তরুন রা তাদের ভাবনায় নিজের সাথে সমগ্রকেও রাখে।
সুশিক্ষিত মানুষ কখনো অন্যের ক্ষতি চিন্তা করেনা। আর আর ...
রিমির ঘ্যাস ঘ্যাস করে মাথা চুলকানো দেখে আমি হাসি আর আটকে রাখতে পারলাম না। ওকে রেহাই দিতেই বললাম,আর আর করছিস কেন? বল বলে ফেল। আর আমার সময় নষ্ট করিস না বুঝলি?
মুখ টিপে বললাম বলতে না পারলে আমার কবিতা শোন!
সামনের ছোট করে কাটা চুল গুলো এক ঝাকিতে পেছনে পাঠিয়ে রিমি মিষ্টি করে হাসলো। তারপর চোখ ছোট ছোট করে বলল, তা তো বলবাই, আমি কিছু বলতে গেলে তোমার সময় নষ্ট হয় , আর তোমার ছাতার কবিতা যে দিন রাত আমাকে শোনাও!
এই রাক্ষসনীর মত মুখ করবিনা বলে দিচ্ছি।
রিমি এগিয়ে এসে বুকের কাছে ছোট্ট একটা বেড়াল ছানার মত গুটলি পাকিয়ে শুয়ে বলল, হু বল কবিতাটা। শুনি এবার কি লিখেছিস!
''কখনো কখনো আমি থাকিনা,
আমার না থাকা গুলো তবু
তোমার সাথেই থাকে প্রতিদিন!''
এই থাম থাম না থাকাগুলো কিভাবে তার সাথে থাকে? এসব কি লিখিস! বলেই ঠোঁট বাকিয়ে একটা ভেংচি কাটলো রিমি।
রিমির দিকে ঘোর লাগা চোখে তাকাতেই সে বলল, আচ্ছা আচ্ছা তারপর?
''না থাকাগুলো ঝুর ঝুর করে ভাংতে থাকে
পোকায় খাওয়া পান্ডুলিপির মত!
তোমার শেভিং কিটের ফেনায় আমার না থাকাগুলো,
না থাকা গুলো চিরুনীর ফাঁকে
আয়নার ওপার থেকে তাকিয়ে থাকে।
যদিও তুমি কদাচিৎ ওমুখো হও।
ব্রাশের ফেনায় মুহুর্মুহু চমকানো তারা,
তুমি জানো সেসব আমার না থাকাগুলো।''
কি রে কোথায় হারালি?
আচমকা আমার কথায় সম্বিত ফিরে পায় রিমি। বলে, কি শেষ?
উহু, এখনো শেষ হয়নি। তুই ঠিকমত শুনছিস কিনা তাই ডাক দিলাম। হি হি
হাসবিনা খবরদার। তারপর বল। আমি অনেক মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম।
''দীর্ঘ পরিশ্রমের শেষে
যখন তুমি বড় বড় শ্বাস নিতে থাকো,
ভুলেও ভেবনা আমার না থাকা গুলো তোমাকে ছেড়ে গেছে।
একটা দিনের প্রতিটি সময়
না থাকা গুলো তোমার সাথেই ছিল, আছে!''
আমার মুখে হাত চাপা দিয়ে থামিয়ে দেয় রিমি। তুই কিভাবে এমন লিখেছিস? যেখানে কাছে থাকার মুল্য থাকেনা সেখানে না থাকাগুলো এত গুরুত্বপূর্ণ কি করে হয়?
করুন মুখ করে আমি বলি আমাকে শেষ করতে দে রিমি!
গম্ভির হয়ে সে বলে ওক্কে বল।
''তোমার একলা থালার হাত ধোয়া জলে
আমার না থাকা গুলো বড় বিষন্ন!
জুতোর ভেতর পা ঢোকাতে গিয়ে
তোমার আনমনা হওয়া,
সেল ফোনটা বেজে ওঠার বিরক্তিতে
তোমার কুঁচকে ওঠা ভুরু!
তোমার গায়ের ঘামে আমার না থাকাগুলো জমতে থাকে।
থাকেই!
প্রতিদিন তো এসব না থাকা নিয়েই তুমি ঘুমুতে যাও।''
শ্বাস ভেতরে টেনে যখন খাতাটা বন্ধ করে দিলাম, রিমি আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ও এখন কাঁদবে। একটু আগে খিল খিল করে হেসে গড়িয়ে পড়া মেয়েটি কান্না চেপে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করছে। আমার খারাপ লাগতে থাকে। এ অনুভূতিটা ওর। আমি কেন তার অনুভূতিকে এভাবে সামনে নিয়ে এলাম! কেন তাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলাম তার না থাকাগুলো !
নরম চুলে থুতনি চেপে তাকে জড়িয়ে আছি। সে কাঁদতে থাকবে এখন। আমি জানি আমি তাকে থামাবোনা।
অ:ট: আমার একটা বড় আপু আছে আর একটা ছোট আপু আছে। দুটাই খারাপ। খুব খারাপ। শয়তানের একশেষ। বদের বদ। আমাকে কম ভালবাসে আর বাইরের মানুষদের বেশি ভালবাসে। রিমঝিম আপু আর অসবা র জন্য এই লেখাটা।