ফেনীর থেকে ঢাকা অথবা চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য একটাই ভাল মাধ্যম রয়েছে সেটা হচ্ছে স্টার লাইন। সত্যি বলতে স্টার লাইনের সার্ভিস ও অতুলনীয়। আমি অনেক গাড়িতেই ভ্রমন করেছি, দেখেছি অনেক ধরনের অনিয়ম। হানিফ, শ্যামলীর গাড়ী দেখেছি সিট ফাঁকা থাকলে বিভিন্ন জায়গা থেকে যাত্রী উঠিয়ে নেয়। কিন্তু স্টার লাইনের ক্ষেত্রে কখনো সেটা দেখিনি। অন্যান্য গাড়ীর গাইডদের আচরন আর স্টার লাইনের গাইডের আচরনের মধ্যে দেখা যেত আকাশ পাতাল তফাত। কিন্তু গত ১৫-২০ দিনের কয়েকটি ঘটনায় খুবই মর্মাহত হয়েছি। নিচে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরলাম-
ঘটনা- ১ :
তারিখ: ০৯-০৪-২০১৪ বিকাল
গাড়ী নং- ১৪৪৩
গাইড ছিলেন: দেলোয়ার
যাত্রা: ফেনী থেকে চট্টগ্রাম।
আমার মা (আনুমানিক বয়স ৬৫ বৎসরের উদ্ধে, গ্রামে থাকেন চট্টগ্রাম শহরের কিছুেই তিনি চেনেন না) এবং বড় ভাই যিনি শীতলপুর, চট্টগ্রামে (বার আওলিয়া) চাকুরী করেন, তারা এক সঙ্গে চট্টগ্রাম রওয়ানা হয়েছিলেন। মা বড়পোল আসবেন আর বড় ভাইয়া শীতলপুরে নেমে যাবেন। রাত আনুমানিক সাড়ে সাতটার দিকে বড় ভাই গাইড কে বলে দিলেন মা’কে বড়পোল নামিয়ে দিতে এই বলে তিনি শীতলপুর নেমে গেলেন, আর আমি বড়পোল কাউন্টারে গিয়ে মা’কে রিসিভ করার জন্য অপেক্ষা করছি। রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকায় গাড়ী আসতে প্রায় ৮:৩০ বেজে যায়। আমি বড়পোল কাউন্টারেই বসে থাকি। হঠ্যাৎ মা আমাকে ফোনে জানান তাকে বড়পোল নামিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম এক্সেস রোডের মাথায় নামিয়ে দিয়েছে কিনা, আমি তাড়াতাড়ি কাউন্টার থেকে বেড়িয়ে এক্সেস রোড পর্যন্ত আসলাম। কিন্তু আমি সেখানে কোন স্টার লাইনের কোন গাড়িই দেখতে পাইনি। তখনই আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল, ফোন করে জানতে চাইলাম কোথায় আছেন তিনি, মা কিছুই নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। কারন তিনি কিছুই চেনেন না। আমি অনেকটা রাস্তা হাটাহাটি করি কিন্তু কিছুই খুজে পাচ্ছিলাম না, মা শুধু এইটুকুই বলতে পারছিলেন- তিনি একটা হালিম দোকানের পাশে আছেন। আমার মাথায় কিছুই কাজ করছিল না, তখন আমি একটু রিস্ক নিয়েই মা কে বললাম ওই হালিম দোকানদারকে মোবাইলটা দিতে। তখন সেই হালিম দোকানদার আমাকে জানাল ওইটা নয়া বাজার বিশ্বরোড। আমি তখন হতভম্ব হয়ে গেলাম। তখন মা’কে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ঘটনা কি হয়েছিল, মা জানান সুপারভাইজার মা’কে বলেছে- ‘বড়পোল চইলা আইছে, আন্নে চুপ কির বই রইছেন কিল্লাই নাইম্বেন এনা’ । কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না, ওই কুত্তার বাচ্ছা কেন এই কাজটা করল? আমি তৎক্ষনাত মা’কে এই দোকানের সামনে দাড়াতে বলে একটা রিক্সা নিয়ে নয়াবাজার বিশ্বরোড রওয়ানা হই। সেখানে গিয়ে আন্দাজে খোজাখুজি করে সৌভাগ্যক্রমে মা’কে পাই, দেখি মা প্রায় কান্না করছিলেন। আমি সাথে সাথে একটা রিক্সা নিয়ে বড়পোল কাউন্টারে রওয়ানা হই এবং স্টার লাইনের ২৪ ঘন্টা তথ্য অনুসন্ধান কেন্দ্রের নম্বরে (০১৯৭৩২৫৯৯০৪) ফোন দিয়ে অভিযোগ জানাই। কিন্তু সেইখানের ফোন রিসিভ করা মানুষটির ব্যবহার ছিল আরো খারাপ। সে আমাকে বলে