরিবার রক্ষণশীল বলে আমাদের প্রেমের ব্যাপারটা ওদের বাসায় গোপন রাখলাম।আমি যখন ইন্টারনিতে তখন ওর বাসা থেকে ছেলে দেখা শুরু করলো।আমি ভাবলাম...আমি দেখতেও খারাপ না,ফ্যামিলিও খারাপ না,পাশাপাশি একজন ডাক্তার...কোনভাবেই নিজেকে কাসপিয়ার অযোগ্য মনে হল না।তাই আমার কথা ওর ফ্যামিলিতে বলতে বললাম।ওর বাবা শুনে অনেক হম্বিতম্বি করলেন।কিন্তু মেয়ের একগুঁয়েমির জন্য বাধ্য হয়ে আমাকে বায়োডাটা দিতে বললেন।বায়োডাটা দেবার দুদিন পর কাসপিয়ার বাবা আমাকে ডেকে পাঠালেন।আমিতো ভাবলাম এবার বুঝি বরফ গললো।কিন্তু কাসপিয়ার ৫৫ মিনিটের ছোট্ট মিটিং এ চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন কুমিল্লার কারো সাথে বিয়ে দেবেন না।জীবনে কুমিল্লার বলে কম অপদস্ত হইনি...তাই বলে কখনো ভেঙ্গে পরিনি।কিন্তু এবার ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে গেলাম।৭ দিন মুখে ভাত দিতে পারলাম না।১২ দিন পর শুনলাম কাসপিয়াকে তার কাজিনের সাথে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছে।
ইন্টার্নির পর ভেঙ্গে পরা এই আমি আস্তে আস্তে নিজেকে জোড়া লাগাতে শুরু করলাম।শপথ নিলাম জীবনে কারো সাথে জড়াবো না।উত্তরার একটি হাসপাতালে চাকরী নিলাম।একদিন হাসপাতালের পাশের সেক্টর থেকে দুজন মহিলা খুব করে ধরল ওনাদের বাসায় গিয়ে একজন মুমূর্ষ বৃদ্ধাকে দেখার জন্য।হসপিটালের বাইরে রোগী দেখার নিয়ম না থাকলেও মানবিক কারনে যেতে হল।গ্লুকোজ কমে যাওয়ায় এমনটা হয়েছিল।অল্প চিকিৎসাতেই ম্যাজিকের মতো বৃদ্ধা উঠে বসলো।বাসার সবাই মুগ্ধ হয়ে গেল।বৃদ্ধা কোন ডাক্তারের ওষুধ কিংবা টেস্ট করাতেন না।এমনকি নিজের ৩য় বর্ষ মেডিক্যালে নাতনীকে প্রেসার ও মাপতে দিত না।আমি ওনাকে দাদু ডেকে এমন কনভিন্স করলাম যে উনি প্রথম বারের মতো ওষুধ খাওয়া ও টেস্ট করাতে রাজি হলেন।বাসার সবাইতো মহাখুশী...সবাই আমাকে ঘিরে ধরল।ফিসফাস করে বললেও বুঝতে পারলাম...আমার সাথে ওদের মেডিক্যাল পড়ুয়া কন্যার সম্ভাবনা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।যখন ফেরার জন্য গাড়িতে উঠছি তখন একজন জিজ্ঞেস করলেন আমার বাসা কই।উত্তর শুনার পর মনে হল তাদের মুখে কালি ছুড়ে দেয়া হয়েছে।এটা আমার জন্য নতুন কিছু নয়।তাই মুচকি হেসে ড্রাইভার কে গাড়ি স্টার্ট দিতে বললাম।
