দ্য রোবটিক লাভ
গাধামির একটা সীমা থাকা দরকার।নিজের গাধামি দেখে নিজেরই চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করছিল।ভার্সিটির প্রথম ক্লাসে যাবো,এই টেনশনেই আমি মরে যাচ্ছি।না হলে তাড়াহুড়ো করে বেরুতে গিয়ে নিজের মোবাইল থেকে নিজের নম্বরে ফোন দিয়ে নিজের ফোনটাই খুঁজছি।আর যথারীতি নম্বর বিজি পেয়ে রীতিমত মন খারাপ হয়ে গেল।অথচ আমার হাতেই যে আমার ফোনটা,সেটা আমার মাথায় নেই।সময় যখন খারাপ হয় সবদিক দিয়েই হয়।আর নইলে ওইদিনই রিক্সা থেকে নামতে গিয়ে পা মচকাবে কেন।কলেজ চত্বরে পৌঁছে দেখি কয়েকজন সিনিয়র ভাইয়া-আপু আমাদের বরণ করার জন্য ফুল নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। আমাকে যিনি ফুল দিলেন তার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি কেমন যেন রোবটিক,ভাবলেশহীন,অনুভূতিহীন উসকো-খুসকো চেহারা।সবাই তখন ক্লাসে চলে গেছে,আর আমি মচকানো পা নিয়ে সিঁড়ির গোড়াতেই দাড়িয়ে রইলাম।কোথা থেকে যেন সেই ভাইয়াটা এসে আমাকে লিফটের দিকে নিয়ে গেল।উনার সাথে একই লিফটে সাতটা তালা পাড়ি দিলেও লোকটা আমার দিকে একবারও মুখ তুলে তাকাল না।লিফটের আয়নায় তার চেহারাটা দেখলাম।চেহারায় কোন বিশেষত্ব না থাকলেও তার সুন্দর চোখগুলো আমার চোখ এড়ালো না।
এই হল রোবটের সাথে আমার প্রথম দেখার কাহিনী।লোকটা প্রথম দিনই হয়তো আমার মনে ছাপ ফেলেছিল।হয়তো এজন্যই কলেজে সারাটাক্ষন আমার চোখদুটো রোবটটাকেই খুঁজে ফিরত।কিন্তু কলেজে আমি বেশ কয়েকবার রোবটটাকে দেখলেও বেচারা একটিবারের জন্যও আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো না।একবার ভাবলাম সরাসরি কথা বলি,কিন্তু গম্ভীর আর রাশভারী চেহারাটা দেখে আর সাহস করলাম না।এরপর ফেসবুকে এড রিকোয়েস্ট দিলাম।১০টা দিন টানা ফেসবুকে পরে থেকেও রোবটের কোন সাড়াশব্দ পেলাম না।অগত্যা বাধ্য হয়ে মেসেজ দিয়ে নিজের পরিচয় দেয়াতে রোবটের মন গললো।কিছুদিন পর ভয়ে ভয়ে চ্যাটে ওনাকে নক করলাম।আমি ৭-৮টা লাইন লিখলে বেচারা রোবটের মতো ২-১ টা শব্দ লিখতো...হুম...ইয়া...।আমার প্রচণ্ড রাগ লাগতো। তখন মনে হতো রোবটটার চুল গুলো সব ছিড়ে ফেলি।
এরপর প্রায়ই নক করতাম।কিন্তু বেচারা আগের মতোই ফরমাল থেকে গেলো।এজন্য আমাকেই গায়ে পরে মিশতে হতো।রোবটটাকে দেখানোর জন্য ফেসবুকে প্রচুর ছবি আপলোড দিতাম।কিন্তু ও দেখতো বলে মনে হয় না। এমন একটা নিরস,আবেগহীন,কাঠখোট্টা লোককে আমার কি করে এতো ভাল লাগলো তা আমি নিজেই বুঝে পেতাম না।একদিন বার্থডের উইশ করবো বলে মোবাইল নম্বরটা চাইলাম।কিন্তু হিতে বিপরীত হল।পরের একটা সপ্তাহ ওনাকে ফেসবুকে খুজে পেলাম না।৯ দিন পর হঠাৎ ইনবক্সে ওর নম্বরটা দেখে আমার চোখে পানি এসে গেল।২০১০ সালের রোজার ঈদের আগের দিন রাতে ওর সাথে আমার প্রথম কথা হল।এই আমি যে রোবটটার ছবি মনের মধ্যে একে রেখেছিলাম তার সাথে ফোনের মানুষটার কোনই মিল খুঁজে পেলাম না।মানুষটা মাত্র ২ মিনিটেই আমাকে আপন করে নিলো।ওইদিনের ৪৭ মিনিটের ফোনটা সারা জীবন আমি ভুলবো না।মনে হচ্ছিল মানুষটা আমার অনেকদিনের চেনা।আমার রোবটটা এতো মায়ামাখানো কথা বলতে পারে আমার কল্পনাতেও ছিল না।মাত্র ৭ দিনেই বুঝতে পারলাম মানুষটা চাপা স্বভাবের হলেও আসলে তার ভেতরে লুকিয়ে আছে একটা মায়াময়,রসিক একটা মন।মানুষটা বাইরে থেকে যতটা দুর্ভেদ্য ভিতরটা ততোই সরল।
৩ মাস একটানা কথা বললাম।আমি আমার স্বপ্নগুলোর কথা ওকে বলতাম।বলতাম আমি আমার স্বপ্নের মানুষটার সাথে সোহরাওয়ারদী উদ্যানে হাত ধরে ঘুরে বেড়াতে চাই... হাওয়াই মিঠাই খেয়ে মুখ লাল করতে চাই...কিংবা ঝাল ফুচকা খেয়ে চোখ লাল করতে চাই।এরকম বকবক করেই যেতাম।এগুলো তাকে খুব একটা স্পর্শ করতো বলে মনে হতো না।শুনে শুধু মুচকি হাসতো সে।এতকিছুর পরও আমার ভাললাগার কথাটা বলতে তাকে পারলাম না।মানুষটার অদ্ভুত একটা ক্ষমতা আছে সম্পর্ককে স্থির রাখার।খুব কাছেও টানবে না,আবার ছুড়েও ফেলবে না।ওর একটা প্রিয় জায়গা ছিল আমাদের ভার্সিটির দীঘিটার শান-বাধানো ঘাটটা।প্রায় প্রতিটা বিকালেই ও একা দাড়িয়ে সিগারেট ফুঁকত।আর উদাস চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট ডাইরিতে কি যেন লিখত।ভার্সিটির ক্যান্টিনের পুবের জানালা থেকে প্রতিটা দিন আমি ওর উদাসী সময় কাটানো দেখতাম।
পুরো একটা বছর এভাবে বুকের ভেতর পাথরটা চেপে রেখে রেখে আমি ক্লান্ত হয়ে গেলাম।আমার এই ক্লান্তি কাটাতে রুপার বুদ্ধিটাই কাজে লাগালাম।এজন্য ১৩ই অক্টোবর ওর জন্মদিনটাকেই বেছে নিলাম।ওই দিন ও যথারীতি দীঘির পারে বসে আপন মনে আকাশ দেখছিল।আমি ওর ২৪তম জন্মদিন বলে ২৪ টা রজনীগন্ধা আর ২৪টা গোলাপের স্টীক নিয়ে দীঘির পাড়ে গেলাম।ঝারা ৩ মিনিট ওর ঘাড়ের সামনে দাড়িয়ে থাকলেও বেচারা আমাকে দেখতে পেল না।হয়তো ফুলের গন্ধ পেয়েই বোধহয় সে আশেপাশে তাকালো।কিন্তু তারপরও আমায় দেখতে পেল না।আমি উইশ করাতে বেচারা এমন চমকে গেল যে আরেকটু হলে বোধহয় দীঘিতেই আশ্রয় নিতো।সেদিন আমি তার রোবটিক চেহারার মাঝে আড়াল হয়ে যাওয়া কিছুটা মায়া কিছুটা লজ্জা মেশানো চোখ দুটো দেখতে পেলাম।আমার এই উদাসী রোবটটা সেদিন জানতো না যে তার জন্মদিন।আমাকে জোর করে কাছের একটা চাইনিজে নিয়ে গেল।আমি এমনিতে বেশি খেতে পারি না।কিন্তু মানুষটার মায়ামাখানো কথাগুলো আমাকে অনেক কিছুই খাইয়ে ফেললো।কিভাবে যে সাড়ে ৩ ঘণ্টা পার হয়ে গেলো,টের পেলাম না।যাবার সময় ঘড়ির তাকিয়ে দেখলাম রাত ৯টা বেজে গেছে।আমার চোখের টেনশনটা তার চোখ এড়ালো না।আমাকে এগিয়ে দিতে চাইলেও আমি রাজি হলাম না।একা ভয়ে ভয়ে বাসায় ফিরে রিক্সা ভাড়া দিতে গিয়ে দেখি সেও আমার রিক্সার পেছনে পেছনে আরেকটা রিক্সা আসছে।ও হয়তো ভেবেছে ল্যাম্পপোস্টের মৃদু আলোয় ওকে আমি দেখিনি।আমি দেখেও না দেখার ভান করলাম।সেদিনই বুঝতে পারলাম মানুষটা নিজের মায়াটা লুকিয়ে রাখতেই রোবটের মতো রসকসহীন মানুষের অভিনয় করে।যতই রোবটের মুখোশ পরুক কিন্তু নিস্পাপ সরল চোখ গুলো সেটা বেমানান করে দেয়।
ওইদিনের দেখাতেই মানুষটাকে পুরোপুরি চিনে ফেললাম।কিন্তু তবুও কেমন যেন অতৃপ্তি থেকে গেলো...কারন মনের কথাটা তখনও বলা হয়নি।এরপরের ঘটনা যে এতো নাটকীয় হবে সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।২০১১ সালের ভ্যালেন্টাইন ডের দিন আমরা ভার্সিটির সিঁড়িতে বসে মোবাইলে বান্ধবীদের বয়ফ্রেন্ডের ছবি দেখছিলাম।সামনে দিয়ে ও যাচ্ছিল।আমাদের গ্রুপের ঠোঁটকাটা স্বভাবের রাতুল ওকে বলে বসলো...ভাই আপনের গার্লফ্রেন্ডের ছবি দেখান?সে এমন একটা মুচকি হাসি দিলো যেন তার সত্যি সত্যি গার্লফ্রেন্ড আছে।আমার পুরো শরীর যেন ব্যথায় মুচড়ে উঠলো।হয়তো এজন্যই মুখ ফসকে বলে বসলাম...আপনার গার্লফ্রেন্ডের ছবি দেখান।ও দিব্বি রাজি হওয়াতে আমি যেন তীব্র যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম।আমাকে সবার সামনেই বলল...আমার গার্লফ্রেন্ডকে দেখতে চাইলে সামনে ওই বেসিনটায় ভাল করে মুখটা ধুয়ে,খুব মনোযোগ দিয়ে বেসিনটার আয়নার দিকে তাকাও তাহলেই আমার গার্লফ্রেন্ড দেখতে পাবে...বলেই হনহন করে চলে গেলো।আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না যতক্ষণ না পর্যন্ত সবাই হো হো করে সবাই হেসে উঠল।সবাই সেটাকে ফান হিসেবে নিলেও আমি আমার উত্তর ঠিকই পেয়ে গিয়েছিলাম।
মানুষটাকে আমি অনেক ভালবাসি ঠিকই।কিন্তু মানুষটা আমাকে নতুন করে ভালবাসতে শেখাল।দেখলে দুনিয়ার সবকিছু সমন্ধে উদাসীন মনে হলেও মানুষটা অন্যের সুক্ষ অনুভূতি গুলোকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়।একদিন আমাকে নিয়ে সোহরাওয়ারদি উদ্যানে ঘুরতে নিয়ে গেল।আমাকে হাওয়াই মিঠাই আর চটপটি খাইয়ে আমার সেই২ বছর আগের স্বপ্নের কথা মনে করে করিয়ে দিল।আমি পুরোই চমকে গেলাম।২ বছর আগে আমার বকবকের মাঝে কথাচ্ছলে বলা স্বপ্নটা সে ঠিকই মনে রেখেছে।একদিন ওকে খুঁজতে গিয়ে ওর মেসে হাজির হলাম।ওকে না পেয়ে ওর ফ্ল্যাটে কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম।রোবটটার টেবিলের উপর রাখা ওর কবিতার খাতাটা দেখে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না।মানুষটা আমাকে নিয়ে এতগুলো কবিতা লিখেছে,অথচ আমাকে একটি বারের মতো বলেনি।
মাঝে মাঝে ভাবি,কে বলবে এই রোবটটার ভিতর এতো ভালবাসা,এতো রোমান্টিকতা লুকিয়ে আছে।তাকে আমি বললাম ৩ দিনের মধ্যে সিগারেট ছাড়তে।আমার কথামতো তাই করলো।কিন্তু এতদিনের অভ্যাস ছাড়তে বোধহয় তার খুব কষ্ট হচ্ছিল।তখন তার কষ্টে মলিন মুখটা দেখে সত্যিই আমার মায়া হচ্ছিল।মনে হচ্ছিল আবার তাকে সিগারেট খেতে বলি।মামাতো বোনের বিয়েতে অংশ নেবার জন্য ১ মাসের জন্য ইউএসএ যাবার সময় ওকে ছেড়ে যেতে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল।এয়ারপোর্টে ওর কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় কিছুই বললো না।ভাবলাম হয়তো খুব বেশি মন খারাপ দেখেই কিছু বলেনি।একটু ফ্রেশ হবার জন্য ওয়াশ রুমে গিয়ে দেখি রোবটটা বেসিনের আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে।আর তার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরেই যাচ্ছে।পৃথিবীর কোন প্রেমিকার বোধহয় সাধ্য নেই তখন নিজেকে ধরে রাখার।আমিও তার ব্যতিক্রম নই।দৌড়ে গিয়ে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম,চোখের গরম অশ্রুগুলো ভিজিয়ে দিলাম আমার রোবটের বুকটাকে।বেসিনের আয়নায় তখন ভেসে উঠেছে দুজন প্রেমিক-প্রেমিকার নিস্পাপ ভালবাসার অভুতপূর্ব ভালবাসার ছবিটা।আয়নার কাজ হচ্ছে প্রতিবিম্ব তৈরি করা।কিন্তু হলফ করে বলতে পারি পৃথিবীর কোন আয়না সেদিনের আয়নার মতো এতো পবিত্র দৃশ্য ধারন করতে পারেনি।এখন শুধু আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা যেন এই প্রতিবিম্বের মতো রোবটটাকে আঁকড়ে ধরে সারাটাজীবন চলতে পারি।
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন