সাগরে নিুচাপের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে উপকূল এলাকা। ঘরচাপায়, পানিতে ডুবে ও বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
জোয়ারের পানি ঘরে উঠে পড়ায় উপকূল এলাকার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। পানিবন্দি হয়ে আছে চরাঞ্চলের লক্ষ মানুষ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরো উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় মংলার পাশ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করেছে।
এটি এখন বরিশাল-নোয়াখালী এলাকায় স্থল নিম্নচাপ হিসাবে অবস্থান করছে জানিয়ে বুলেটিনে বলা হয়, এটি আরো উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যাবে।
বায়ুচাপের তারতম্যের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া বিভাগ।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ কয়েকটি রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচলও।
বরগুনায় ঘরচাপা পড়ে দুজন এবং পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বাগেরহাটে বজ্রপাতে তিনজন মারা গেছেন। বরিশালে পানিতে ডুবে ও বজ্রপাতে মারা গেছে দুজন। ভোলায় ঘরচাপায় দুজন এবং পানিতে ডুবে মারা গেছে তিনজন।
সাগরে বেশ কয়েকটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে কয়েকশ" জেলে নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ জেলেদের অনেকেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আশ্রয় নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বরগুনায় তিনজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর জেলা প্রতিনিধি।
ঝড়ে ঘরচাপা পড়ে আমতলী উপজেলায় নিহত হয়েছে দুজন। তারা হলেন- শাখারিয়া গ্রামের মিনারা বেগম (৩০) ও উত্তর টিয়াখালী গ্রামের নরেণ (৭)।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন শানু শুক্রবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুজনের মৃত্যু ছাড়াও ঘর ও গাছচাপা পড়ে আহত হয়েছেন ১৫ জন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
আমতলীর বরবগী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কবির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বাইন বুনিয়া এলাকায় এমভি আজমীর নামে একটি ট্রলার ডুবে একজন জেলে মারা গেছেন।
চরকালনী গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় সাফিন (৫)।
বরগুনার উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে বিভিন্ন বেড়িবাঁধ ধসে প্রায় আখ খানেক মানুষ পানিবন্দি বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন।
শুক্রবার রাতে চারটি মাছ ধরা ট্রলার ডুবে যায়। এসব ট্রলারের ২৭ জন জেলের মধ্যে তিনজন নিখোঁজ বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এরা হলেন- এফবি আজমির ট্রলারের আলী আহাম্মদ, এফবি ছকিনার নিজাম উদ্দিন ও আবু হানিফ।
সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া শতাধিক জেলের সন্ধান মিলছিলো না বলে এর আগে ট্রলার মালিক সমিতি জানিয়েছিলো। সে বিষয়ে বরগুনা জেলা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মন্নান মাঝি শুক্রবার দুপুরে বলেন, "ইউসুফ মাঝি নামে একজন তার স্ত্রী বাদুরতলা গ্রামের ফাতিমা বেগমকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছে, বরগুনার ২৭টি ট্রলারের ৩৫৮ জন জেলে ভারতীয় সীমানায় নিরাপদ আশ্রয়ে আছেন।"
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, দুপুরে মোল্লাহাট উপজেলার কাহালু গ্রামে বজ্রপাতে দুই সহোদরসহ মারা গেছে। আহত হয়েছেন তাদের বাবা। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের সুপতি স্টেশন সংলগ্ন ভোলা নদীতে মাছ ধরার সময় মারা যান একজন।
নিহতরা হলেন- কাহালপুর গ্রামের তৈয়ব মোল্লার ছেলে রঞ্জু মোল্লা (১৮) ও ময়র মোল্লা (২৬) এবং শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের কাদের হাওলাদারের ছেলে কাওছার হাওলাদার (৩৫)।
বজ্রপাতে রঞ্জু ও ময়র মোল্লার বাবা তৈয়ব মোল্লা (৬৮) আহত হয়েছেন।
মোল্লাহাট থানার ওসি মাসুদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুপুর ১টার দিকে বৃষ্টির সময় কাহালপুর গ্রামের তৈয়ব মোল্লা ও তার দুই ছেলে রঞ্জু ও ময়র নিজেদের চিংড়ি ঘেরে কাজ করছিলেন।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাস জানান, দুপুর দেড়টার দিকে ভোলা নদীতে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে মারা যান কাওছার।
এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার বিভিন্ন এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। জেলার পাঁচটি উপজেলার অসংখ্য চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাগেরহাট সদর, রামপাল, চিতলমারী, মংলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলায় চিংড়ি ঘেরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সব এলাকায় অন্তত ত্রিশ হাজার চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের ও পুকুর প্লাবিত হয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে জেলায় মাছের ক্ষতি চল্লিশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম জানান, মাদারদিয়া, রাধাবল্লভ ও সাউথখালী এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে জোয়ারের পানি ভেতরে ঢুকে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বাগেরহাট পৌরসভার বিসিক ও সংলগ্ন গোবরদিয়া বিল প্লাবিত হয়ে ষাট ঘর আদর্শ গ্রাম, পুটিমারী, রাধাবল্লভ, কাঠুয়া, গোমতি প্রভৃতি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া ষাটগম্বুজ, খানপুর, রাখালগাছি, ডেমা ও কাড়াপাড়া ইউনিয়নের অসংখ্য মাছের ঘের ভেসে গেছে।
বরিশাল প্রতিনিধি জানান, সকালে বানারীপাড়া উপজেলার মাদারকাঠি গ্রামে হাসেম নামের একটি ব্যক্তির বাড়ির উঠোনে পানিতে ডুবে মারা গেছে তার মেয়ে উর্মি (৪)।
পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. যতীন্দ্র চন্দ্র রায় জানান, অব্যাহত বৃষ্টিতে হাসেমের বাড়ি তলিয়ে যায়। উর্মি সবার অগোচরে উঠোনের পানিতে নেমে ডুবে যায়। পরে ভেসে উঠলে তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। কিন্তু ততক্ষণে তার মৃত্যু হয়েছে।
মুলাদী উপজেলার আলিমাবাদ গ্রামে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বজ্রপাতে শিল্পী বেগম (২৫) নামে এক গৃহবধূ বজ্রপাতে মারা গেছেন। তিনি গ্রামের নান্টু খানের স্ত্রী। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আনসার সদস্য মকফার উদ্দিন জানান, ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে জরুরি কাজে দুই সন্তানের জননী শিল্পী বেগম ঘরের বাইরে বের হন। বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলে মকফার জানান।
চট্টগ্রাম অফিস জানায়, উপকূলীয় উপজেলা আনোয়ারা ও বাঁশখালীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বৃহস্পতিবার রাতে বেশ কয়েকটি গ্রামে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। উপজেলা দুটির দেড় লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
আনোয়ারার রায়পুর, জুইদণ্ডী ও তৈলারদ্বীপ ইউনিয়ন জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু শাহেদ চৌধুরী। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উপজেলার তিনশর মতো ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে এবং শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে।
বাঁশখালীর খানখানাবাদ, ছনুয়া, মৌলভিবাজার, শেখেরখিল, গন্ডামারা, প্রেমাশিয়া এলাকায় সমুদ্রের পানি বেড়িবাঁধ উপচে ভেতরে ঢুকে পড়ে। কয়েকটি স্থানে আগে থেকে বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা থাকায় এসব এলাকা দ্রুত তলিয়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানান।
স্থানীয় সাংবাদিক উজ্জ্বল বিশ্বাস জানান, বাঁশখালীতে শতাধিক চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া আমন ধানেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে জোয়ারের পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থাণীয় বেড়িবাঁধের ১০-১২টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ফেনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীর ১২টি গ্রাম প�াবিত হয়ে ঘরবাড়ি, ফসল ও গবাদি পশুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মাওয়া-কাওড়াকান্দি এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ার খবর দিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি।
শুক্রবার সকালে ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল পদ্মায় ফেরি চলাচল করলেও বেলা ১১টা থেকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর দুপুর পৌনে ২টা থেকে আবার ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে।
তবে পাটুরিয়ায় ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ নাহলেও ফেরি সঙ্কটের কারণে দুই ঘাটে দেখা দিয়েছে যানজট।
পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার ৭টি উপজেলার প্রায় ৫১টি ইউনিয়নই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীর পানি বাড়ায় মঠবাড়িয়া উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে অন্তত ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।
উপজেলার সাপলেজার ইউপি চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জেল হোসাইন জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় ওই ইউনিয়নের কচুবাড়িয়া, খেতাচিরা ও তাফালবাড়িয়ার ৩টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
স্বরূপকাঠী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, উপজেলার গুয়ারেখা, বলদিয়া ও সারেংকাঠীর নিুাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেখানে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, উপজেলার নিুাঞ্চলের পানিবন্দী মানুষজনকে কচুবাড়িয়া, খেতাচিরা, চড়কগাছিয়া ও সাপলেজা সাইক্লোন সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছে।
জেলার অন্তত চারশ' টি চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের থেকে ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে আমন ফসল ও শীতকালীন শাকসবজির ক্ষেত।
জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমীন জানান, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও সার্বিক তদারকি করছেন তিনি।
ভোলা প্রতিনিধি জানান, জোয়ারের পানির চাপে ভোলা শহররক্ষা বাঁধ, দৌলতখান, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে বি�তৃর্ণ এলাকা ৩/৪ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বেড়ি বাঁধের বাইরে ভোলার অন্তত ২০ টি চর ও নিম্ন্াঞ্চল ৩/৪ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে।
লালমোহন পৌর এলাকার চারটি ওয়ার্ড জোয়ারের পানিতে ৪/৫ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। জেলার অন্তত এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলা চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম জানান, চর নলুয়া গ্রামে গাছ ভেঙ্গে ঘরের ওপর পড়লে চাপা পড়ে মারা যান মমতাজ (৪০) নামের এক গৃহবধূ। আহত হয়েছে অন্তত ২৫জন। দক্ষিণ ফ্যাশন গ্রামের মাসুমা খাতুন (৬০) মারা গেছে।
এছাড়া মনপুরা উপজেলার চরযতীনে সজল (৫) নামের এক শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে বলে মনপুরা থানার ওসি হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। দুর্যোগ কবলিতদের জন্য ৫৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ভোলা থেকে কোনো যাত্রীবাহী লঞ্চ ছেড়ে যায়নি।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার অন্তত ১২টি গ্রামে ঝড়ে বেশকিছু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত এবং গাছপালা উপড়ে গেছে। তলিয়ে গেছে ফসলী জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কাঁচাঘর বাড়ি ধ্বসে পড়ে কোম্পানীগঞ্জ নারী ও শিশুসহ ২০জন আহত হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ জানান, স্বাভাবিকের চেয়ে ৭ থেকে ৮ ফুট উচ্চতার জোয়ারের পানিতে উপজেলার নিঝুমদ্বীপ, চরঈশ্বর, বয়ারচর, নলের চর, ক্যারিংচর, নলচিরা ও তমরদ্দি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকার প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জমির আমন ফসল নষ্ট হয়েছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
জোয়ারের তোড়ে হাতিয়ার বিভিন্ন চরের ২০ হাজার গরু মহিষ ও বনের হরিন ভেসে গেছে। মধ্যরাতের জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানান।
টানা বর্ষণে জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়কসহ সবগুলো সড়ক ও আবাসিক এলাকা তলিয়ে গেছে।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া এলাকার আটটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। চরখালী থেকে হাজীখালী পর্যন্ত বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে আরো সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে আছে অন্ত পাঁচ হাজার মানুষ।
প্রায় ৬৫ ফুটের নীচে অভ্যন্তরীন রুটে চলাচলকারী লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দুদিন ধরে বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নৌবন্দর উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।
কৃষি স�প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নিখিল রঞ্জন মণ্ডল জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে ৮ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমির আমন ক্ষেত, ১৫০ হেক্টর জমির সবজি ও ৬৭ হেক্টর জমির পান পানির নিচে তলিয়ে আছে। ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমান নিরূপণের কাজ চলছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নামা পাহাড়ী ঢলে তিতাসসহ সীমান্ত এলাকার নদ-নদীর পানি বেড়ে জেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ৯টি উপজেলার প্রায় ৫শ' হেক্টর রোপা আমন পানিতে তলিয়ে গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কোর্ট রোড, টিএ রোড, কালাইশ্রীপাড়া রোড, মেড্ডা রোডসহ বেশ কয়েকটি এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি স�প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেন জানান, দ্রুত পানি সরে না গেলে জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, মেঘনার জোয়ারে রামগতির উপজেলার চরগজারিয়ার আশ্রায়ন কেন্দ্রসহ ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। রামগতি ও কমলনগরে অর্ধশত কাঁচা বাড়িঘর ধসে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দৌলতুজ্জামান খান জানান, এ এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এছাড়া উপজেলার তেলিরচর, বয়ারচর, বড়খেরী, চরগাজী, চরআলগী, চরআলেকজান্ডার, সেবাগ্রাম, পশ্চিম চরআলেকজান্ডার, কাটাবুনিয়া, কমলনগর উপজেলার চরফলকন, চরসামছুদ্দিন, চরকালকিনি, সদর উপজেলার চরমেঘা ও পশ্চিম চররমনীমোহনের চরে আমনের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, টেকনাফ, কুতুবদিয়া, সদর উপজেলা ও পেকুয়া এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধ। সাগরের জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েকশ' বসতবাড়ি। কক্সবাজার শহরতলীতেই অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শতশত একর চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যরা জানান, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। ওই দ্বীপের পশ্চিমপাড়ায় অন্তত ৪০টি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
সদর উপজেলার ভারুয়াখালী, পোকখালী এলাকায় বেশ কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে চিংড়ি ঘের, ফসলি জমি ও ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বাংলাবাজার, চেইন্দা, মিঠাছড়ি, ঈদগাঁও এলাকার কিছু নিচু এলাকা এবং শহরের পৌর এলাকার ফদনার ডেইল, কুতুবদিয়া পাড়া, নাজিরারটেক, বন্দরপাড়া, সমিতিপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়ন, ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন, সাহারবিল ইউনিয়ন, বমুবিলছড়ি, কোনাখালী ইউনিয়ন, পূর্ব বড়ভেওলা ইউনিয়ন, ভেওলা মানিকচর ইউনিয়ন, সাহারবিল ইউনিয়ন ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
রামু উপজেলার রাজারকুল, কাউয়ারখোপ, গর্জনিয়াসহ অনেক এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং, মো. শফিরবিলসহ উপকূলীয় এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। মহেশখালীর ২০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা এলাকায় প্রায় ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোসতাক আহমদ জানান, সাগরে নিম্নচাপে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকালে উপকূলে ফেরার পথে কক্সবাজার এলাকার ১২টিসহ অন্তত ২৫টি মাছ ধরার ট্রলার সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব ট্রলারে থাকা জেলেদের অধিকাংশই নিখোঁজ রয়েছে।
খুলনা প্রতিনিধি জানান, নগরীর অধিকাংশ রাস্তায় হাটু পানি জমে গেছে। ভেসে গেছে অসংখ্য মৎস্য ঘের ও পুকুর।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. জমসেদ আহাম্মদ খন্দকার বলেন, তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে কয়রা উপজেলার ১২টি ও দাকোপ উপজেলার ৮টি গ্রাম সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়রা সদর ২-৩ ফুট পানির নিচে।
শুক্রবার কয়রা এলাকায় দুর্গতদের মধ্যে ২০ মেট্রিক টন ও দাকোপে ১০ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়েছে। জেলা সদরসহ ৯ উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
স্পিড বোটসহ সব যানবাহন প্রস্তুত ও মেডিকেল টিম সতর্ক রাখা হয়েছে। শুকনো খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান।
উপকূলীয় এলাকার মানুষের দুর্দশা লাঘবে পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়ে আইলা দুর্গত সংহতি মঞ্চ ও উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ গণসংগ্রাম কমিটি।
শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের চরজানপুর গ্রামের ৫ জেলে মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ রয়েছে। জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের আরেক জেলেও নিখোঁজ রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার ছয়টি গ্রামে দুই শতাধিক বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছপালা ও ঘরের নিচে চাপা পড়ে এবং বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছে ২০ জন।
গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল বাশার মুন্সী জানান, নিখোঁজ জেলেরা হলেন চরজানপুর গ্রামের নাছির মোল্লা (৪০), শাহীন (৩৮), মুনসুর (৩০), শাহাজালাল বেপারী (৩২) ও সুমন (৪০)।
জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের আনোয়ার পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ হন।
গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ২টি জেলে নৌকা ডুবে ৬/৭ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে বলে তিনি জেনেছেন।
তথ্যসূত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম Oct 9, 2010