একদিন দেখলাম স্ট্রেচার করে জরুরী বিভাগে একটি মেয়েকে নিয়ে আসা হচ্ছে।মেয়েটার মুখ চূল দিয়ে ঢেকে আছে।মেয়েটার গালে রক্তের দাগ।মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে অচেতন কাসপিয়াকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠলাম।কাসপিয়ার সাথে আসা ওর বাবাও আমাকে দেখে চমকে উঠে চোখ নামিয়ে ফেললেন।কাসপিয়া স্বামীর হাতে মার খেয়ে অনেকগুলি রেলাক্সেন খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।আমি ওকে তাড়াতাড়ি আইসিইউতে নিয়ে গিয়ে মারুফ ভাইকে সাথে নিয়ে স্টমাক ওয়াশ দিলাম।কিন্তু দুঘণ্টা পর কাসপিয়া শকে চলে গেল।আইসিইউতে অচেতন কাসপিয়াকে দেখে পুরনো দিনগুলোর কথা মনে পরে গেল।সেই নজরকাড়া চুল...চোখ...খাড়া নাক...শুধু চোখের নিচে একটু কালি পরেছে একটু।আমাদের আইসিইউ টিমের দুদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে আল্লাহর অশেষ রহমতে কাসপিয়া চেতনা ফিরে পেল।কাসপিয়ার বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাদলেন।কাসপিয়ার সামনে দাঁড়ানোর শক্তি ছিল না বলেই ওর সাথে দেখা না করেই চলে এলাম।
জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না।হাসপাতালে হাসপাতালে জীবন কাটিয়ে হয়তোবা কাসপিয়ার স্মৃতিকে ধুসর করে ফেলেছি।হাসপাতালে কাজ করতে গিয়েই আনিকার সাথে পরিচয় হল।পুরো ৭ মাস আমরা একসাথে ডিউটি করেছি।ওর কাছে আমার জীবনের সব কিছুই খুলে বলেছি।একটা সময় ও আমাকে ভাললাগার কথা জানালো।আমি হেসেই উড়িয়ে দিলাম।এরপর আমাকে অনেক কনভিন্স করার চেষ্টা করতো।আমি প্রতিবারই হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলতাম...আমি কিন্তু কুমিল্লার ছেলে...ধরলে কিন্তু খবর আছে...সাইজ হয়ে যাবা।অগত্যা সে জায়গামত হাত দিল...মানে ওর মাকে দিয়ে আম্মাকে ফোন করালো।আম্মাও আমার বিয়ে নিয়ে উদাসিনতার জন্য অনেক টেনশনে ছিল।তাই রাজি না হয়েও উপায় ছিল না।
আজ আমাদের বিয়ের দেড় বছর হয়ে গেল।।৫দিনের ছুটিতে নীলগিরি এসেছি।১৭০০ ফুট উচ্চতায় স্থাপিত এই কটেজে পূর্ণিমার চাদের আলো আমার দুজনকে মাখিয়ে দিচ্ছে।আনিকার চুলে বিলি কাটতে কাটতে ওকে জিজ্ঞেস করলাম...তুমি আমায় এতো ভালোবাসো কেন।ও বলল...জানতে চাও?তারপর আনিকা আস্তে আস্তে আমার শার্টের বোতাম খুলে বুকের উপর গাল রেখে বলল...তোমাকে আমি কখনই আমি ভালবাসিনি...ভালবেসেছি তোমার এই হৃদয়টাকে।আমার বুকে আশ্রয় নেয়া আনিকা তখনও টের পায়নি আমার চোখের কোনা বেয়ে নেমে যাওয়া নিরব অশ্রুগুলোর নিঃশব্দ পতন।পূর্ণিমার চাঁদ তখন সর্বশক্তি দিয়ে আমাদেরকে তার আলো দিয়ে মাখিয়ে তুলছে।পূর্ণিমার রুপালী আলো আনিকার মুখটাকে অদ্ভুত রুপালী করে তুলেছে।রুপালী আনিকাকে আজ আমি যেন আজ প্রথম দেখলাম।আজকে ওকে খুব বেশি বেশী ভালবাসতে ইচ্ছা করছে...খুব...খুব...
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন