প্রত্যেক ছাত্রের কিছু না কিছু গুণ থাকে। সেই গুণের কারণেই সে একদিন সুখ্যাতি অর্জন করে। বিদ্যাগঞ্জ সরকারী হাই স্কুলের নবম শ্রেণীর এমন এক ছাত্রের কথাই আমি লিখছি। সে কিভাবে সুখ্যাতি অর্জন করলো সে কি ভাল ছাত্র, ভাল কবিতা লেখে, ভাল ফুটবল খেলে, নাকি ভাল বিতর্ক বা গান করে? না, এ সবের কোন কিছুই নয়। তার যত সুখ্যাতি তা তার উপস্থিত বুদ্ধির কারণেই স্কুলের মাস্টাররা তাকে পছন্দ করে তার হাস্যকর উত্তর দেওয়ার জন্যই। কী রকম হাস্যকর উত্তর তা এবার দেখা যাক।
সামনে পরীক্ষা। সবাই যখন পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করছে তখন সেই ছাত্রটি কোন বইয়ের কত নাম্বার পৃষ্ঠায় কোন প্রশ্নের উত্তর আছে তা মুখস্থ করছে। পরীক্ষার দিন পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১৫ মিনিট পরেই তার পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো। কেনই বা হবে না? তার প্রশ্নের উত্তরগুলো ছিলো এ রকম
১নং প্রশ্নের উত্তর (ক)
বাংলা মূল বইয়ের ১১৪ নম্বর পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় অংশে দ্রষ্টব্য।
৩নং প্রশ্নের উত্তর (খ)
পাঞ্জেরী বাংলা নোট বইয়ের ১১১ নম্বর পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য।
এ রকম ভাবে প্রশ্নের উত্তর লিখলে কারই বা ১৫ মিনিট এর বেশি সময় লাগতে পারে বলুন তো। বিশেষ দ্রষ্টব্য হিসেবে খাতার পিছনে লিখলো ‘স্যার লিখতে গেলে আমার কষ্ট, দেখতে গেলে আপনার কষ্ট। কারণ আমার লেখা মাঝে মধ্যে আমি নিজেই বুঝতে পারিনা। মধ্যে কিছু সময় নষ্ট। যেহেতু জীবনের থেকে সময়ের মূল্য অনেক বেশি তাই উপরের পদ্ধতি ব্যবহার করলাম। নিশ্চয়ই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ।
এ রকম খাতা দেখে স্যার হাসবেন না কাঁদবেন কিছুই বুঝতে পারলেন না। ইংরেজী পরীক্ষায় ট্রান্সলেশন এসেছে “ডাক্তার আসিবার পূর্বেই রোগীটি মারা গেল”। এক কথায় প্রকাশের মতো খুব সুন্দরভাবে সে আরবিতে লিখলো “ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন।” যদি রোগীটি মারা না গিয়ে সুস্থ হয়ে যেত তাহলে মনে হয় লিখতো “আলহামদুলিল্লাহ্”
অঙ্ক পরীক্ষার দিন প্রশ্নে একটি অঙ্ক আসল এ রকম। একটি গরু ৩ মিটার লম্বা দড়ি দিয়ে মাঠের মধ্যে বাঁধা আছে। যদি গরুটি বাঁধা অবস্থায় ঘুরে ঘুরে মাঠের ঘাস খায় তাহলে যে বৃত্ত উৎপন্ন হবে তার পরিধি কত?
ছাত্রের উত্তর ঃ স্যার প্রথমে আমাদের জানতে হবে গরুটি কীসের দড়ি দিয়ে বাঁধা আছে। পাটের দড়ি না প্লাস্টিকের দড়ি। যদি প্লাস্টিকের হয় তাহলে দড়িটি টান দিলে লম্বা হবে এবং গরুটির গাস খাওয়ার এলাকা বৃদ্ধি পাবে। এরপর জানতে হবে গরুটি দেশি জাতের গরু নাকি শাহীওয়াল জাতের গরু। যদি শাহীওয়াল জাতের গরু হয় তবে সে ক্ষেত্রে ঘাস খাওয়ার এলাকা বৃদ্ধি পাবে কারণ শাহীওয়াল জাতের গরুর গলা দেশি জাতের গরুর চেয়ে লম্বা হয়। এরপর আমাদের জানতে হবে গরুটির ঘাস খাওয়ার ইচ্ছ আছে কি নেই? যেহেতু এ সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়া নেই তাই অংকটি করতে পারলাম না। আপনাদের কী ধারণা? এই প্রশ্নের উত্তরগুলো দেয়া না থাকলে আপনারা কি করতে পারতেন?
বাংলা যার কাছে হয়ে যায় সংক্ষিপ্ত, ইংরেজী হয়ে যায় আরবি, অংক হয়ে যায় ব্যাখ্যা তার পক্ষে কী না করা সম্ভব। সমাজ বইয়ের ইতিহাস বিষয়ক প্রশ্ন তার কাছে শুধু ইতিহাস নয় যুক্তিমূলক প্রশ্নও বটে। প্রশ্নে এসেছিলো শেরশাহ্ কোন যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন? ছেলেটির উত্তর “শেরশাহ্ তাঁর জীবনের শেষ যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন” উত্তরটি দেখে স্যার পুলকিত হয়েছিলেন। নম্বর না দেয়ার কি কোন কারণ আছে?
এতো গেলো পরীক্ষার খাতার কথা।
এবার শ্রেণী কক্ষে আসা যাক। শ্রেণী কক্ষের সব শেষের বেঞ্চে সে সব সময় বসতো। দেখে মনে হতো সেই বেঞ্চিটি তার নামে রেজিষ্ট্রেশন করা। কবিতা লিখতে পারতো সে। মাঝে মধ্যে নকল করতো বিভিন্ন কবির কবিতা। অবশ্য কিছু লাইনে অমিল থাকতো। যেমন কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতা নকল করে লিখেছিলো-
‘বল বীরÑ
বল উন্নত মম শির
শির নেহারী। তেহারী দিয়া
বানাইয়া খাইব খির।’
আর একদিন স্যারের সামনে নিজের তৈরী একটি কবিতার প্রথম লাইনটি বলেই ধমক খায়। লাইনটি ছিলো-‘কপাল ভাসিয়া যায় নয়নের জলে’
স্যার বললেন এটা আবার কেমন কবিতা। কপাল হল নয়নের উপরে আর তা কিভাবে নয়নের জলে প্লাবিত হয়। ফাজলামো পেয়েছো? ছাত্রটি স্যারকে বলল, স্যার আগে আমার পুরো কবিতাটি শুনন তার পর বলুন। স্যার তাকে কবিতাটি বলার অনুমতি দিলেন। তারপর...
চলবে...