পূর্ব প্রকাশের পর.........।
আমার কথাটি শুনে রশিদ কিছুটা অভিমানের সাথে বলল, কি বলছেন স্যার? আপনি যাবেন কেন আমার ওখানে, আমিই নিয়ে আসব খাবার আপনার এখানে, আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।
এখন আমার খাওয়া-দাওয়ার কোন অসুবিধাই রইল না। রশিদ নাস্তাসহ তিনবেলাই আমাকে খাবার দিয়ে যায়। কয়েকদিন বেশ ভালভাবেই গেল। কিন্তু একদিন আবার আমার ভাগ্যাকাশে কালো মেঘের সঞ্চার হল।
রাতে খাবার নিয়ে রশিদ আসছে না। রাত দশটা বেজে এগারটার দিকে ঘড়ির কাটা চলছে, রশিদের কোন পাত্তা নেই। ভাবলাম ছেলেটার কোন অসুখ করেছে হয়ত। আজ হোটেলেই খেতে হবে। ঘর থেকে বেরিয়ে আমার বারান্দায় দেখতে পেলাম রশিদ দাঁড়িয়ে আছে। আবছা অন্ধকারে দেখলাম সে কাঁদছে। বললাম, কি হয়েছে তোমার, কাঁদছ কেন? বাড়ী থেকে কোন খারাপ খবর আসছে নাকি!
সে কথা বলছে না শুধু চোখ মুছছে। এবার একটু জোর দিয়েই বললাম, কথা বলছ না কেন? বল না তোমার কি হয়েছে, কাঁদছো কেন?
এবার সে নিচের দিকে তাকিয়ে আধো কান্নার সুরে বলল, স্যার আমাকে মাফ করে দেন। আমি আর আপনাকে পাক করে খাওয়াতে পারব না। কারণ আমার সাথে স্থানীয় অর্থাৎ নোয়াখালীরই আরও তিনটি ছেলে কাজ করে। ওরা আমাকে সাবধান করে দিয়েছে এই বলে যে, বিদেশী অর্থাৎ নোয়াখালীর ভাষায়-‘ হেডিও আঁরা তোয়ারে সাবধান কচ্ছি, হরদেশী কোন মানুষকে হাক করি খাওয়াতে হাইত্তে নো। আঁরা কথা না হুনলে তয় হিডি তোয়ারা হাড্ডি ভাংগি দিউম’ হেথি মোমিনসিং তনে ইয়ানে আইছে নবাবী কইরবার লাই।
আমি রশিদকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, দুঃখ করার কি আছে? আমার জন্য তুমি বিপদে পড়তে যাবে কেন? ঠিক আছে আমার জন্য তোমাকে আর পাক করতে হবে না।
আমি পুনঃ মুষিক হয়ে গেলাম। আবার হোটেলে আশ্রয় নিতে হল আমাকে।
রশিদ ছেলেটি তার গরিব পিতার একমাত্র সন্তান। কয়েক দিনের পরিচয়ে সে আমাকে পিতৃতুল্য শ্রদ্ধা করত। ওর প্রতি আমার কেমন জানি মায়া হয়ে গেল।
একদিন সে আমাকে বললো, স্যার দয়া করে আমাকে একটা রেশনকার্ড করে দিলে আমার খুবই উপকার হয়। আমি তার আবদার উপেক্ষা করতে পারলাম না। দুই একদিনের মধ্যেই করে দিলাম ওকে একটি রেশন কার্ড।
এর কয়েকদিন পর রশিদ তার সমবয়সী দুইটি ছেলে নিয়ে রাতের বেলায় আমার কাছে আসল। জিজ্ঞেস করলাম রশিদকে এরা দু’জন কে? কি চায়?
রশিদ বললো , স্যার এরা স্থানীয় লোক। কাছেই ওদের বাড়ী, আমার সাথে কাজ করে। ওরা আপনার কাছে রেশন কার্ডের দরখাস্ত নিয়ে এসেছে। যদি সম্ভব হয় তবে দু’টো কার্ড করে দিলে ওদের খুব উপকার হয়।
আমি ছেলে দু’টোকে দেখলাম কেমন জানি একটা হাম্বরী ভাব।
চলবে.........।(পরের পর্বে বিশেষ আকষণ- সঙ্গে থাকুন )