পূর্ব প্রকাশের পর......... (৪র্থ ও শেষ পর্ব)
আমি ছেলে দু’টোকে দেখলাম কেমন জানি একটা হাম্বরী ভাব।
তাই রশিদকে জিজ্ঞেস করলাম, রশিদ! এরাই তাহলে আমার রান্না করতে নিষেধ করেছিল তোমাকে?
রশিদ তো আমায় মিথ্যে বলতে পারবে না। সে বললো, জ্বি স্যার, এরাই নিষেধ করেছিল। কিন্তু এখন এরা আপনার কাছে খুবই লজ্জিত। আমাকে আজ বলছে আবার আপনাকে পাক করে দিতে।
বললাম, তাতো হাবেই, এখন ত রেশন কার্ডের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে কিনা। ছেলে দুটোর দিকে লক্ষ্য করে বললাম, আমি নোয়াখালীর লোক নই বলে তোমরা রশিদকে আমার পাক করতে নিষেধ করেছ আর ওর হাড়গোড় ভেঙ্গে দিবে বলেও ভয় দেখিয়েছ। নোয়াখালীর মানুষ স্বার্থপর আর হিংসুটে তা আগেই জানতাম এখন দেখলাম স্বচক্ষে, সাবাস!
আমার কথা শুনে একটি ছেলে বলল, স্যার আঁয়ে আর শরম দিয়েন নো। আঁরে মাফ করি দেন।
আমি বললাম, মাফও করতে হবে না আর রশিদকেও আমার পাক করে দিতে হবে না। তোমাদের দরখাস্ত রেখে যাও। আগামীকাল রেশন কার্ড নিয়ে যেয়ো।
ঠিক একই রকম আরও একটি ঘটনা বলছি। একদিন অফিসে বসে কাজ করছিলাম। এমন সময় একজন জাদরেল কন্ট্রাক্টার নিজ স্বার্থের ব্যাপারে কেরানী সাহেবদের সাথে আলাপ করছিলেন। একজন কেরানী চা খাবার আবদার করলেন কন্ট্রাক্টার সাহেবের কাছে। কন্ট্রাক্টার সাহেব চায়ের অর্ডার দিলেন।
প্রচুর বিস্কুট, সাগরকলা ও চা আসল। তারা এগুলো বেশ স্ফুর্তির সাথে খেলেন। তাদের পাশে আমিও বসেছিলাম। কিন্তু যেহেতু আমি নোয়াখালীর বাসিন্দা নই সেহেতু তারা আমাকে বাদ দিয়েই চা পর্ব শেষ করলেন। আমাকে কিছু খেতে দেওয়া হল না।
এতে আমি যেন অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলাম। ওরা খাচ্ছে আর আমি বসে দেখব এ কেমন কথা। উঠে গেলেও তো লজ্জার ব্যাপার। তাই আমি আমার পিয়নকে ডেকে এনে বললাম চা, কলা ও বিস্কুট আনতে। সে দোকান থেকে এসব নিয়ে এসে টেবিলের উপর রেখে দিল। আমার সম্মতি ছাড়াই ওরা আমার জন্য কিছু রেখে সবগুলো কড়াকাড়ি করে খেয়ে ফেলল। একটুও লজ্জাবোধ করল না।
তবুও তাদের সাধ মিটল না। একজন কেরানী আমাকে বলল, হেডিও ইন্সপেক্টর! আরও হাশটা টিয়া দেন। আরও কেলা আর বিস্কুট আনবার লাই।
আমি বললাম, কন্ট্রাক্টার সাহেব খাওয়ালেন, এরপর আমার জন্য যা আনা হয়েছিল তাও খেয়ে ফেললেন। এখন আবার টাকা আর পাঁচটা। আপনাদের লজ্জা করা উচিত।
কিন্তু নাছোড়বান্দারা মানল না, একরকম জোরকরেই আমার কাছ থেকে আরও পাঁচটি টাকা আদায় করে নিয়ে কলা বিস্কুট পান সিগারেট আনিয়ে ধুমছে খেয়ে ফেলল। আমি শুধু চেয়ে দেখলাম। বুঝতে পারলাম নোয়াখালীর মানুষ খারাপ নয়, স্বভাবটাই এইরকম। এটা তারা স্বাভাবিক মনে করে, লজ্জার কোন কারণ নেই।
তথ্যসূত্রঃ জীবন চয়নিকা।
লেখকঃ আলহাজ্ব মোঃ নুরুদ্দিন ভূঁইয়া
সম্পর্কে আমার নানা (প্রয়াত)
কাহিনী কালঃ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়