আপনি এইখানে ফোন দিছেন কেন? এইটা ফেনীর নম্বর আপনি চট্টগ্রামে যোগাযোগ করেন। আরে ভাই ফেনী-চট্টগ্রাম কি স্টার লাইনের একই ডিপার্টমেন্ট এর না। তখন আমি সরাসরি বড়পোল কাউন্টারে যাই এবং কাউন্টারের তত্তাবধানে থাকা লোকটিকে জিজ্ঞাসা করি ১৪৪৩ গাড়ি বড়পোল এসেছে কিনা, তিনি আমাকে জানান এসেছিল। তখন তাকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম আমাকে তিনি এইখানে বসা অবস্থায় দেখেছিলেন কিনা, তিনি জানান দেখেছেন। তখন তাকে পুরো ঘটনা খুলে বলি। তখন তিনি আমাকে গাইডের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। গাইডের নম্বরে (০১৬৮৭৮৪৯৯১৯) ফোন দিলে সে রিসিভ করেনি। পরে স্টার লাইনের অলংকার অনুসন্ধান নম্বর (০১৯৭৩২৫৯৬২০) এবং ফেনী অনুসন্ধান নম্বর (০১৯৭৩২৫৯৬১৮) তে অভিযোগ জানাই। পরবর্তীতে ০১৯৭৩২৫৯৬১৮ নম্বর থেকে আমাকে ফোন করে জানানো হয়, ওই সুপারভাইজার নাকি জানিয়েছেন- আমার আম্মা নিজেই ওইখানে নেমে যেতে চেয়েছেন। আরে ভাই আমার মা তো বড়পোল আর লালপোল কোনটাই চিনে না, আমার মা বলবে কি করে? তাছাড়া ওই সুপারভাইজারকে তো আগেই বলে দেয়া হয়েছিল তাকে বড়পোল নামিয়ে দেয়ার জন্যে। আপনারা কেন এইটা তদন্ত করে দেখছেন না যে, ওই সুপারভাইজার কোন ছিনতাকারী বা সন্ত্রসী গ্রুপের সাথে জড়িত আছে কিনা, না হলে কেন এমন উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এই রাতের বেলায় একটা বয়ষ্ক মহিলাকে একটা ব্যস্ত রাস্তার মাঝখানে নামিয়ে দিল?
ঘটনা- ২ :
তারিখ: ২০-০৪-২০১৪ রাত: ৮:০০টা
স্থান: স্টার লাইন মহিপাল কাউন্টার
যাত্রা: ফেনী থেকে চট্টগ্রাম।
কাউন্টারে রানিং গাড়ির টিকেট এর জন্য গেলাম। কাউন্টার থেকে আমাকে সিট নম্বর ছাড়া টিকেট দেয়া হলো। জিজ্ঞাসা করাতে বলা হলো- গাড়ীতে ম্যানজার আছে তিনি সিট দিয়ে দিবেন। আমি বললাম যদি পেছনের সিট দেয় তাহলে যাবনা দরকার হয় পরের গাড়িতে দিন, তখন তিনি বললেন সমস্যা নেই সিট পছ্ন্দ না হলে পরের গাড়িতে দিয়ে দেব। তখন আমি গাড়িতে উঠে ম্যানেজার আর সুপারভাইজারকে বললাম সিট কোনটা খালি আছে সুপারভাইজার বলল একদম পেছনে। আমি নেমে যেতে লাগলাম পাশ থেকে ম্যানেজার খুবই উত্তেজিতভাবে বলল টিকেটে সিট লেখা আছে ওইটা দেখতে পারতেছেন না? আমি বললাম- আরে ভাই টিকেটে সিট লেখা থাকলে কি আর আপনারে জিজ্ঞাসা করতাম? ভাইয়ে ভাবছে ১ থেকে ৪০ পর্যন্ত লেখাপড়া খালি তিনি একলাই শিখছেন। আপনাদের কাউন্টার থেকেইতো বলে দেয়া হয়েছে আপনি সিট নির্ধারন করে দিবেন। তখন সে আরো উত্তেজিত হয়ে বলে- সিট কি আমি দিব নাকি? এখন আমার কথা হচ্ছে ওই মহামান্য ম্যানেজার মহোদয়ের সাথে তো আমার এর আগে কোন আইল ঠেলা ঠেলি আছিল না, তাহলে ওই জনাবে অযথা আমার সাথে এমন আচরন করবে কেন? ও ব্যাট্যা বোধহয় ভুলে গেছে ওনি স্টার লাইনে চাকুরি করেন, স্টার লাইনের মালিক না। ওনার কাম যাত্রী গুইনা গুইনা গাড়িতে ওঠানো, মাঝে মাঝে গাড়ি থাপরানো। একটা কথা মনে রাখতে হবে আমাদের দেয়া ভাড়ার টাকায় আপনাদের বেতন হয়, যদি গাড়ীর হেলপার হইয়া নিজেরে গাড়ির মালিক ভাইবা বসে তাইলে কেমন লাগে বলেন? কাউন্টারে জানানো হলে কাউন্টারের উপস্থিত কর্তৃপক্ষের লোকজন বলেন, ভাই রাগ কইরেন না সারাদিন ডিউটি করতে করতে মাথা গরম। আরে ভাই সারাদিন ডিউটি করলে কি যার তার লগে