আগামী ১ নভেম্বর থেকে আবার বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু হবে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান এ এস এম আলমগীর কবির গতকাল বৃহস্পতিবার এক কর্মশালায় সাত মাস পর নতুন সংযোগ চালুর ঘোষণা দেন।
রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে পিডিবির উদ্যোগে 'বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন ও গণমাধ্যম' শীর্ষক সাংবাদিকদের এক কর্মশালায় চেয়ারম্যান এ ঘোষণার পাশাপাশি নতুন সংযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতার কথাও জানান। তিনি বলেন, এখন থেকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য নতুন সংযোগ নিতে হলে নূ্যনতম সংখ্যক সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল বসাতে হবে। লোডশেডিংয়ের চাপ কমাতে গত এপ্রিল থেকে সব ধরনের নতুন সংযোগ বন্ধ রয়েছে।
পিডিবি চেয়ারম্যান বলেন, উৎপাদনের সঙ্গে চাহিদা বাড়তে থাকায় জনগণের দুর্ভোগ কিছুটা কমাতে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এত দিন নতুন সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছিল। গত সাত মাসে ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি নতুন বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ায় পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। নতুন গ্রাহকদের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে ১ নভেম্বর থেকে সংযোগ দেওয়া আবার শুরু করা হবে। এ জন্য ২০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াটের আবাসিক গ্রাহকদের মোট চাহিদার ৩ শতাংশ এবং এর ওপরের গ্রাহকদের ৫ শতাংশ সৌর বিদ্যুৎ থেকে উৎপাদনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ৫ কিলোওয়াটের বেশি ব্যবহারকারীদের জন্য এ হার নূ্যনতম ৩ শতাংশ।
কর্মশালায় পিডিবির পরিচালক (প্ল্যানিং ও সিস্টেমস) মিজানুর রহমান বিদ্যুৎ খাতের বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিভিন্ন প্রকল্প এবং পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, বর্তমানে দুই হাজার মেগাওয়াটের বেশি ঘাটতি ছাড়াও ১০ শতাংশ হারে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। এর সঙ্গে তাল মেলাতে আগামী ছয় মাসে ২৭টি নতুন কেন্দ্র স্থাপনে চুক্তি সই করা হবে। এগুলোসহ বিভিন্ন ধরনের ৫০টির বেশি কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা পিডিবির রয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সরকারের ২০২১ সালের মধ্যে সবাইকে বিদ্যুতের আওতায় আনার পরিকল্পনা সফল হবে। এ জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হলেও অর্থায়ন মূল বাধা নয় বলে জানানো হয়। এরই মধ্যে বেসরকারি খাতে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ এসেছে। দেশি-বিদেশি আরো নতুন বিনিয়োগকারী আগ্রহ দেখিয়েছেন। সরকারি পর্যায়েও হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থায়ন করা হয়েছে।
কর্মশালায় ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের পরিবর্তে স্থায়ী কেন্দ্র নির্মাণ, তেলের পরিবর্তে নিজস্ব কয়লার ব্যবহার, বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজার, বন্ড, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের মতো অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ, মাস্টার প্ল্যান অনুসরণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো, ব্যবহার অনুপাতে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়।
কর্মশালার সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সমস্যার সমাধানে এবং এ খাতকে আরো গতিশীল করতে গণমাধ্যমের গঠনমূলক ভূমিকা সরকারের দায়িত্ব পালনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা সরকার মেনে নেবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নের বাধা দূর করতে সম্প্রতি একটি আইন করা হয়েছে। আইনে স্বচ্ছতার সঙ্গে এ খাতের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। দেশে আগে থেকে এ ধরনের অন্তত এক ডজন আইন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রুত সমস্যার সমাধানে এর বিকল্প নেই।
সভাপতির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে এ খাতের উন্নয়নের বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকার মহাপরিকল্পনা অনুসারে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে কোনো ভুল-ভ্রান্তি শুধরে দিতে তিনি গণমাধ্যমের সহায়তা চান।
কর্মশালায় গণমাধ্যমের কর্মীরা ছাড়াও বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
কালের কণ্ঠ ০৮ অক্টোবর ২০১০