মেজাজ দেখাবে নাকি? আর সারাদিন আমরা কি কোন কাজ করি নাই? আমি সকাল ৯ টা থেকে ২টা পর্যন্ত অফিস করছি, বিকাল ৩:৩০ এর সময় চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পৌছাইছি সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায়, সেখান থেকে ৮টার সময় আবার চট্টগ্রাম রওয়ানা হচ্ছি। তাইলে আমার মাথা কেমন কাজ করা উচিত? পরবর্তীতে ৮:১৫ এর গাড়িতে আসলাম। তবে ওনাদের দু’জনের বক্তব্য পরস্পর বিরোধী ছিল। বেচারা গোলগাল চেহারার চুলে জেল মারা স্মার্ট পুলা আছিল, সারাদিন এত কাম করছে তাও চুল কাইত হয় নাই। ৮:১৫ এর গাড়ীটা ভালোই ছিল, এক্কেরে টিভিওয়ালা নাইট কোচের একটা গাড়ি। টিকেটটা বাসায় থাকায় বাস নম্বরটা মনে করতে পারছি না। কিন্তু সেই গাড়িতেও রাত আনুমানিক ১০:৪৫মি এর সময় অলংকার মোড়ে পৌছানোর পর ঘরে নতুন বিপত্তি। সব যাত্রী অলংকারে নেমে যায় আমি একজন ছাড়া। তখন ওই গাড়ীর স্টাফদের মতি পাল্টাই যায়, তারা বড়পোল আসতে অপারগতা জানায়। আমাকে বলে ভাই আপনি এক জনের জন্য বড়পোল যাব নাকি? আপনি একটা বাসে করে বড়পোল চলে যান, ৫টাকা লাগবে... ব্লা... ব্লা... শেষে সেই গাড়ীর ড্রাইভার মহোদয় তার সুপারভাইজার সাহেবকে বলে আমাকে ১০ টাকা দিয়ে দিতে। আমি সেই ১০ টাকা তাদের দিয়ে চলে আসলাম। তখন তারা হোটেল আলিফ মোড়ে এ আমাকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ী ঘুরিয়ে নেয়। এখন আমার কথা হচ্ছে যাত্রী ১ জন থাক আর ৪০ জন থাক আমি যতদুর জানি ফেনী থেকে চট্টগ্রাম আসা স্টার লাইনের সকল গাড়ীকেই যাত্রী না থাকলেও বড়পোল রিপোর্ট করে যেতে হয় তাহলে এই ক্ষেত্রে কি হয়েছে? এই রাতের বেলায় লোকাল গাড়ী পাওয়াও কষ্টকর। শেষ পর্যন্ত রাইডারে করে বড়পোল আসতে হয়েছে। ৫/৭ মিনিট এর রাস্তা ৪০ মিনিটে আসলাম। আনুমানিক ১২টার দিকে বাসায় পৌছেছি।
হয়তো এই ঘটনাগুলোতে আল্লাহর রহমত থাকাতে হয়তো আমরা কোন বিপদে পরিনি। যদি সেদিন সেই হালিমওয়ালা সাহায্য না করতো হয়তো আমার মা’কে খুজে পেতে অনেক কষ্ট হতো। স্টার লাইন তাদের আজকের এই অবস্থানে পৌছেছে শুধুমাত্র তাদের সেবার মান ভাল থাকাতে। কিন্তু যদি এমন পরিস্থিতি দিন দিন এভাবে বাড়তে থাকে তবে উপর থেকে নিচে পড়তে বেশী সময় লাগবে না। মাস খানেক আগে নোয়াখালী “আল্লার দান” নামক একটি গাড়ীর স্টাফরা স্টার লাইনের হেলপার কে মেরেছিল লেমুয়ার কাছাকাছি যায়গায়। সেদিন আমরা দু’একজন মানুষ সেই হেলপারের পাশে দাড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন আমার নিজেরই তাদের প্রতি একটা ঘৃনা জন্মে যাচ্ছে। তাই স্টার লাইন কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ, যদি সম্ভব হয় আপনাদের স্টাফ নিয়োগ দেয়ার সময় সঠিক ভাবে তার খোজ খবর নিয়ে নিন। তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে নিয়োগ দিন। এলাকার পাতি নেতাদের নিয়োগ দিলে এর চেয়ে বেশী ভালো ব্যবহার আশা করা ঠিক হবে না। আর যে ঘটনাগুলি ঘটেছে তা সঠিক ভাবে তদন্ত করুন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় আকাশ থেকে মাটিতে নেমে আসতে বেশী সময় লাগবে না।
(ছবিটি প্রতীকি)
ঐতিহ্য হারাচ্ছে ফেনীর সবচেয়ে জনপ্রিয় বাস সার্ভিস ’স্টার লাইন’
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন